শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আম্পানের তান্ডব : ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন

নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩২

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২০, ১২:০৭ এএম

কমতে শুরু করেছে মহাঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব। ফলে সমুদ্রবন্দরগুলোকে সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। সর্বত্র ভেসে উঠছে আম্পানের ক্ষতচিহ্ন। ধ্বংস হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি, ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, পোলট্রি ফার্ম, গরুর খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রবল জলোচ্ছ¡াসে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। গতকাল পর্যন্ত নারীশিশুসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে যশোরে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। 

যশোর থেকে মিজানুর রহমান তোতা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাÐবে দক্ষিণ-পশ্চিমে বহু ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। এখনো অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন, রাস্তায় গাছ পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবার কারণে প্রশাসনের পক্ষে বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ শুক্রবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সবখানে পুরোপুরি যোগাযোগ পুনঃস্থাপন না হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি মণিরামপুরে এক গ্রামে ৫ জন নিহতের খবরসহ ক্ষয়ক্ষতির কোন প্রকৃত চিত্র তার কাছে নেই বলে উল্লেখ করে জানান, রাস্তায় পড়া বড় বড় গাছ কেটে কেটে একেক এলাকায় ঢুকতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। সেজন্য প্রকৃত চিত্র পেতে বিলম্ব হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালক পার্থপ্রতিম সাহা বললেন, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ গোটা এলাকার কৃষির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে। দু’ একদিনের মধ্যে সব পাওয়া যাবে।
এদিকে, যশোরে আরো একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই নিয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এক যশোর জেলাতেই মোট ১২জনের প্রাণ কেড়ে নিলো। নিহতের সব ঘটনা আম্ফানের তাÐবে ঘরের উপর গাছ পড়া। গত বুধবার গভীর রাতে ও বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরে যারা নিহত হয়েছেন তারা হলেন, চৌগাছা পৌরসভার হুদো এলাকার ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী চায়না বেগম (৪৫) ও মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১৩), মণিরামপুরের পারখাজুরা গ্রামের জবেদ আলী (৫৫) ও তার ছেলে ইছা (২২),একই গ্রামের খোকন দাস (৭০) ও তার স্ত্রী বিজন দাসী (৬০) আছিয়া বেগম (৫২), শার্শা উপজেলার মালোপাড়ার সুশীল বিশ্বাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস (২৪), গোগা পশ্চিমপাড়ার শাহজাহানের স্ত্রী ময়না খাতুন (৪০) ও বাগআঁচড়া জামতলা এলাকার আব্দুল গফুর পলাশের ছেলে মুক্তার আলী (৬৫), মহিপাড়ার মিজানুর রহমা (৫৫) এবং বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট বুদোপাড়া এলাকার সাত্তার মোল্লার স্ত্রী ডলি খাতুন (৪৫)।
খুলনা : খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একাংশ নিয়ে গঠিত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২১ জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন একথা জানিয়েছেন। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে খুলনা জেলায় ৮২ হাজারটি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর ঝড়ের তাÐবে প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাত ও জোয়ারের পানির তোড়ে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ছোটো আংটিহারা বাকেরগাজীর বাড়ির পাশে শাকবাড়িয়া নদীর প্রায় ১২০ গজ বেড়িবাঁধ, আংটিহারা মজিদ গাজীর পাশে ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, জোড়শিং বাজারের পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, কপোতাক্ষ নদের চোরামোখা খেয়াঘাটের কাছে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ ও গোলখালী তসলিম মোল্লার বাড়ির পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া গ্রামের মাথায় কপোতাক্ষ নদের ৬০০ গজ বেড়িবাঁধ, কাটকাটা বাজারের শাকবাড়ীয়া নদীর ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামে কপোতাক্ষ নদের ৭০০ গজ বেড়িবাঁধ এবং কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা ও গোবরা ঘাটাখালি গ্রামে কপোতাক্ষ নদের আধা কিলোমিটার এলাকাসহ ১০টি জায়গার বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কয়রা নদীর পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ উপচে লবণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। সেখানে স্থানীয় অধিবাসিরা মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিনতাপাত করছে
নওগাঁ : জেলার আমচাষিরা জানায়, বাগানে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়া আম ৩-৪ টাকা কেজির বেশি বিক্রি হবে না।
রংপুর : রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডাল কুড়াতে গিয়ে শানাহা বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত শাহানা ওই গ্রামের ইলিয়াছ আলীর স্ত্রী। এদিকে, প্রায় ১১০০ হেক্টর জমির বোরো ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে বলে জানান রংপুর আঞ্চলিক কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী । তিনি বলেন, আম্পানে ৭০০ হেক্টর জমির সবজি ও ৪৫০ হেক্টর জমির আম গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৬৯ হেক্টর জমির ভুট্টা, ৫১ হেক্টর জমির মরিচ, ৪১ হেক্টর জমির কলা, পাঁচ হেক্টর জমির তিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান মোহাম্মদ আলী।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর ৩ হাজার ৮৬৭ হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে উৎপাদিত প্রায় ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির বোরো ধানের মধ্যে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা ধান হেলে পড়াসহ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে পৃথক দুটি স্থানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে গাছের ডাল ঘরের উপর ভেঙে পড়ে শিশুসহ দুইজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- জীবননগর উপজেলার পোস্ট অফিস পাড়ার মৃত ইউসুফ আলির স্ত্রী মোমেনা খাতুন (৮০) ও উপজেলার হাসদাহ ইউনিয়নের বৈদ্যনাথপুর গ্রামের আতাহার আলির ছেলে জুবায়ের (১৩)।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় ১৯৫০ হেক্টরের মধ্যে ১১৭২ হেক্টর জমির আম ঝরে পড়ে গেছে। পান নষ্ট হয়েছে ৬২৭ হেক্টর জমির পান। ১২১০ হেক্টর জমির সব মুগডাল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিক্রির উপযুক্ত মাঠে থাকা কলা নষ্ট হয়েছে ১৮০৪ হেক্টর জমির মধ্যে ৬৬৪ হেক্টর জমির। বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার হেক্টর জমির। সবজির ক্ষতি হয়েছে ৭৩৭৫ হেক্টর জমির মধ্যে ১৭৭৪ হেক্টর জমির।
সাতক্ষীরা : ঝড়ে ২২ হাজার ৫১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৬০ হাজার ৯১৬টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরা উপক‚লের নদ-নদীর অন্তত ২০টি পয়েন্টে ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও এলজিইডির ৮১ কিলোমিটার রাস্তা। ঝড়ে সাতক্ষীরায় ৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা ৪০ হাজার টাকার আমসহ ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকার কৃষি সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মাগুরা : মাগুরায় ঘর-বাড়ি, গাছপালা ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. আশাফুল আলম বলেন, ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান কমপক্ষে শত কোটি টাকা।
আদমদীঘি (বগুড়া) : আদমদীঘিতে ঘরবাড়ী গাছপালা চলতি ইরিবোরো ফসলসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) : আম্পানের তাÐবে বিভিন্ন পয়েন্টে কচা ও বলেশ্বর নদীর বেড়ি বাঁধ ভেঙে গেছে।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : উপজেলায় ঝড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন