শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : প্রথম দিনের অণুগল্প

প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

২০১৫ সালের ১৫ মার্চ। পা রেখেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামের জ্ঞানের ঘরে। আর এ দিনটিই ছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন। ক্যাম্পাসে প্রবেশের করেই বড় ভাইয়া এবং আপুদের ডাকা-ডাকি। তাদের সাথে এক প্রকার ¯œাযু যুদ্ধ করে বিভাগের করিডোরে প্রবেশ। সবগুলো মুখই অপরিচিত। কাউকেই চিনি না। সবাই শুধু এক অপরের দিকে তাকাই। আমরা কেউ কোন কথা বলি না। আজকে এই কথা স্মরণ হলে অবাক হই। এখন আমরা একে অপরের বন্ধু। তাদের ছাড়া এখন ক্যাম্পাসে দিন যেন কাটতেই চায় না। এমটাই বলছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
মানুষ মাত্রই কথা না বলে থাকতে পারে না। তারপর ধীরে ধীরে অমরা একে অপরের সাথে কথা বলা শুরু করলাম। নাম, কোথা থেকে এসেছি? আর এভাবেই আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধনের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছিল। ক্যাম্পাসের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত সকল জায়গায়ই আমাদের পদচারণা। ক্যাম্পাসের কাঁঠাল তলা, লালন চত্বর, পিএ চত্বর, সাংবাদিক চত্বর, থিয়েটার কটেজ, শহীদ মিনার, শিক্ষক ডরমেটরির সিঁড়ি, এসব জায়গায় বসে বলা শুরু হয়েছিল একেক জনের জীবনের নানা অজানা গল্প। গল্পগুলো এতই ছোট ছিল যে তাই বলা যায় অনুগল্প। আর এগুলোই হয়ে ওঠেছে আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম দিনের অনুগল্প।
সবাই বিভাগের কড়িডোরে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটি কক্ষ থেকে বেড়িয়ে এলেন একজন ভদ্রলোক। দেখে মনে হলো শিক্ষক। তোমরা কি ফার্স্ট ইয়ার? জি স্যার। ও....। আসলে তিনি স্যার ছিলেন না। আমাদের বিভাগের পিয়ন। তিনি বললেন, ‘স্যাররা তো এখনও আসেননি।’ তখনই ধারণা হয় তিনি স্যার নন। বিভাগের কোনো কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী হবেন। পরে আমাদের ধারণাই সত্যি হয়। সময়মত শিক্ষকরা আসলেন। ক্লাস নিলেন। প্রথম দিনই ধারণা হলো স্কুল আর কলেজের পড়াশুনায় কত পার্থক্য। আমরা এসেছি বিশ্ববিদ্যালয় নামের জ্ঞান সমুদ্র থেকে জ্ঞান অর্জন করতে। কলেজের শিক্ষকরা সাধারণত নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর লেকচার দেন। এখানে ঘটল তার ব্যতিক্রম। একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে স্যার কত কিছু যে বললেন তার ইয়াত্তা নেই। বিশ্ববিদালয়ের জ্ঞান বিশ্বজনীন জ্ঞান তা প্রথম দিনেই বুঝতে পেরেছিলাম।
ক্লাস শেষে ক্যাম্পাস থেকে হলে ফেরার জন্য রওয়ানা দিলাম। হঠাৎ ডাক পড়ল। এই যে ভাইয়া? ভয়ে ভয়ে থমকে দাঁড়িয়ে!! আমাকে ডাকছেন? হ্যাঁ আপনাকে। কি নাম? কোন বিভাগ? হোমটাউন কোথায়? ধীরে ধীরে প্রশ্নের সংখ্যা বাড়তে থাকল। আর প্রশ্নগুলোও উদ্ভট। কোন দিনও এমন প্রশ্ন শুনিনি। যেগুলোর উত্তর জানা থাকলেও তাদের সামনে বলতে লজ্জা লাগছিল। কিন্তু তারা তো নাছর বান্দা। উত্তর না দিলে বিদায় দিবেন না। অবশেষে হাজার লজ্জাকে তোয়াক্কা করে বলেই ফেললাম। আবার কতগুলো প্রশ্ন যেগুলোর কোন উত্তর জানা নেই। বা থাকারও কথা না। উত্তর দিতে দিতে যখন হাঁফিয়ে ওঠে চোখে জল আসার উপক্রম তখনই সিনিয়রদের আসল পরিচয় পেলাম। তারা আমাদের সাথে ফ্রি হতে চান। আমাদের কাছে নিতে চান। সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে চান।
বিকেলে হল থেকে বেড় হলাম ঘুড়তে। হলে আসলাম সন্ধ্যার পর। গণরোমে সিনিয়ররা আসলেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম। রাত বাড়তে থাকল আর আমাদের র‌্যাগের মাত্রা বাড়তে থাকল। অবশেষে হলের পাশের দোকানে নিয়ে যত ইচ্ছা খাওয়ার সুযোগ। কিন্তু মনের দুঃখে কিছুই খেতে পারলাম না। এখন সিনিয়র হয়ে গেছি তবে এই প্রথম দিনের কথা খুব মনে পড়ে। আর এই দিনটি স্মৃতির মিনারে থাকবে অম্লান হয়ে।
ষ এসএম জুবায়ের

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন