রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবাস জীবন

মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার অভিযান

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২০, ১:০৬ পিএম

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে কঠোর অভিযানে নেমেছে মালয়েশিয়া পুলিশ। অভিযান মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুই মাসের বেশি লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক কষ্টে থাকায় তিন বেলা যখন খাবারও যাদেও কষ্ট হচ্ছিল সেই সময় মালয়েশিয়া পুলিশ এমন অভিযানে বিপাকে পড়ে যায় কয়েক লাখ প্রবাসী বাংলদেশি শ্রমিক। অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে আশ্রয় নিয়েছেন বনে জঙ্গলে, খেয়ে না খেয়ে বনে কাটছে গ্রেপ্তার আতংক নিয়ে।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের আটক অভিযান দিনকে দিন বেড়েই চলছে। প্রতিদিনই দেশটির কোনো না কোনো স্থানে চলছে পুলিশি অভিযান। গ্রেপ্তার হচ্ছেন বাংলাদেশিসহ অবৈধ অভিবাসীরা। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের দেড় হাজারের বেশি বিদেশিকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ।
প্রবাসীরা বলছেন, লকডাউনের কারণে খাবারের কষ্ট করতে হয়েছে বেশি, বেশিরভাগ অবৈধ শ্রমিক বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মার্কেটে কাজ করতো। এইসব বন্ধ থাকায় বেতনও বন্ধ ছিলো। ফলে খাদ্যেও কষ্টে দিন কাটছে প্রবাসী শ্রমিকদের। কিন্তু এরই মধ্যে পুলিশের অভিযানে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
তবে করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালে ইমিগ্রেশন পুলিশের এমন অভিযানের তীব্র সমালোচনাও করছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনসহ মানবাধিকার কর্মীরা। সংকটকালীন অবৈধ প্রবাসীদের আটক না করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা। দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো অনিবন্ধিত বিদেশি কর্মীদের কোভিড -১৯ স্ক্রিনিংয়ে যেতে উৎসাহিত করার জন্য একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

এদিকে, ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স (এফএমএম) সভাপতি তান শ্রী সোহ থিয়ান লাইয়ের বরাত দিয়ে দেশটির জাতীয় দৈনিক স্টার অনলাইনে জানায়, অনিবন্ধিত বিদেশি কর্মীদের আটক হওয়ার আশঙ্কা ছাড়াই পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে এবং সরকার টু সরকার একটি চুক্তি হওয়া উচিত। যার আলোকে বিদেশিরা জরিমানা ছাড়াই নিজ দেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চলমান লকডাউনে অনিবন্ধিত কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে বসবাস করছে। যা বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম আবাসনের মান পূরণ করে না। এক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা মার্সি মালয়েশিয়ার সভাপতি দাতুক ডা. আহমদ ফয়জাল পারদৌস বলছেন, অনিবন্ধিত প্রবাসী শ্রমিকরা সরকারি স্বাস্থ্যসেবাতে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা কম। এটি এ কারণে নয় যে তারা পরীক্ষা করতে চান না, তবে তারা আটক হওয়ার ভয়ে রয়েছেন।
অবৈধ বিদেশিদের আটক অভিযানের বিরোধিতা করে আসছে তেনাগানিতার পরিচালক ও পরামর্শক জোসেফ পল ম্যালিয়ামাউভ। তিনি ষ্টার অনলাইনকে বলছেন, দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিতদের মালয়েশিয়ানদের মতোই পরীক্ষা করা উচিত। সরকারের একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠানো উচিত যে, সাধারণ ক্ষমার সময় তারা নিরাপদ থাকে এবং যদি তারা অসুস্থ বোধ করে তবে তাদের পরীক্ষা করা যেতে পারে।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সউদী আরব এবং আরব আমিরাতের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার মালয়েশিয়া। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে দেশটিতে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে। সারা পৃথিবীর মতো করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মালয়েশিয়াতেও চলছে লকডাউন। শিল্পকারখানা অফিস আদালত, হোটেল রেষ্টুরেন্টসহ বিভিন্ন এখন বন্ধ, ফলে করোনা প্রতিরোধে ঘরবন্দী হয়ে জীবন পার করছেন প্রবাসীরা। এসব ঘরবন্দী প্রবাসীরা দুই মাসের বেশি ঘরবন্দী থাকায় খাবারের কষ্টসহ নানা দুর্ভোগে দিন পার করছেন।
প্রবাসীরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস ও আর্থিক দুরবস্থায় কর্মহীন দিন কাটছে প্রবাসীদের। এর মধ্যে দেশটির সরকার ঘোষণা দিয়েছে বৈধ-অবৈধদের বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ পরীক্ষার। আর এতে করেই শংকায় পড়েছেন অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন