সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে প্রতিনিয়ত হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি ও কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
যশোর : যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১জনসহ শনিবার ১২টা পর্যন্ত ২হাজার ছাড়ালো হোমকোয়ারেন্টানে থাকা লোকের সংখ্যা। এ পর্যন্ত হোমকোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকা অনুযায়ী ২হাজার ১শ’৩০ জন। শনিবার সকারে হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইন থেকে একজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, যশোর থেকে ৩জনের নমুনা আইিডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল পরীক্ষার জন্য। সেখান থেকে রিপোর্ট এসেছে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, যশোরের পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত মোটামুটি ভালো।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সেনাবাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের সহায়তায় স্বাস্থ্যবিভাগ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে যখাযখ ব্যবস্থা নিয়েছে। জেলায় যে ১০হাজার বিদেশ ফেরত ব্যক্তির তালিকা রয়েছে। তাদের মধ্যে সহস্রাধিক সন্ধান পাওয়া গেছে। রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। বাকিদের খোঁজে সবাই চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিদেশ ফেরতদের অনেকের বাড়ির সামনে লালপতাকা টাঙানো হয়েছে।
গাইবান্ধা : করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থানে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের উপর কড়া নজরদাড়ি রাখা হচ্ছে। আগত ৩১৪ জন ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় ৮৭ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১২ জন বিদেশী, ১৭৫ জন প্রবাসী ও ১০০ জন দেশী। এদের মধ্যে ৪ জন আক্রান্ত। এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ২২৭ জন। সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ জানান, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা যাতে নিয়মের বাইরে না চলে সেজন্য তাদের উপর কড়া নজরদাড়ি রাখা হচ্ছে।
বরিশাল : গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২ হাজার ৭৫৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নাম তালিকাভ’ক্ত করেছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় যুক্ত হয়েছে ৩৭ জন। যা আগের যেকোন সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। তবে ইতোমধ্যে আরো ১ হাজার ২০১ জন সুস্থবস্থায় তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
রাজশাহী : রাজশাহীতে বিদেশ থেকে আসা আরো ৪৭ জনকে গত ২৪ ঘণ্টায় খুুঁজে বের করে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৪২ জন। তবে গতকাল সকাল পর্যন্ত রাজশাহীতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮ জন, পুঠিয়ায় ৪ জন, বাগমারায় ১৮ জন, মোহনপুরে ১২ জন, তানোরে ১ জন এবং গোদাগাড়ীতে ৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনের রাখা হয়েছে। আগামী ১৪ দিন তারা বাড়িতেই থাকবেন।
সিলেট : জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে (সদর হাসপাতাল) ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী । গত শুক্রবার রাতে হাসপাতালে আসে সে। বর্তমানে তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কোয়ারেন্টিন বিভাগে রেখে পর্যবেক্ষণ করছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। জানা গেছে, ঢাকায় কয়েকজন প্রবাসীর সংস্পর্শে ছিল ওই শিক্ষার্থী। তার শরীরের স্যাম্পল ঢাকায় পাঠানো হতে পারে, পরদিন রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত হওয়া যাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না তিনি ।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়াত জানান, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ১০৬ জনসহ গতকাল পর্যন্ত জেলায় মোট ২১৫৮ জনকে হোমকোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বিদেশ ফেরতদের তালিকা ধরে তাদের বাড়ি চিহিৃত করার কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, কোভিড- ১৯ মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে গঠিত ১৪ সদস্যের একটি ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম সদর হাসপাতালে নিয়োজিত রয়েছেন।
মাদারীপুর : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের কানুরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা এক কলেজ ছাত্রকে গতকাল সকালে মাদারীপুর সদর হাসাপাতালের আইসলেশনে ভর্তি করা হয়েছে। সে ঢাকা কলেজের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। গত ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে আসেন।
এদিকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত মাদারীপুরে হোম কোয়ারেন্টিনে সর্বমোট ১৩৫৯ জন। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিন থেকে রিলিজ পেয়েছেন ৮৮৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে নতুন আছেন ৬ জন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে রিলিজ হয়েছে ৪০ জন। সদর হাসপাতালের আইসলেশনে শনিবার সকালে নতুন এক কলেজ ছাত্র ভর্তি হয়েছে এবং কয়েকদিন ধরে আইসলেশনে থাকা ১ জন রিলিজ হয়েছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ৪৭১ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ১১৫ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ১৩২৬ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে শেষ হয়েছে ৭১৪ জনের। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬১২ জন এবং বাকী একজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
নবেল করোনা ভাইরাস সংক্রম প্রতিরোধে শনিবার (২৮ মার্চ) সকাল ১১টা পর্যন্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি জানান, লক্ষ্মীপুর একটি প্রবাসী অধ্যূষিত এলাকা, এ জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা পজেটিভ কোন রোগী পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনসহ ১০৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০৯ জনের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় মোট ৫৪০ জন বিদেশ ফেরত প্রবাসী এসেছে। এদের মধ্যে ৩১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা সম্ভব হয়েছে। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা সকলে সুস্থ রয়েছেন।
ফেনী : করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব রোধকল্পে গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে আরও ৩৪ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে জেলায় মোট ৯৬১ বিদেশ ফেরত বর্তমানে হোম কেয়ারেন্টিনে রয়েছে। তাদের সাথে হোম কেয়ারেন্টিনে রয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরাও। গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী এসব জানা গেছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে । এ পর্যন্ত মোট ৩২৪ জনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। ‘সঙ্গরোধে’ থাকাকালীন তাদের কারো মধ্যে কোন উপসর্গ দেখা না যাওয়ায় তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। ছাড়পত্র দেয়া হলেও তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
চাঁদপুর : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চাঁদপুর জেলায় বর্তমানে বিদেশফেরত ২৪২জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হয়েছেন ৮৯জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ১৯৩৩জন প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হয়েছে। আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ৩জন। করোনা পরিস্থিতি বিষয়ে শনিবার সকালে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বান্দরবান : বান্দরবানে ৪২ শিক্ষার্থীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তারা সবাই দিনাজপুরের একটি মিশন স্কুলের শিক্ষার্থী। শুক্রবার সকাল থেকে তাদের শহরের একটি হোস্টেলে সরকারী ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।
এবিষয়ে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, প্রশাসনকে অবহিত করে শিক্ষার্থীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মেয়াদ শেষে তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন