পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে দেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম উম্মাহর দু’টি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতর একটি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কারের প্রত্যাশায় এই ঈদ অনেক বেশি মহিমান্বিত ও আনন্দঘন। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি জাকাত ও ফিতরা আদায় শেষে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত হয়ে অনাবিল আনন্দ লাভ এই ঈদের বিশেষ সওগাত। পবিত্র কোরআন নাজিলের এই মাসে কষ্টকর রোজা পালন, তারাবির নামাজসহ অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের প্রয়াস, প্রতিটি ফরজ ও নফল ইবাদতের অতিরিক্ত ফজিলত এবং হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদরে গোনাহমাফের অনন্য সুযোগ ইত্যাদি অভিব্যঞ্জনায় রোজা এবং ঈদুল ফিতর ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও আধ্যাত্মিক সুষমায় মন্ডিত।
এবারের ঈদ এমন এক সময়ে উদযাপিত হতে যাচ্ছে, যখন সারাবিশ্ব করোনার মহামারীতে আক্রান্ত। আমাদের দেশেও এ রোগের সংক্রমণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ রোগ প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ও লকডাউন চলছে। এর মধ্যেই ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ সিয়াম সাধনা ও এবাদত-বন্দেগী করেছেন। সকলের একই কামনা এই ভয়ংকর মহামারী থেকে যেন মহান আল্লাহ আমাদের মুক্তি দেন। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আমফান উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনে ব্যাপক সহায়-সম্পদ বিনষ্ট করেছে। উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষ নিরালম্ব হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে এবার দেশের মানুষের ঈদ উৎসব আগের মতো হবে না। বলা বাহুল্য, অন্য যেকোনো আনন্দ-উৎসব ও ঈদের আনন্দ-উৎসবের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কেবল আনন্দ-উল্লাস নয়, ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহপাকের অনুগ্রহ, ক্ষমা ও সন্তুষ্টিলাভ এবং মানবকল্যাণের সুযোগ রয়েছে এর মধ্যে। কঠোর সিয়াম সাধনা, সংযম, দান-খয়রাত, পরার্থপরতা, ত্যাগ ও সার্বজনীন কল্যাণে আত্মনিবেদনের সমন্বয়ে ঈদ উৎসব অনেক বেশি বাস্তবিক শুভময়তা এবং পারলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশায় ঋদ্ধ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন: ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন, আসমানী তাকিদ। আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন হাত মিলাও হাতে। দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙ্গাইতে নিদ।’ ঈদের এই সার্বজনীন ও পারলৌকিক কল্যাণ, সাম্য-সৌহার্দ্যরে বার্তা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে ও কর্মে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হলেই ঈদের অন্তর্নিহিত আহবান সফল ও সার্থক হবে। মুসলমানদের মধ্যে ধনী-দরিদ্র, অবস্থানগত পার্থক্য ও উঁচু-নিচুর ভেদাভেদের কোনো সুযোগ নেই। ঈদের নামাজে সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয় মুসলমানেরা। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে স্বতঃস্ফূর্ত এই সমাবেশ দেখা যাবে না।
ঈদ আমাদের দেশে বরাবরই ব্যাপক আয়োজন, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল মানুষই তাদের সাধ্যানুযায়ী ঈদ-উৎসবে শরীক হয়। করোনার কারণে এবার এর ব্যত্যয় ঘটছে। প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে বিপুল সংখ্যক মানুষ শহর ও কর্মস্থল থেকে গ্রামে আপন ঠিকানায় ফেরে। এবার বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ থাকায় সে সুযোগ ছিল না বললেই চলে। তারপরও বহু মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে। একেবারে শেষ দিকে লকডাউন রক্ষায় পুলিশ কড়াকড়ি করেছে। এটা আরও আগে করলে ভালো হতো। সামাজিক মেলামেশা বৃদ্ধিতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে। এই আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদের পর গ্রাম থেকে জনস্রােত যখন শহরমুখী হবে পুলিশকে তখন সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষ করা গেছে, এতকিছুর পরও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। ঈদ পরবর্তীতে এরকম দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রুখতে হবে। আমাদের দেশে এবারের ঈদের নামাজ খোলা মাঠ বা ঈদগায়ের পরিবর্তে মসজিদে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পড়ার কথা বলা হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমাদের প্রত্যেককেই এই ব্যবস্থা মেনে নিতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশেই ঈদের জামাত করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা এবার এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঈদ পালন করতে যাচ্ছি, এ পরিস্থিতি থেকে যাতে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের নাজাত দেন এই দোয়া প্রত্যেককে করতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এবার হয়তো আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়া সম্ভব হবে না এবং এই মহাবিপদের সময় এই সামাজিকতা না পালন করাই শ্রেয়। আমারা ঘরে বসেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ পালন করব। মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদে পাশে দাঁড়ানো ইসলামের শিক্ষা। মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের শিক্ষাও তাই। মানুষের মধ্যে ইসলামের অহিংসা, ক্ষমা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা জাগরিত হোক। করোনার সঙ্কটকালে এই নীতি অবলম্বন এবং সামর্থ্যবানদের উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সকল মানবিক দুর্বিপাক, কষ্ট ও যাতনার অবসান হোক, সবার মধ্যে প্রকৃত ধর্মবোধ ও মূল্যবোধ, প্রীতি, সহানুভূতি সংহত হোক, পবিত্র ঈদ উপলক্ষে এটাই আমাদের আন্তরিক কামনা। ঈদ আনন্দময় হোক, এই প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ইনকিলাবের সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, হকার, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
আমরা এবার এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঈদ পালন করতে যাচ্ছি, এ পরিস্থিতি থেকে যাতে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের নাজাত দেন এই দোয়া প্রত্যেককে করতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন