‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো’। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত, অবিচলতা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার উক্তিটি এখনো অমর হয়ে আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলায় কথা বলা, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের মানুষকে এক করে দেশকে উন্নয়নের সোপানে দাঁড় করানোর কারিগর হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার রাজনৈতিক জীবনের পুরটো কেটেছে আন্দোলন, সংগ্রাম আর কারাবরণ করে। কিন্তু কখনও ক্ষমতার মোহে পড়েননি। ক্ষমতা ভোগের মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করেননি। সারাজীবন সাদামাঠা জীবন যাপন করেছেন। কখননো মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকেননি। কারণ বঙ্গবন্ধু মনে করতেন তার শক্তিই হলো জনগণ। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্থান থেকে কারামুক্তি পেয়ে দেশে ফেরার ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন তার শক্তির উৎস কী আর তার দুর্বলতা কোথায়। দুটোর উত্তরই ছিল এক। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে, আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে, আমার বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে। সমাজে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের কল্যাণের জন্যই বঙ্গবন্ধুর জীবন রাজনৈতিক জীবন ব্যয় করেছেন। অবিভক্ত ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় তিনি আন্দোলন করেছেন শোষণ, বৈষ্যম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোসহীন। যেখানেই শোষণ ও বৈষম্য সেখানেই অধিকার বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির উন্নয়নে তিনি সারাজীবন ত্যাগ করে গেছেন। আবার সেই বাংলায় নৃশংশভাবে তাকে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানে কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিনি মারা গেলেও যেন তার লাশটি বাঙালির কাছে দিয়ে দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর এমন আত্মত্যাগের কথা উঠে এসেছে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তেও। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘বাংলার ছেলেরা, বাংলার মায়েরা, বাংলার কৃষক, বাংলার শ্রমিক, বাংলার বুদ্ধিজীবী যেভাবে সংগ্রাম করেছে, আমি কারাগারে বন্দি ছিলাম, ফাঁসি কাষ্ঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম, আমার বাঙালিকে দাবায় রাখতে পারবে না। তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে আখ্যা দেওয়া বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন দেশে উন্নয়নের বীজ বপণ করে গেছেন, যা প্রতিদিনি বিশ্বের বুকে একটু একটু করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ, রাজনৈতিক ত্যাগ আমাদের হৃদয়ে ধারণ করাই হলো তার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা। বঙ্গবন্ধুকে কোনো একটি বছর দিয়ে নয়, ইতিহাসের একটি অধ্যায় দিয়ে চিনতে হবে। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু বাঙালির সবকিছুর মূলে বঙ্গবন্ধুর চেতনা থাকতে হবে। তার চেতনার নামে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের রাজনীতি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো আরেক বিশ্বাসঘাতকতা।
লেখক: প্রকাশক, দৈনিক সময়ের আলো, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন