রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

খেলোয়াড় যখন অ্যাম্বুলেন্স চালক

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০৯ এএম

নভেল করোনাভাইরাসে রীতিমতো বিপর্যস্ত বর্তমান বিশ্ব। এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছেন বড় বড় তারকারা। অনেকেই নানা আর্থিক সাহায্য দিয়ে পাশে থাকছেন। কেউবা কাজ করছেন সেচ্ছাসেবী হিসেবে। তেমনি ইতালির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যার্থে দিনে ১৩ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছেন জেব্রে রাগবি ক্লাবের ফ্ল্যানকার ম্যাক্সিম এমবান্দা।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা বিশ্বের প্রায় সব ধরণের খেলা স্থগিত হয়ে গেছে। স্থগিত হয়েছে ইতালির রাগবিও। তাই এ সময়ে ঘরে বসে না থেকে সাধারণ মানুষকে সাহায্যের চিন্তা করেন এমবান্দা। ইতালির হাসপাতালগুলি রোগীদের ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অসুস্থদের স্বাস্থ্যসেবা আরও শক্তিশালী করতে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর সিদ্ধান্ত নেন এ রাগবি খেলোয়াড়।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমবান্দা বলেন, ‘রাগবি খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমি ভাবতে থাকি চিকিৎসা দক্ষতা ছাড়াই কীভাবে সাহায্য করতে পারি। এরপর আমি ৮ দিন আগে এটা (অ্যাম্বুলেন্স চালানো) শুরু করি এবং কোন বিরতি ছাড়া দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ করছি। সংক্রামক রোগীদের কক্ষে আমি যা দেখছি তাতে আমি নিজেকে বলি আমাকে কখনোই ক্লান্ত হওয়া চলবে না।’

প্রতিদিনই ইতালিতে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। তাতে একটুও কি ভয় পান না এমবান্দা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তবে কিছু ছোট জিনিস রয়েছে যা দিয়ে নিরাপদে করা যায়। এবং সামনের সারীতে যারা থাকছে তাদের মাঝে মধ্যে এক-আধ ঘণ্টা বিশ্রাম দেওয়া যায়। তাদের জন্য প্রতি ঘণ্টা গুরুত্বপ‚র্ণ। যতক্ষণ আমার শক্তি আছে, আমি চালিয়ে যাব। আমি এখানে আছি এবং এখানেই থাকব।’

অবশ্য এমবান্দার বাবাও একজন শল্যচিকিৎসক। তার পরামর্শ অনুযায়ীই এমবান্দা তার ক্লাব জেব্রের প্রবীণদের সাহায্যার্থে এ কাজে মনোযোগ দেন। দেশটির এ অঞ্চলেই করোনাভাইরাস অনেক বেশি সংক্রামণ হয়েছে। তবে শুরুতে খাদ্য ও মেডিক্যাল সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে নেমেছিলেন এমবান্দা, ‘আমি প্রথমে খাদ্য ও মেডিক্যাল সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে যুক্ত হই। কিন্তু পরে আমি ভাইরাসে আক্রান্তদের এক একটি স্থানীয় হাসপাতাল থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ার কাজ করি। আমি স্ট্রেচার ধরে মাঝে মধ্যে হুইল চেয়ারের রোগীদের কোলে করে তুলি। আমি আক্সিজেনও ধরে রাখি।’

নিজের কাজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘আপনি যদি তাদের চোখের দিকে তাকান... তারা কখনো কখনো কথাও বলতে পারে না। তারা আপনাকে চোখের ভাষায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা করবে যা আপনি ভাবতেও পারবেন না। প্রথম যে ব্যক্তিকে আমি এনেছিলাম তিনি বলেছিলেন, তার পাশের বেডের রোগী মারা যাওয়ার পর তিন ঘণ্টা সে পাশের বেডে ছিল। সে সময় আরও দুই জন মহিলা মারা যায়। এর আগে সে কখনোই কাউকে মরতে দেখেনি।’

‘আমি যা দেখেছি তা যদি সবাই দেখত তাহলে কেউ সুপারমার্কেটের সামনে সামান্য সময় ব্যয় করতো না। তারা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে একবার, দুইবার, তিনবার ভাবত। আমি সব বয়সী রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখেছি। অক্সিজেনের মধ্যে থাকতে দেখেছি। দেখেছি কীভাবে ডাক্তার-নার্সরা কোন ঘুম ছাড়া দিনে টানা ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা কাজ করছেন। পরদিন কিছু বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবেন।’

করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ইতালিতে। সাধারণ মানুষ তো বটেই ইতালিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন ডাক্তারও। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা সর্বাধিক ছয় হাজার ৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭ জনে পৌঁছেছে। উদ্বেগজনক অবস্থায় পুরো ইতালি অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন