সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান গতকাল মস্কোতে যেয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। সিরিয়ার যুদ্ধ দুই পক্ষকেই সংকটজনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ফলে সেখানে সংঘাত এড়িয়ে ঐক্যমতে আসার লক্ষ্যে তারা আলোচনায় বসেন। সেখানে উভয় পক্ষই অস্ত্রবিরতির পক্ষে মত দেন।
বৈঠকের শুরুতেই পুতিন এরদোগানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একমত হতে হবে যাতে কোন পক্ষই আর ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং রাশিয়া-তুর্কি সম্পর্ক নষ্ট না হয়। তিনি ইদলিবে রাশিয়া সমর্থিত সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর হামলায় নিহত তুর্কি সেনাদের বিষয়ে সমবেদনা জানিয়েছেন। তবে সিরিয়ান সেনাবাহিনীও ‘মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করেছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। জবাবে এরদোগান বলেন, ‘বিশ্ব আজ আমাদের দেখছে।’ আলোচনায় তাদের সিদ্ধান্ত সংকট নিরসনে সহায়তা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি।
এদিকে, গতকাল তুরস্কের সাথে আলোচনার আগে সিরিয়ায় নৌ ও আকাশ পথে রাশিয়া আরও সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জোর প্রস্ততি গ্রহন করেছে বলে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং ভিডিও চিত্র থেকে জানা গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তুরস্কের বসফরাস উপক‚লে বিমান চলাচল, বিভিন্ন তথ্য এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় নৌপরিবহন সংক্রান্ত রয়টার্সের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় বিমান হামলায় ৩৪ তুর্কি সৈন্য নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে তুরস্ক বসফরাস প্রণালীতে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ চলাচল বন্ধ ও সামরিক পরিবহণ বিমানগুলোকে তাদের আকাশসীমায় নিষিদ্ধ করতে পারে। এই আশঙ্কায় গত ২৮ ফেব্রæয়ারি থেকে মস্কো সিরিয়ায় নৌ ও বিমানবাহী সামরিক সরবরাহ বাড়াতে শুরু করে। এর মধ্যেই সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে রাশিয়া সমর্থিত সিরিয়ার সরকারী বাহিনী এবং তুরস্কের সাথে জোটবদ্ধ সিরিয়ান বিদ্রোহীদের মধ্যকার সংঘর্ষের কারণে রাশিয়া ও সিরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। উভয় দেশই এই লড়াইয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকায় তাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঝুঁকি দেখা দেয়ায় দেশ দুইটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং রজব তাইয়্যেব এরদোগান বৈঠকে বসতে সম্মত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এরদোগান আশা করছেন যে এই আলোচনা ইদলিবে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করবে। বসফরাস প্রণালী বন্ধ হলে সিরিয়াতে সাহায্য পাঠাতে রাশিয়াকে দীর্ঘ পথে ঘুরে যেতে হবে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তুরস্কের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে আপাতত এমন কোনও পরিকল্পনা নেই।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরের পর থেকে সিরিয়ার আসাদ সরকারকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছে রাশিয়া। মার্কিন বাহিনী সিরিয়ার কিছু অংশ থেকে সরে আসার পর মস্কো সেখানে দ্রæত সেনা মোতায়েনের তোড়জোর শুরু করে। রয়টার্সের বসফরাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, গত ২৮ ফেব্রæয়ারি থেকে রাশিয়া পরবর্তী ৬ দিনের মধ্যে সিরিয়ার দিকে ৫ যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। সিরিয়ার পক্ষে রাশিয়া দুই যুদ্ধজাহাজ ‘অ্যাডমিরাল গ্রিগোরোভিচ’ এবং ‘অ্যাডমিরাল মাকারোভ’ পাঠানোর ঘোষণা দিলেও তারা অঘোষিতভাবে আরও তিনটি মোতায়েন করে। এগুলোর মধ্যে রণতরী ‘ওক’ ২০টি ট্যাঙ্ক, ৫০টি ট্রাক বা ৪৫টি সাঁজোয়া যান এবং ৪০০ সেনা বহনে সক্ষম। অন্য ২টি রণতরী ‘নভোচের্কাস্ক’ এবং ‘সিজার কুনিকভ’ ৩শ’রও বেশি সেনা ও ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যান বহন করতে পারে। সূত্র : বøুমবার্গ, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন