শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

আল কোরআন পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান

বিচারপতি মোঃ আবদুস সালাম | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০৮ এএম

পুরুষের খালি মাথায় নামায পড়া কিংবা কনুই খুলে নামায পড়া মাকরুহ। হাফশার্ট পরিহিত অবস্থায় হোক কিংবা আস্তিন গুটানো হোক সর্বাবস্থায় মাকরুহ পৃষ্ঠা-৪৩৭ তাফসীর মারেফুল কোরআন এবং মহিলাগণের মাথায় কাপড় দেওয়া প্রসঙ্গে।
“(বনী আদম) প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছেদ পরিধান করিবে, আহার্য করিবে ও পান করিবে কিন্তু অপচয় করিবে না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদিগকে পছন্দ করেন না।” সূরা আরাফ: আয়াত ৩১, পারা ৮
ব্যাখ্যা: কাফিরগণ হজ্জ ও উমরার সময় উলংগ হইয়া কা’বা শরীফের তাওয়াফ করিত। বিধি মোতাবেক পোষাক পরিধান করিয়া ইবাদত করিতে এই আয়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন পৃষ্ঠা-৪৩৭। ৩১নং আয়াতের ২য় মাসলা, পোষাককে জিনাত সাজ-সজ্জার মাধ্যমে ইশারা করা হয়েছে যে, নামাযে শুধু গুপ্ত অংঘ আবৃত করা ছাড়াও সাধ্য অনুযায়ী সাজ-সজ্জার পোশাক পরিধান করা উত্তম।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিশাদভাবে বর্ণনা করেছেন যে, পুরুষের গুপ্ত অংগ নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের গুপ্ত অংগ মুখমন্ডল, হাতের তালু এবং পদযুগল বাদে সমস্ত দেহ। হাদীস সমূহে বর্ণিত রয়েছে-নাভীর নীচের অংশ অথবা হাঁটু খোলা থাকলে পুরুষের জন্য এরুপ পোশাক এমনিতেও গর্হিত এবং এতে নামায আদায় হয় না। এমনিভাবে নারীর মস্তক, ঘাড় অথবা বাহু অথবা পায়ের গোছা খোলা থাকলে এরূপ পোশাক এমনিতে নাজায়েজ এবং নামাযও আদায় হবে না। এক হাদীসে বলা হয়েছে; যে গৃহে নারী খোলা মাথায় থাকে, সে গৃহে নেকীর/রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। সূত্র - বোখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ শারাহ কাশফুল বারী শারহু সাহিহিল বুখারী, ২৪ নং খন্ড, পৃষ্ঠা-৩৩৪। অনেকদিন আগে একবার তারাবীর নামায পড়ার পর বাসায় এসে চা নাস্তা, খাবার সময় এবং আরেকদিন যোহরের নামাজের পর খবরাখবর জানার জন্য একটি চ্যানেল টেলিভিশন খুলি। দুপুরের খবরের পাঠিকার মাথায় কাপড় দেওয়া দেখেছি। বাকি সব টেলিভিশনে একাত্তরের খবর, ইনডিপেনডেন্ট, দেশ, এটিএন নিউজ, এটিএন বাংলা খবর শুনার সময় সংবাদ পাঠিকা ও প্রোগ্রাম উপস্থাপনকারী বেশির ভাগই মহিলা কাহারও মাথায় রমজান মাসে কোন কাপড় দেওয়া দেখিনি, টেলিভিশনে খবর ও প্রোগাম সবই হয় ঘরের ভিতর, আমি সকলের মঙ্গল, কল্যাণ কামনা করি। রমজান মাসে ২৪৫-১৮ তাং বৃহস্পতিবার, বাদ যোহর তথ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও তথ্য সচিব জনাব আব্দুল মালেকের সহিত কথা বলার চেষ্টা করি। সবাই মিটিং এ ব্যস্ত ছিলেন। তবুও আমি সংবাদ ও আমার অনুরোধ সকলের নিকট পৌছাইয়া দিয়া অনুরোধ করেছি। তথ্য সচিব আব্দুল মালেকের ফোন নং ৯৫৭৬৬১৮ মাধ্যমে প্রত্যেক টিভি চ্যানেলের সি,ই,ও মাধ্যমে সংবাদ মহিলা সংবাদ পাঠিকা ও প্রোগ্রাম উপস্থাপন কারিনীগণকে অনুরোধ করেন বিশেষভাবে রমজান মাসে কাজ করার সময় তাহারা যেন মাথায় কাপড় দেওয়ার চেষ্টা করেন। সরসীনার পীর সাহেবের খলিফা হযরত মাওলানা আবু যাফর মোহাম্মদ সালেহ মিরপুরে এক ভি,আই,পি, জুম্মা মসজিদে এক বয়ানে বলেছেন, মাথায় কাপড় না থাকলে কোন মহিলার উপস্থাপনায় কোন আলোচনায় কোন অংশগ্রহণকারী কোন আলেম বা অন্য কোন শিক্ষিত লোক অংশগ্রহণ করিলে তাহারও ঈমান নষ্ট হবে। আমি একথাও বলেছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাথায় কাপড় দেন ও “লম্বা হাতা ওয়ালা” জামা পরেন। প্রথম পর্যায়ে মহিলাদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লেবাস অনুসরণীয়। হাদীস শরীফে আছে, রম্যান শরীফের প্রথম তিন ভাগের এক ভাগ আল্লাহর রহমতের, দ্বিতীয় তিন ভাগের একভাগ মাগফেরাতের এবং শেষ তিন ভাগের একভাগ জাহান্নামের আগুন থকে মুক্তি প্রাপ্তি। আল্লাহ রাব্বল আলামিন যেন আমাদের সকলকে পবিত্র রমযান মাসে রোজা, নামায ও তারাবীহ সহ সকল ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল সমূহ পূর্ণভাবে আদায় করার তাওফীক দান করেন। (আমিন)
নারীর মুখমন্ডল, হাতের তালু এবং পদযুগল গুপ্ত অংগের বাহিরে রাখা হয়েছে, নামাযে এ সব অংগ খোলা থাকলে নামাযে কোন ত্রুটি হবে না। এর অর্থ এরূপ কখনও নয় যে মাহররাম নয়, এরূপ ব্যক্তির সামনেও সে শরীয়ত সম্মত ওযর ব্যতীত মুখমন্ডল খুলে ঘুরাফেরা করবে।
নামাযে শুধু গুপ্ত অংগ গোপন করাই কাম্য নয়, বরং সাজ সজ্জার পোশাক পরিধান করতেও বলা হয়েছে। তাই, পুরুষের উলংগ মাথায় নামায পড়া কিংবা কনুই খুলে নামায পড়া মাকরুহ। হাফশার্ট পরিহিত অবস্থা হোক কিংবা আস্তিন গুটানো হোক-সর্ববস্থায় নামায মাকরূহ হবে। (পৃষ্ঠা ৪৩৭), তাফসীর মা’আরেফুল কোরআন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সাবেক প্রধান মরহুম অধ্যাপক আব্দুল মান্নান খান তাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবনে আমাদের হুজুর কেবলার সম্মুখে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন যে, গরীব মানুষ যার শরীরে কোন কাপড় নাই ও মাথায় টুপি নাই, কেনার মত সামর্থ নাই খালি শরীরে ও খালি মাথায় নামায আদায় করলে নামায মাকরুহ হবে না।
সূরা আল-আরাফ আয়াত নং ৩১ এর ২য় অংশের ব্যাখ্যায় বলা হয় পানাহারে মধ্য পন্থায় দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য উপকারী (পৃষ্ঠা ৪৩৮)। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন বেশী পানাহার থেকে বিরত থাক। কারণ অধিক পানাহার দেহকে নষ্ট করে, রোগের জন্ম দেয় এবং কর্মে অলসতা সৃষ্টি করে। পানাহারের মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। এটা দৈহিক সুস্থতার জন্য উপকারী এবং অপচয় থেকে দূরে রাখে। তিনি আরও বলেন: আল্লাহ তা’য়ালা স্থ‚ল দেহী আলেমকে পছন্দ করেন না। তিনি আরও বলেন: মানুষ ততক্ষণ ধ্বংস হয় না, যতক্ষণ না সে মানসিক প্রবৃত্তিকে ধর্মের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করে। (রুহুল-মা’আনী)। হযরত বায়হাকী বর্ণনা করে, একবার রসূলুল্লাহ (স) হযরত আয়েশা (রা:) কে দিনে দু’বার খেতে দেখে বললেন: হে আয়েশা, তুমি কি পছন্দ কর যে, আহার করাই তোমার একমাত্র কাজ হোক? এই ৩১ নং আয়াতে পানাহার সম্পর্কে যে মধ্যবর্তিতার নির্দেশ হয়েছে, তা শুধু পানাহারের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নহে, বরং পরিধান ও বসবাসের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মধ্যপন্থা পছন্দনীয় ও কাম্য। হযরত আব্বাস (রা:) বলেন: যা ইচ্ছা পানাহার কর এবং যা ইচ্ছা পরিধান কর। তবে শুধু দু’টি বিষয় থেকে বেঁচে থাক। (এক) তাতে অপব্যয় অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে বেশী না হওয়া চাই। এবং (দুই) গর্ব ও অহংকার না থাকা চাই। আজকাল বিয়ে সাদির অনুষ্ঠানে প্রয়োজনের চেয়ে অধিক খাদ্য ও মাংস চাপিয়ে দেওয় হয় যা খাওয়া সম্ভব হয় না এবং প্লেট মুছে ও হাত মুছে খাওয়ার সুন্নাতও বেশীর ক্ষেত্রে আদায় করা সম্ভব হয় না। বিয়ে সাদিতে অনেক খাবার অপচয় হয় যা সুন্নতের আমলের পরিপন্থি, যা আমাদের সকলেরই বর্জন করা উচিত ও যতটুকু খাওয়া যায় ততটুকু সরবরাহ করা উচিৎ যাতে বরকত হয়। ৩১নং আয়াতের শেষে ৮টি মাসআলা উদ্ভব হয়। (এক) যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানাহার করা ফরয। (দুই) শরীয়তের কোন প্রমাণ দ্বারা কোন বস্তুর অবৈধতা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সব বস্তুই হালাল। (তিন) আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল (স) কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তু সমূহ ব্যবহার করা অপব্যয় ও অবৈধ। (চার) যে সব বস্তু আল্লাহ তা’য়ালা হালাল করেছেন, সেগুলোকে হারাম মনে করাও অপব্যয় ও মহাপাপ। (পাঁচ) পেট ভরে খাওয়ার পরও আহার করা নাজায়েয। (ছয়) এতটুকু কম খাওয়া অবৈধ যদ্দরুন দুর্বল হয়ে ফরয কর্ম সম্পাদন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। (সাত) সর্বদা পানাহারের চিন্তায় মগ্ন থাকাও অপব্যয়। (আট) মনে কিছু চাইলেই তা অবশ্যই খাওয়া অপব্যয়। উৎকৃষ্ট পোশাক সুস্বাদু খাদ্য বর্জন করা ইসলামের শিক্ষা নয়; সে সব লোক দন্তনীয় যারা আল্লাহর হালালকৃত উৎকৃষ্ট অথবা পবিত্র ও সুস্বাদু খাদ্য কে হারাম মনে করে। সংগতি থাকা সত্তে্বও জীর্ণাবস্থায় থাকাও ইসলামের শিক্ষা নয় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে পছন্দনীয়ও নয়। যেমন অনেক অজ্ঞ লোক মনে করে (পৃষ্ঠা ৪৩৮-৪৩৯) তাফসীর মা’আরেফুল কোরআন)
নিষিদ্ধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছু অবৈধ নয়। পানাহারে সীমালংঘন বৈধ নয়। ক্ষুধা ও প্রয়োজনের চাইতে অধিক পানাহার করাও সীমালংঘনের মধ্যে গণ্য। তাই ফেকাহবিদগণ উদর পূর্তির অধিক ভক্ষণ করাকে না-জায়েয লিখেছেন।
আহকামুল- কোরআন, একটি কেতাবে দেখেছি উদর পূর্তির পর অধিক ভক্ষণ করার চেয়ে উক্ত খাদ্যকে প্রদান করা উত্তম।
সালাত/ নামায: তোমরা সালাত/ নামায কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যাহারা রুকু করে তাহাদের সহিত রুকু কর। (সূরা বাকারা আয়াত ৪৩)। রুকু অর্থ মাথা নত করা। শরীয়তের পরিভাষায় সালাতের একটি রুকন। এই আয়াতের ফরয সালাত জামা’আতের একটি রুকন। এই আয়াতে ফরয সালাত জামাআতের সঙ্গে কায়েম। করাও নির্দেশ রয়েছে। “নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরয করা হইয়াছে। (সূরা নিসা আয়াত ১০৩)।
হযরত জিবরাইল আ: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট মদীনা মুনাওয়ারার বাবে জিব্রাইল গেটের কাছে দুই দিনে ১০ বার আসেন, ফজর নামাযের শুরু সময় (আউওয়াল ওয়াক্ত ও ফজর নামাজের শেষ ওয়াক্তে আখের সময়); যোহর নামাযের শুরুর সময় ও শেষ সময়; আসর নামাযের শুরু সময়ে ও শেষ সময় মাগরিবের নামাযের শুরুর সময় ও শেষ ওয়াক্ত; এশার নামাযের শুরু ওয়াক্তে ও শেষ ওয়াক্তে , এবং ১০ বার রসুল (স) নামায পড়ার শিক্ষা দেন ও রসুল (স) কে বলেন যে, আপনার উম্মতের জন্য নামায পড়ার সর্বোত্তম সময় হলো প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে শুরুর সময় ও ওয়াক্ত হওয়ার মধ্যবর্তি সময় যেমন বর্তমানে ফজর নামাযে আযান হয়, ৪-৩০ মিনিট, ফজর নামাযের জামাত হয় ৫:০০, ফজরের নামাযের শেষ সময় ৫:২৫ মিনিট; কিন্তু আহলে হাদীস ভাইগণ সাধারতঃ হানাফী মাযহাবের ফরজ নামায শুরুর ১৫-২০ মিনিট আগে ফরজ নামায আদায় করেন। যেমন ফজর নামাযের জামাত বর্তমানে ৪:৪০-৪:৪৫ মিনিট এর মধ্যে জামাত শেষ করেন।
অমুসলিম ও অনুগত নাগরিকের প্রতি কোন অত্যাচার করবে না। অতিরিক্ত কর ধার্য নহে, অনুগত অমুসলিমদের মত ও তুষ্টি ছাড়া তা কোন জিনিস হস্তগত করলে রাসুলুল্লাহ (স) নিজে বাদী হয়ে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে মামলা-নালিশ দিবেন। (মেশকাত শরীফ) কোন অমুসলিম নাগরিককে কোন মুসলমান হত্যা করলে হত্যাকারী বেহেশতের গন্ধও পাবে না হলি বারী শরীফ পৃ: ৩৫৪। নিরাশ্রয়, অসহায়, এতিম, বিধবা ও নিঃস্বদের প্রতিপালন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
dr mohd. mofizul islam ১০ এপ্রিল, ২০২০, ৯:৫২ এএম says : 1
to our home minister please take details who are involved in the conspiracy who killed our father of the nation ,who send them to kill our national leaders ,direct telecast in all tv channel. then send this bustared in firing squad and live telecast inall electronic media. nation is waiting to see it
Total Reply(0)
Tutul ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১১:০৯ পিএম says : 0
ইন্টারনেট ব্যবহার করলে মাথা ব্যথা করে, সময় নষ্ট হয়. পত্রিকা না পড়ে কুরআন পড়ে ভালো.
Total Reply(0)
MD Ripon Islam ২ মে, ২০২০, ১০:৫৩ এএম says : 0
most useful post want more day by day.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন