পড়ি আবার ঘুরি
সময় পেলেই ঘুরোঘুরির সুযোগ হাতছাড়া হয় না। ঈদের ছুটি শেষ হতে বাকি ছিল মাত্র দুই দিন। ক্লাস শুরু হলেই আবার সেই যান্ত্রিক জীবনে ফিরে যেতে হবে। এরইমধ্যে আবাসিক হলগুলোতে আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। ক্লাস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত মোটামুটি কারও ব্যস্ততা নেই। বিভাগ থেকেও বছরে দুই একটা ট্যুর ছাড়া তেমন কোন ট্যুর হয় না, বলছিলেন লোক-প্রশাসন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রুমি ও সালমা।
তাই সময়টাকে একদম নষ্ট না করে হুঠ করেই সোনারগাঁতে যাবার সিদ্ধান্ত নিল মাসুম এবং তুসিব। ঢাকার পাশাপাশি হওয়াতে তেমন কষ্ট না হওয়ারই কথা কিন্তু বৃষ্টি এবং রাস্তা হারিয়ে ফেলাতে কিছুটা হলে ও বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই গিয়ে হাজির হলাম সোনারগাঁওয়ে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত লোকশিল্প এই খানের জাদুঘরটিতে সংরক্ষিত আছে। এ শিল্পকে রক্ষায় প্রথমেই এগিয়ে আসে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তিনি এ দেশের শিল্প সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য সোনারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন। ১৯৯৮ সালের মে মাসে এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। দুর্লভ সব নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পুনরুজ্জীবিত করার উদ্দেশে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিন তলা বিশিষ্ট প্রধান বিল্ডিংয়ে রয়েছে মোট ১১টি গ্যালারি। প্রতিটি গ্যালারিতে দুর্লভ ঐতিহ্যের নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। গ্যালারিগুলো হলো-নিপুণ কাঠ খোদাই গ্যালারি, মুখোশ গ্যালারি, নৌকার মডেল গ্যালারি, আদিবাসী গ্যালারি, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়া মাটির নিদর্শন গ্যালারি, তামা, কাঁসা, পিতলের তৈজসপত্র গ্যালারি, লোকজ অলঙ্কার গ্যালারি, বাঁশ, বেত, শীল পাটি গ্যালারি ও বিশেষ প্রদর্শনী গ্যালারি এসব গ্যালারি ছাড়াও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সুউচ্চ ভাস্কর্য, বড় সরদার বাড়ি, শিল্পচার্য জয়নুল ভাস্কর্য, কারু ব্রিজ, জামদানি শিল্পগ্রামসহ ছোট বড় ৪৬টি স্পট।
জাদুঘরে প্রবেশ করতে প্রথম দালানটি পুনঃনির্মাণের জন্য সাময়িক বন্ধ রাখায় সবার ভিতরে একটু আক্ষেপ ছিল। জাদুঘর দেখা শেষ করে আমরা রওনা দিলাম পানাম সিটিতে আর টুপটাপ বৃষ্টিতো আছেই। এই নগরী গড়ে ওঠে মূলত নগরীর দু’পাশে পূর্বে মেঘনা এবং পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদী থাকাতে বাণিজ্যিক যোগাযোগের সুবিধা ছিল বলে।
পানামে ছোট-বড় বাড়ি মিলিয়ে মোট ৫০টিরও অধিক বাড়ি রয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই পরিত্যক্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় সবগুলো বাড়িতেই রয়েছে মোঘল, গ্রিক, স্থাপত্যশৈলীর সাথে দেশীয় কারিগরদের শিল্পকুশলতার অপূর্ব মিশ্রণ।
ষ সাইফুল ইসলাম সজিব
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন