করোনাভাইরাসের কারণে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে এবারের মহান মে দিবস। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের এই দিনটিতে কোনো দেশেই কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। করোনাভাইরাসের কারণে সব কাজ বন্ধ থাকায় কোটি কোটি শ্রমিক কাজ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। বেতন না পাওয়া অথবা কেটে রাখা, এমনকি চাকরি হারানো-নানা শঙ্কা মাথায় নিয়েই এবার পালিত হয়েছে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের এই দিবসটি। দিবসটিতে দাবি আদায়ে শ্রমিকদের বড় কোনো আয়োজন না থাকলেও ছিল আর্তনাদ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনো শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণে মালিক ও সরকারের সমন্বয় জরুরি বলে মনে করেন শ্রমিক নেতারা। এ এক অন্যরকম শ্রমিক দিবস। ছিল না চিরচেনা ন্যায্যতা, সাম্য বা মজুরির দাবি নিয়ে সারাবছর ঘাম ঝড়ানো মানুষগুলোর মিটিং মিছিল বা ¯েøাগান-সর্বত্রই ছিল শূণ্যতা। তবে অন্য যে কোনো সময়ের থেকে বেশিই যেন অনিশ্চয়তা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর একে একে বন্ধ হয় শিল্প কারখানা ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরপর নানা অনিশ্চতায় জীবন কাটলেও ঠিক এই মুহূর্তে এসে ঘোর অন্ধকারে ডুবছেন অনেকেই। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে নানা প্রতিষ্ঠান খোলা শুরু হলেও অনেকেই হারিয়েছেন উপার্জনের পথ-চাকরি। অনেকেই অপেক্ষার প্রহর গুণছেন কখন আসবে কর্মস্থলে যোগদানের ডাক। শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার বলেন, শ্রম আইনে আছে, এই মহামারিতে ৬ মাস কোনো রকম ছাঁটাই ছাড়াই চালানো যায়। ফলে সেই ধারাকে ফলো করেই শ্রমিকদের বেতন ও চাকরি ফেরত দেন। সবার সম্মিলিত শক্তিতে করোনা যুদ্ধে জয়ের পাশাপাশি মালিক শ্রমিক বিভেদ দূর হোক এমনই প্রত্যাশা।
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। ওই আন্দোলন দমনে শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি চালায়। ওই আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন কয়েকজন বিপ্লবী শ্রমিক। এই দিনটির স্মরণে প্রতি বছর বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয়ে আসছে মহান মে দিবস। দিবসটিতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে সরকারি, বেসরকারি, রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলো দিবসটি পালন করে।
দিবস উপলক্ষে নেওয়া হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ শ্রমিক লাল পতাকা হাতে নিয়ে বিশাল বিশাল র্যালি বের করে। অনুষ্ঠিত হয় শ্রমিক সমাবেশে। কিন্তু চলতি বছর সারা বিশ্বজুড়ে চলছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) দাপট। প্রতি দিনই হাজার হাজার মানুষ এই করোনার কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা বিশ্ব জুড়েই দেশে দেশে চলছে লকডাউন। কোনো কোনো দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই এ বছর শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম মুখর এই দিনটি কোনো কর্মসূচি ছাড়া ভিন্নভাবে পালিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, করোনায় ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে পালিত হয়েছে মহান মে দিবস। শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মে দিবসে শ্রমজীবীদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। কাজির দেউড়িতে বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন (বিএলএফ) নগর শাখার ৩৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারির মধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তিনি ইফতার ও সাহারি সামগ্রী উপহার দেন।
এ সময় মেয়র বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখবেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এ সময় বিএলএফ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সহ সভাপতি শাহ আলম হাওলাদার, নুরুল আবছার তৌহিদ, ইয়াছিন সিরাজ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন