বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভাড়া কোনো ফ্যাক্টর নয়!

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২০, ১২:০৭ পিএম

অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে শেষ দিনে ঈদ করতে বাড়ি ফিরছে হাজার হাজার মানুষ। যেভাবেই হোক বাড়ি পৌঁছাতে হবে-এমন প্রবণতা থেকে ঘরে ফেরা মানুষগুলোর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই নেই। তাদের কাছে ভাড়া কোনো ফ্যাক্টর নয়! স্বাভাবিক সময়ে যে ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা এখন প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে সেখানে ৫-৬ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। তাতে পোয়াবারো রেন্ট-এ কার ও মাইক্রোবাস ব্যবসায়িদের।

রাত পোহালেই ঈদ। প্রতিবছর ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উৎসবটি পালিত হলেও এবার প্রাণহীন হয়ে গেছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে। তবুও সরকার নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া ফেরাতে পারেনি সাধারণ মানুষের। সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুরোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় ঈদ উদযাপনে বাড়ির পথ ধরেছে হাজারও মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ রাজধানী ছাড়তে পারবেন এমন নির্দেশনা দেওয়া পর পরই মানুষের সিদ্ধান্ত বদলে গেছে। যারা চিন্তা করেছিলেন গণপরিবহন না চলায় হয়তো এবার ঈদে আর বাড়ি যাওয়া হবে না, তারাও ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। আর সেই ব্যক্তিগত ব্যবস্থার প্রধান বাহন হয়ে উঠেছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই যাত্রীরা রওনা হচ্ছেন বাড়ির পথে।

জানা গেছে, বাস বন্ধ হওয়ার কারণে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস চালকরা এখন বাস টার্মিনালের আশেপাশে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন। এদের কেউ পুরো গাড়ি ভাড়া হওয়ার অপেক্ষায়, আবার অনেকে সিট অনুপাতেও যাত্রী তুলছেন বাসের মতো করে। একেক দূরত্বের ভাড়া একেক রকম।

ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে একটা প্রাইভেট কারে ঢাকা থেকে একটা জেলা শহরের শহরের ভাড়া ছিল ৫০০০ টাকা। কিন্তু গত পরশু দিন থেকেই সে ভাড়াটি এখন ৮-১০ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গাড়ির মালিকরা দাবি করছেন, আমরা মোটেও বেশি টাকা নিচ্ছি না। অতিরিক্ত টাকাটা ড্রাইভারকে ঈদ বোনাস হিসেবে দিতে হচ্ছে। কারণ, এরকম কঠিন সময়ে কেউ তো আর জীবনের ঝুঁকি নিতে চায় না। আবার অনেক মালিক ফিরতি পথ খালি আসতে হবে এই অজুহাতও দিচ্ছেন।
ওদিকে যাত্রীদের কাছেও এটা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। তারা দর কষাকষি করছেন ঠিকই তবে খরচা মোটামুটি মিলে গেলেই রওনা হয়ে যাচ্ছেন বাড়ির পথে। এই চাহিদাটা হুট করেই শুরু হয়েছে শুক্রবার সকাল থেকে। চলবে হয়তো আরও বেশ কয়েক দিন। বিভিন্ন গাড়ির মালিক ও চালকের সঙ্গে কথা বলেই এমন তথ্য জানা গেছে। যদিও সবার মত পুরোপুরি এক রকম নয়।

মাইক্রোবাস চালক জহির বলেন, ঈদের মৌসুম হওয়াতে হয়তো জায়গা ভেদে ১/২ হাজার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। আমাদেরও তো একটা জীবন আছে।
তিনি বলেন, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। কিন্তু যাত্রীরা ঠাসাঠাসি করে গাড়িতে উঠে। তাদেরকে তো আর কিছু বলতে পারি না। তারা যা ভালো বোঝেন, তাই করেন। ১০ জন যাওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সময় ১১-১২ জন ঠাসাঠাসি করে উঠে পড়ে। যাত্রীরা হিসাব করে তাদের খরচের, আমরা আমাদেরটা। আমি চালক হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি মানলেও তারা গা ঘেঁষে সবাই উঠে পড়ায় একটু বিপদেই আছি। কিন্তু, পেশা তো আর বন্ধ করতে পারি না।

বিআরটিএ-এর হিসাবে, ঢাকাসহ সারাদেশে এখন ব্যক্তিগত গাড়ি আছে সাড়ে তিন লাখ। তবে এসব গাড়ির কতটা ভাড়ায় চলে তার সঠিক হিসেব বিভিন্ন চালক, গাড়ির মালিক ও রেন্ট-এ-কার সার্ভিসের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায়নি। তারা জানিয়েছেন, তাদের ব্যবসায়টি স্বাধীন। গাড়ির মালিকরা নিজ দায়িত্বে গাড়ি পরিচালনা করেন। তাদের কোনও কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি নাই। তবে কয়েকজন মালিকের ধারণা, ঢাকা শহরের প্রতিটি জোনে যেমন গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি প্রভৃতি এলাকায় স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস ভাড়ায় চলে। যাত্রীদের সঙ্গে দাম দর করছেন ভাড়ায়চালিত প্রাইভেট কারের চালকরা।
আমাদের রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে রোববার (২৪ মে) ভোর থেকেই যাত্রীদের প্রচুর চাপ দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে ঘাটে আসা ঈদে ঘরমুখো মানুষ। পাটুরিয়া ঘাট পার হলেও দৌলতদিয়া ঘাটে এসে কোনো যানবাহন না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন