বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের আবাস উপকূলীয় অঞ্চলে। নদী মাতৃকার কারণে অনেক অংশেই তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব থেকে পিছিয়ে। দক্ষিণাঞ্চলের অবহেলিত জনপদের মাঝে যে বিপুল ও অমিত সম্ভাবনা লুকায়িত আছে, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গরে তোলার লক্ষ্যে ২০০৬ সালের ২২ জুন প্রতিষ্ঠা করা হয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
নোয়াখালীর মূল শহর মাইজদি থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সবুজে ঘেরা ১০১ একর জায়গাজুড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ক্যাম্পাসজুড়ে সবুজের সমারহ মনে করিয়ে দেয়, যেন শ্যামল বাংলার শ্যামলতম অংশ এটি। তাছাড়া ক্যাম্পসের বিশাল পুকুর ও লেক আকৃতির জলাশয় যে কারো মন ভালো করে দিতে যথেষ্ট।
৪টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক, ১৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, যাত্রার একাদশে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ১৪টি বিভাগ, ৩টি অনুষদ, ২টি ইনস্টিটিউট, ১৬২ জন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত শিক্ষক ও চার সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী। আগামী শিক্ষাবর্ষে আরও চারটি বিভাগের শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় আছে।
ক্যাম্পাসজুড়ে বেশ কয়েকটি স্থাপনা মধ্যে প্রবেশ মুখেই বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ, প্রশাসনিক ভবনের সামনে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ভাস্কর্য, ফাউন্টেনপেন আকৃতির শহীদ মিনার, উপাচার্যের ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়াম উল্লেখযোগ্য।
প্রতিষ্ঠার একাদশে এসে প্রাপ্তি ও ঘটতি হিসাব করলে অনেক অংশেই প্রাপ্তির ঝুলিটাই বেশি ভারি। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের ফলে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে এক ঝাঁক তরুণ মেধাবী মানবসম্পদ। তারই অংশ হিসেবে ভালো ফলাফলের স্বীকৃতি সরূপ এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী-পদক পেয়েছে ৪জন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করছে প্রায়ই। এর মধ্যে ‘ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ুড়ঁহম গরপৎড়নরড়ষড়মরংঃ ঈড়সঢ়বঃরঃরড়হ -২০১৫’-এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সামান তালে বিচরণ আছে শিক্ষার্থীদের। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে বেশ-কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রতিধ্বনী, ল্যাম্পপোস্ট, মশাল, ব্লাড ডোনার সোসাইটি, স্তবক, সাংবাদিক সমিতি উল্লেখযোগ্য।
এত প্রপ্তির মাঝেও ঘাটতি, অভিযোগ থেকেই যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুজন বলেন “১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আছে মাত্র দুটি। যার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকতে হয়। দীর্ঘ এক বছর ধরে তিনটি হলের কাজ চললেও এখনো কোন আশার আলো দেখছি না। তাছাড়া ক্লাসরুম, ল্যাবরুমের সমস্যাতো আছেই। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্যেও পুরোপুরি ইন্টারনেট (ডরঋর) সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত।”
উপাচার্য ড এম অহিদুজ্জামানকে ১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন “আমি মনে করি দশম বছরটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তনের বছর। আমি যোগদানের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। ইউজিসি থেকে ২৩৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার উন্নয়ন বিল পাস করিয়েছি। ফলে ক্লাস রুম, ল্যাবরুম ও আবাসন সমস্যা ছিল তা অচিরেই দূর হবে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ইউজঊঘ-এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চলে এসেছে। ঈদের পরপরই শিক্ষার্থীরা এর সুবিধা ভোগ করবে”।
সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে দেশের অন্যতম সেরা একটি বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। কারণ অবকাঠামোগতে উন্নয়ন ও অত্যাধুনিক ল্যাব গড়ে তোলার জন্য যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় শিক্ষা ও মাঠ পর্যায়ের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ষ নাজমুস সাকিব সাদী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন