শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর চলে যাওয়া অপূূরণীয় ক্ষতি

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এডভোকেট শেখ মোঃ আবদুল্লাহ আর নেই। গত শনিবার মধ্যরাতে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। পরিণত বয়সের হলেও তার এ মৃত্যু বিভিন্ন মহলে গভীর শোকের ছায়া বিস্তার করেছে। সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, আল্লাহপাকের এ কথার অন্যথা হওয়ার নয়। কেউই মৃত্যু থেকে দূরে নয়। যখন যার ডাক আসবে, তখনই তাকে এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। মৃত্যু অবধারিত। শেখ মোঃ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অকৃত্রিম ভক্ত, অনুরাগী ও সুহৃদ ছিলেন শেখ মোঃ আবদুল্লাহ। একই এলাকার অধিবাসী হওয়ায় তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি বঙ্গবন্ধুর হাতে। সেই থেকে আমৃত্যু তিনি আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবতনের পর তার রাজনৈতিক ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি। সংসদ নির্বাচনে তিনি ছিলেন শেখ হাসিনার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। এক্ষেত্রে তার দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা কিংবদন্তিতুল্য। শুধু তাই নয়, নির্বাচন পরবর্তীকালে শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার সংসদীয় প্রতিনিধি হিসাবে তিনি অত্যন্ত, সততা, নিষ্ঠা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ’৭৫ পরবর্তীতে ভয়-ভীতি-শংকা উপেক্ষা করে তিনি আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা এবং কর্মীদের চাঙ্গা রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। শেখ হাসিনার নির্বাচনী এজেন্টে ও তার আসনে তার প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালনের ফলে তিনি আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর মধ্যে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। অনেকেই তার কাছ থেকে সাহায্য, সহযোগিতা ও উপকার পেয়েছেন। তাদের কাছে তার মৃত্যু স্বজন হারানোর শামিল। শেখ মোঃ আবদুল্লাহ ছিলেন সহজ-সরল, সৎ ও সজ্জন। তার মত রাজনীতিক আমাদের দেশে ক্রমশই দুর্লভ হয়ে উঠছে।

শেখ মো: আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে সব ধর্মের মানুষের সঙ্গেই মিশেছেন, মতামত বিনিময় করেছেন এবং ধর্ম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আওয়ামী লীগের অভিমত তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রেও তার প্রিয়তা প্রত্যক্ষ করা গেছে। ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক থাকার সুবাদে ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হওয়া তার জন্য বিশেষ কিছু ছিলনা। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করে তাঁর ভূমিকা ও অবদানেরই কিছুটা স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। শেখ মোঃ আবদুল্লাহর সঙ্গে বরাবরই এদেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক এবং বিভিন্ন ইসলামী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সখ্য ও সুসম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্ক প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর আরো ঘনিষ্ট হয়। স্বধর্মের প্রতি তার অনুরাগ, আনুগত্য অজন্ম। তিনি এক ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার শিক্ষা শুরু হয় স্থানীয় গওহরডাঙ্গা মাদরাসায়। পবিত্র কোরআন হেফজের মাধ্যমে তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর একই মাদরাসার কওমী ধারায় পড়াশুনা করেন। ইসলামের প্রতি, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের প্রতি, মসজিদ ও মাদরাসার প্রতি এবং ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রতি তার শ্রদ্ধা, ভক্তি, অনুরাগ ও ভালোবাসা এই পটভূমিতেই গড়ে ওঠে, যা আজীবন অব্যাহত ছিল। সন্দেহের অবকাশ নেই, দেশের ইসলাম প্রিয় মানুষ তার মৃত্যুতে অত্যন্ত শোকাভিভূত। তারা একজন অভিভাবক, বান্ধব, শুভাকাঙ্খী এবং ইসলামের একনিষ্ঠ সেবককে হারালো।

সংগঠন হিসাবে আওয়ামী লীগ একজন বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত নেতা হারালো। আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শেখ মোঃ আবদুল্লাহ যে ভূমিকা ও অবদান রেখে গেছেন তার কোনো তুলনা নেই। দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এর আগে অনেকেই হয়েছেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও অনেকে হয়েছেন কিন্তু শেখ মোঃ আবদুল্লাহর মত সর্বজনপ্রিয়তা কেউ পায়নি। নামকাওয়াস্তে দলের পদাধিকারী ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হওয়া এক কথা আর সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করা ভিন্ন কথা। এই ভিন্ন কথারই বাস্তবায়ন আমরা দেখি শেখ মোঃ আবদুল্লাহর কর্মকান্ডে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্মের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস, অনুরাগ ও নিষ্ঠার কথা আমরা সকলেই জানি। তার ধর্মবোধ, ধর্মচর্চা, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের প্রতি শ্রদ্ধা তুলনাহীন। ইসলামী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার সম্পর্কও হৃদত্যপূর্ণ। এর ফায়দা আওয়ামী লীগ দল ও সরকার হিসাবে পাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া বিস্তারের ক্ষেত্রে শেখ মোঃ আবদুল্লাহর ভূমিকার কথাও স্বীকার্য। তার কথা ও কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি ইসলামপ্রিয় মানুষের আপনজনে পরিণত হয়েছিলেন। এরকম একজন বিশ্বাসী, সৎ, ধর্মপ্রাণ কর্মীষ্ঠ মানুষেরই ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হওয়া উচিৎ। পরবর্তীতে এই পদে কাউকে মনোনিত করার জন্য এসব দিকে খেয়াল রাখা হবে বলে আমরা আশা করি। পরিশেষে, আমরা শেখ মোঃ আবদুল্লাহর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং তার পরিবার-পরিজনের প্রতি জানাই আন্তরিক সমবেদনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Moniruzzaman Milton ১৫ জুন, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
আমি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ১৫ জুন, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারি ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ। তিনি ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধরণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগদান করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৫ জুন, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
আবদুল্লাহ ছাত্রজীবনে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং সে সময় যুবলীগে যোগদান করে গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
Total Reply(0)
হৃদয়ের ভালোবাসা ১৫ জুন, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
তিনি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধরণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগদান করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার সবকটি সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা ও কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করেন।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ১৫ জুন, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের সাথে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলসমূহের সম্পর্কন্নোয়ন এবং কওমি মাদরাসার সনদ স্বীকৃতির পেছনে ভূমিকা পালন করেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন