আমদানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে একমুখী খালাস হচ্ছে। ডেলিভারি পরিবহন হাতেগোনা। বন্দরে এখন বেসামাল জট। এতে করে অচলপ্রায় স্বাভাবিক বন্দর কার্যক্রম। গত ৪৮ ঘণ্টায় বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে পণ্যভর্তি কন্টেইনার ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে গেছে।
বর্তমানে ৪৯ হাজার ৮শ’ টিইইউএস কন্টেইনারের স্তুপ জমেছে। স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ ইউনিট। কন্টেইনার রাখার জায়গা অবশিষ্ট নেই। দৈনিক আমদানি কন্টেইনার নামছে কয়েক হাজারে। ডেলিভারি মাত্র কয়েক শ’। কন্টেইনার জটের চাপে শুরু হয়েছে জাহাজের জট।
করোনায় সারাদেশে পরিবহন ব্যবস্থাসহ সবকিছুই বন্ধ। বিপুল পরিমাণে মজুদ কন্টেইনার এবং খোলা জাহাজে রমজান মাসে অধিক চাহিদার খাদ্যশস্য, নিত্যপণ্যের ডেলিভারি পরিবহন অনিশ্চিত। এ কারণেই দিন দিন জট বৃদ্ধি পায়। আটকে থাকা রোজার নিত্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে চিনি, গম, ছোলা, ভোজ্যতেল, মসুর, খেজুরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল, গুঁড়োদুধ, আদা, পেঁয়াজ-রসুন মিলিয়ে লাখ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী।
তাছাড়া আপেল, মাল্টা, আঙ্গুরসহ দুই হাজার ফ্রোজেন কন্টেইনার ভর্তি তাজা ফল-মূলের বিশাল ভাÐার বন্দরে আটকে আছে। আংশিক নষ্ট হতে চলেছে। তাছাড়া আমদানি চালানে একের পর এক জাহাজ থেকে খালাস হচ্ছে গার্মেন্টসহ শিল্প-কারখানার কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি। অথচ পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ। বন্দর থেকেও ডেলিভারি শূন্য প্রায়।
বন্দরজট হচ্ছে জটিল। ইয়ার্ডগুলো কন্টেইনারে পরিপূর্ণ থাকায় এখন আমদানি চালান নিয়ে আগের সিডিউল অনুযায়ী বিদেশি জাহাজ আসছে একের পর এক। এখন জেটি-বার্থে আমদানি কন্টেইনারের ১০টি জাহাজে হ্যান্ডলিং করছে। তাছাড়া বহির্নোঙরে অলস অপেক্ষা করছে কন্টেইনারের ৩৬টি জাহাজ। ইতোমধ্যে ২ থেকে ৩ দিনের জাহাজ জেটিতে ভিড়তে দশ দিন পার হচ্ছে। এরফলে বন্দরে এবার জাহাজজটর সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বাড়তি কন্টেইনার মজুদে বেসরকারি ডিপোসমূহ (অফডক) এবং আরও কিছু জায়গা দ্রæত ব্যবহার করতে চায়। যাতে জটে বন্দর সম্পূর্ণ অচল হয়ে না পড়ে। তবে এরজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমোদন প্রয়োজন। সেদিকেই তাকিয়ে আছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবহারকারীরা।
বন্দরজট নিরসনে আমদানি পণ্যসামগ্রী খালাস, ডেলিভারি পরিবহন, নিত্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গতকাল (শুক্রবার) প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পত্রের মাধ্যমে ৬ দফা প্রস্তাব দেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। এতে জরুরিভিত্তিতে বন্দর-কাস্টমস-শিপিং, ব্যাংকসহ বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সরকারি দপ্তরসমূহ খÐকালীন খোলা রাখার জন্য আহŸান জানানো হয়।
এতে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ভোগ্যপণ্য আমদানি ও সরবরাহে সহায়তার লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করা যায়। তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নির্বিঘœ রাখা যাবে এবং দেশের দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় তা সহ্ায়ক হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন