ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছাসের কারণে উপক‚লীয় জেলাসহ সারাদেশে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা হয়েছে। বন্যা না হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২১ হাজার ২২৮ দশমিক ৪৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১১ হাজার ২শ’ কিলোমিটার বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে। গতকাল পর্যন্ত আম্পানের তান্ডবে দেশের ১৫ জেলায় ৮৪টি এলাকায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে হাজার হাজার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, আম্পান সরে গেলে গভীর নিম্নচাপ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশের নদীগুলোতে পানি বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেড়িবাঁধ যেগুলো রয়েছে সেগুলো মেরামতের পাশাপাশি আরো ১২ থেকে ১৫ ফুট উঁচু করা হলে পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধ ভাঙবে না। নিরাপদ হবে ফসল, গবাদিপশু ও মাছের ঘের।
এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আইলা কিংবা সিডরের পরে দেশের বাঁধ মেরামতে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। কোনো কোনো জায়গায় দু-তিন বছর লেগেছে বাঁধ মেরামত করতে এবং এই দুই-তিন বছর ধরে জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষকে কল্পনাতীত দূরবস্থায় ফেলে দিয়েছে। বর্তমানে বাঁধের উচ্চতা সমুদ্র্র তীরবর্তী অঞ্চলে ১৫ ফুট, ভেতরের দিকে ১৪ কিংবা ১২ ফুট। এগুলো যদি সবল থাকে তাহলে ১৪-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ¡াস ঠেকিয়ে দেবে।
নির্মাণের পর বছরের পর বছর ধরে বেড়িবাঁধগুলো পূর্ণাঙ্গ সংষ্কার এবং মেরামত না হওয়ায় দেশের উপক‚লীয় ২৫ জেলার কয়েক কোটি মানুষ চরম ঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছে। আম্পানের তাÐব উপক‚লীয় এলাকায় জলোচ্ছ¡াসে বেড়িবাঁধ ও দেশের অন্যত্র ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশে ১৩৯টি পোল্ডার রয়েছে এর মধ্যে ১০টি পোল্ডারের মেরামত এবং তথা উচ্চতা বাড়ানোর কাজ চললেও বাকি পোল্ডারগুলো অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। আইলা কিংবা সিডরের পরে এসব এলাকায় বাঁধ মেরামতে বড় ধরনে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মাঝে মাঝে যে সব এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষকে কল্পনাতীত দূরবস্থায় পড়ে সেই সব এলাকায় দু-তিন বছর বাঁধ মেরামত করছে বলে জানা গেছে। আবার কোন কোন এলাকায় বাঁধ সংষ্কার কাজ করা অবস্থায় ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আমিনুল হক ইনকিলাবকে বলেন, আম্পানের তাÐবে দেশের ১৫ জেলায় ৮৪টি এলাকায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। তার মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। আগামীতে আম্পানের মতো বড় ধরনের দুর্যোগ বাঁধে আঘাত করতে না পারে সে কারণে বাঁধ গুলো ১২-১৫ মিটার উচ্চতা করা হবে।
বঙ্গোপসাগরে ১৯৯৯ সালের পর প্রথম সুপার সাইক্লোন আম্পান। ঘূর্ণিঝড়টি প্রায় ১৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-৫ মাত্রায় শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছিল। সে কারণে দেশের উপকূলী জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ল²ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উঁচু উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে আঘাত হেনেছে। প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ল²ীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। অনেক স্থানের বাঁধে ফাটল ধরেছে। পায়রা নদীর জোয়ারে বরগুনা সদর উপজেলার মাইঠা এলাকার বাঁধের একটি অংশের অন্তত ২০ ফুট বিলীন হয়।
বরগুনার উপজেলা ইউএনও রাজীব আহসান ইনকিলাবকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ও রায়েন্দা এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকে সাউথখালী ইউনিয়নে। রায়েন্দা বাজার এলাকায় পানির চাপে বাঁধে ফাটল দেখা দেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান ইনকিলাবকে বলেন, বলেশ্বর নদের পানি ৭ ফুট বেড়ে রায়েন্দা বাজারের পাশে বাঁধে যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছিল। বেড়িবাঁধের দিকে নজর রয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ১৫টি স্থানের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকটি স্থান বাঁধের ফাটল দিয়ে এলাকায় পানি ঢুকছে। গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ১১ পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান বলেন, লালুয়া ইউনিয়নের ৭ কিলোমিটার বাঁধ আগেই বিলীন হয়েছে। ফলে একটু জোয়ারের চাপ বাড়লেই সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া স্টিমারঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। বালুভর্তি ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন