শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অপ্রতিরোধ্য চাঁদাবাজি

কোম্পানীগঞ্জ বাস-সিএনজি স্ট্যান্ড

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

সিন্ডিকেট চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জের পরিবহন খাত। এখানকার পরিবহন খাতে অপ্রতিরোধ্য চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য থামানোর সাধ্য যেন কারও নেই। বাস, সিএনজি স্ট্যান্ড দুটো থেকেই প্রকাশ্যেই জিপি, শ্রমিক কল্যাণ, টার্মিনাল ফি, পার্কিং চার্জসহ নানা খাতের নামে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজি চলছে। প্রায় আড়াই যুগ ধরে কোম্পানিগঞ্জের পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির সাথে জড়িয়ে রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এদের সমন্বয়েই কোম্পানীগঞ্জে গড়ে উঠেছে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট।

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের চাকা ঘুরলেই যুক্ত হয় চাঁদার দাবি। স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি বের হওয়ার আগেই একেকটি গাড়িকে জিপি নামক চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। তার সাথে রয়েছে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড, টার্মিনাল এবং পার্কিং চাঁদা। কোম্পানীগঞ্জ থেকে কুমিল্লা, কুমিল্লা থেকে নবীনগর রুটে প্রতিদিন চলাচলকারী ৫৫টি নিউ জনতা এবং ৩০টি পুরাতন জনতা মিনিবাস থেকে বিভিন্ন খাতের নামে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়। কোম্পানীগঞ্জ-ঢাকা এবং নবীনগর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী তিশা ক্লাসিক ও তিশা ভিআইপি পরিবহনের ৭৫টি বাস থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকা এবং বিআরটিসি, লেগুনা ও ফারজানা পরিবহন থেকে প্রায় ২০ হাজার, সুখী ও মিতালী পরিবহন থেকে প্রায় ৩০ হাজার ও বাজারের পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা এবং সিএনজি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলা হয়।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের পরিবহন খাত ও বাজারের চাঁদার বড় একটি অংশ আহা পরিবারের অন্যতম সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন চেয়ারম্যানের নামে তোলা হয়। আবার তার ভাই স্থানীয় শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমানের নামে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের এবং ফারজানা পরিবহন এবং বিআরটিসি থেকে চাঁদা তোলা হয়। এছাড়াও তার নামে কোম্পানীগঞ্জ বাজারে পণ্যবাহী কোন পরিবহন ঢুকলে চাঁদা আদায় করা হয়।
জনতা এবং নিউ জনতা বাসের চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রণ করেন মালিক সমিতির সভাপতি আহা পরিবারের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। চট্টগ্রামগামী সুখী এবং মিতালী পরিবহনের চাঁদা তোলা হয় আহা পরিবারের সদস্য সফিকের নামে। যানবাহনের চালক ও হেলপাররা জানান, কোনো রুটের যানবাহনই চাঁদামুক্ত নয়। চলাচলকারী সব গাড়িকে প্রতি ট্রিপেই নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদা পরিশোধের পর টার্মিনাল ছাড়তে দেয়া হয়। এদিকে কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় সিএনজি অটোরিকশার প্রায় ১০টি স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন প্রকাশ্যে লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়। কোম্পানীগঞ্জ-যাত্রাপুর-মোচাগাড়া এবং কোম্পানীগঞ্জ রামচন্দ্রপুর সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায়ে জড়িত সুদন মিয়া, সুমন সরকারের সিন্ডিকেট।

কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদা তুলে সফিকুল ইসলাম ছবি, সুমন সরকার, দেলোয়ার মেম্বারের সিন্ডিকেট। কোম্পানীগঞ্জ-কুটি চৌমুহনী, দেবিদ্বার, বিষ্ণপুরগামী সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলায় জড়িত আহা পরিবারের সদস্য দেলোয়ার হোসেন। কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর রুটে সিএনজি স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন বাদশা মিয়া। কোম্পানীগঞ্জ-বাঙ্গরা-নবীনগর সড়কে অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায় নিয়ন্ত্রন করেন বাখরনগর গ্রামের সুজন মেম্বার।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি তিশা বাসের পরিচালক ও জনতা পরিবহনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। গত তিনদিন ধরে বাসস্ট্যান্ড ও বাজারে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে প্রশাসনের সাথে মিলে কাজ করেছি। আমরা বাসস্ট্যান্ডে বর্তমানে কোনো গাড়ি থেকে জিপির টাকা নেই না। কিছু খাত রয়েছে এগুলোর জন্য কিছু অর্থ নেয়া হয়। আমি কোনভাবেই পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নই।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মনজুর আলম বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় পরিবহন স্ট্যান্ডসহ বাজারেও চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ না করলেও আমরা সত্যতা পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন