করোনা ঝুঁকি মুখে ফেলা দেয়া হয়েছে সিলেট শিক্ষাবোর্ডকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অবজ্ঞা করে আকস্মিকভাবে এক নোটিশে আজ খুলে দেয়া হয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এ সিদ্ধান্তে চলছে তোলপাড় । লকডাউন নিষেধাজ্ঞা অম্যান ঢাকা থেকে সিলেটে আসতে বাধ্য করা হয়েছে বোর্ডে কর্মরত প্রোগ্রামার শাহ আলম খান ও ডাটা এন্ট্রি অপরাটের রবিউল করিমকে। ওই ২জনকে হোম কোয়ারেন্টিন বা করোনা সনাক্তে কোন ব্যবস্থা না নিয়েই কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে বোর্ড প্রায় ৭১ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে। এছাড়া বোর্ডে দায়িত্বরত ১৩জন নিরাপত্তা কর্মীও এখন করোনা ঝুঁকিতে। বোর্ড কর্তৃপক্ষের এহেন দায়িত্বহীন পদক্ষেপে দেখা দিয়েছে তোলপাড়। চাপা উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, সন্দেহ, সংশয় সহ মানসিক উত্তেজনা বিরাজ করছে গোটা শিক্ষা বোর্ড জুড়ে। অভিযোগ উঠছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা, আন্ত:শিক্ষা বোর্ডের পরামর্শ, শিক্ষামন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ব্যতীত শিক্ষা বোর্ড খুলে দেয়া এক প্রকার হটকারী সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রেরিত প্রজ্ঞাপণে ১৮টি (আঠার) মন্ত্রণালয় ব্যতীত অন্যান্য অফিস ১৪ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত নির্দেশ মোতাবেক যথারীতি বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডসমূহও রয়েছে বন্ধ। কিন্তু সেই নির্দেশনা অবজ্ঞা ও চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে নিজ দায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সিশিবো/প্রশা/১৬৭০(ক) এর চলতি তারিখ ২২ বৈশাখ, ১৪২৭/০৫ মে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ স্মারকে প্রেরিত অফিস আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে ০৫ মে হতে সিলেট শিক্ষা বোর্ড খোলার নির্দেশনা প্রদানপূর্বক সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার এক আদেশ প্রদান করেন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এর মধ্যে দিয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান সিলেটের বিপজ্জনক প্রেক্ষাপট, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এবং গণপরিবহন বন্ধ সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধক সমূহের বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনায় নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমনকি বোর্ড খুলে দিতে গিয়ে অবজ্ঞা দেখানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশকে।
বোর্ড সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রনালয়, আন্ত:শিক্ষা বোর্ড এর সাথে সমন্বয় ও গুরুত্ব বিবেচনায় করেই সিলেট শিক্ষাবোর্ড খুলে দেয়া হয়েছেন এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ আগামী ২০ মে’র মধ্যে নিশ্চিতে। তবে অপর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুধুমাত্র ২০ মে’র মধ্যে এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ সংক্রান্ত স্বারর্থ কম্পিউটার সেল ও পরীক্ষা শাখার সুনির্দিষ্ট জনবল সামাজিক দূরত্ব ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে উল্লেখিত কার্যক্রম পরিচালনায় সমীতি পরিসরে শুরু করেছে তাদের কার্যক্রম। কিন্তু সিলেট শিক্ষাবোর্ড ফলাফল প্রকাশ সংশ্লিষ্ট শাখার বাইরে সার্বিকভাবেই বোর্ডের কার্ডক্রম শুরু করেছে। এছাড়া লকডাউনে জেলা ও উপজেলা সমূহে বসবাসকারীদের যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেই রাষ্ট্রীয়বিধি অগ্রাহ্য করে ঢাকার উত্তরা থেকে (কম্পিউটার শাখায় কর্মরত প্রোগ্রামার) শাহ আলাম খান ও মিরপুর থেকে রবিউল করিম (ডাটা এন্ট্রি অপারেটর) আজ বোর্ডে এসে কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি বা সুরক্ষা নিশ্চিত না করেই নির্বিগ্নে যোগদান করছেন কাজে। এতে করে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া, উক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে করানো ভাইরাসের ব্যাপকতা বৃদ্ধির হুমকি অমুলক নয়। এব্যাপারে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল আহমদ বলেছেন, মুলত এসএসসির ফলাফল দ্রুত নিশ্চিতের জন্য রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার আলোকেই বোর্ড খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। করোনার সর্তকতা রক্ষায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রি বিতরণ করেছেন তিনি। এছাড়া মশা নিধনের ব্যবস্থা করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা সর্তকতায় নিজ নিজ উদ্যোগে নিরাপত্তা অটুট রাখবেন, এটা তাদের নিজস্ব সচেতনতা। তিনি আরো বলেন, হোম কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা তুচ্ছ করে, দিব্যি বাজার সহ যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে বোর্ডের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীকে কিন্তু বোর্ড খুলে দেয়ার ঘটনায় এখন তারা নড়েচড়ে উঠেছেন চাপা আপত্তি নিয়ে। চলমান পরিস্থিতিতে বোর্ডের আর্থিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে। ইন্টারনেট সহ গাড়ির তেল ক্রয়ে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। সার্বিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বোর্ড খুলে দিতে বাধ্য হয়েছি আমরা, করোনার সর্বোচ্চ সর্তকতা মাথায় রেখেই। লকডাউনে কর্মস্থল ত্যাগ করে ঢাকায় চলে যাওয়া অবশ্যই অপরাধ। প্রোগ্রামার শাহ আলম খান ও ডাটা এন্ট্রি অপরাটের রবিউল করিমের বিরুদ্ধে কর্মস্থল ত্যাগ ও স্ব-উদ্যোগে করোনা সুরক্ষা নিশ্চিত না করে আজ বোর্ডে যোগদানের ব্যাপারে বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহন করবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল আহমদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন