বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ইন্দুরকানীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক পল্লী চিকিৎসক মৃত্যুতে

শেষ বিদায় জানালেন পুলিশ

ইন্দুরকানী(পিরোজপুর) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২০, ২:৫৫ পিএম

ইন্দুরকানী উপজেলায় সদরে গত বৃহস্পতিবার করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান নির্মল চন্দ্র দাস (৬১) নামের একজন পল্লী চিকিৎসক। অজানা কারণে তার ইন্দুরকানী বাজারের বাড়িটি কে লকডাউন, বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা বা আইসোলেশনের ব্যবস্থা কিছুই করা হয় না। ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নির্মলের বড় ভাই সুনীল চন্দ্র দাস (৬৬)। তিনি ও একজন পল্লী চিকিৎসক। মঙ্গলবার তার শ্বাস কাঁশ শুরু হয়। তাই তাকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে ভর্তি দেখিয়ে তাকে পাঠানো হয় আম্বিয়া হাসপাতালে আইসোলেশনে।

সুনীল চন্দ্র যখন আম্বিয়া হাসপাতালে যান তখন তিনি নিজেই হেঁটে দোতলায় ওঠেন। কিন্তু ঐ হাসপাতালে কোনো লোকজন না দেখে তার পরিবারের লোকজন সিভিল সার্জন সাহেব কে ফোনে জানালে একজন নার্স এসে সুনীলকে অক্সিজেন দেয়ার সাথে সাথে তিনি মারা যান। পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
সালমা রহমান হ্যাপী জানান, সুনীলের স্ত্রী ও ভাবী মরদেহ গাড়িতে তুলতে কাউকে না পেয়ে আমাকে ফোন করে সাহায্য চায়। তারা আমাকে ফোন করে বলেন, দেখেন টাকা দিয়েও যদি হয় কাউকে একটু পাঠিয়ে দিন। কিন্তু কাউকে পেলাম না। আমারা প্রশাসনকে জানালাম। তারা আশ্বাস দিলেন। কিন্তু কেউ যাচ্ছে না দেখলে ওই দুই মহিলা আর ভাইর ছেলে মরদেহকে টেনে টেনে দোতলা থেকে নামিয়েএনে ড্রাইভের সহায়তায় এম্বুলেন্সে উঠিয়ে ইন্দুরকানী নিয়ে যায়।সুনীলের মরদেহ ইন্দুরকানীতে যখন পৌঁছায় তখন রাত ১ টা। তার শেষকৃত্য করার মত তখন কেউ নেই।
এবার এম্বুলেন্স থেকে চিতায় নেয়ার মত কাউকে আর পাওয়া গেল না। খবর পেয়ে ছুটে আসলেন ইন্দুরকানী থানার ওসি হাবিবুর রহমান। সাথে পুলিশের সাহসী একটি দল।
পিরোজপুরের মানবিক এসপি হায়াতুল ইসলাম খান সাহেবের নির্দেশে ইন্দুরকানী থানার ওসি হাবিবুর রহমান সাহেব সুনীল বাবুকে সমাধিস্থ করার ব্যবস্থা করেন। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে। সেউতিবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়ির শ্বশানে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোন আপনজনের দেখা নেই। আপনজন বলতে মৃতের শোকাহত স্ত্রীসহ দু একজন নারী ও সদ্য প্রয়াত ভাইয়ের ছোট ছেলে। তারাও বাগানের মধ্যে দূরে দাড়িয়ে। এরই মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে ওসির নেতৃত্বে এসআই ফরিদ, শহিদুল, মনমথ, এএসআই শাহাদত, হাসপাতালের গাড়ী চালক ইকরামুলসহ পুলিশ সদস্যরা মাটি খোঁড়ার আয়োজন করেন। কিন্তু কোদাল খোন্তা কই পাবেন। ওসি নিজে বেশ কয়েকটি ঘরের দরজায় কড়া নারেন। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। অনেক কষ্টে মাটি খোঁড়ার সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন তারা। এরপরে পুলিশ সদস্য ও গাড়ি চালক মিলে মাটি খুঁড়ে সমাধি তৈরী করেন। তারাই সমাধিস্থ করেন এই পল্লী চিকিৎসককে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে
তাকে শেষ বিদায় জানান পুলিশ সদস্যরা।
ইন্দুরকানী থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, একটা সময় রাত বিরাতে অসুস্থ রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে
তুলেছেন দুই ভাই সুনীল এবং নির্মল। ইন্দুরকানীর পল্লী চিকিৎসায় তাদের পরিবারের অবদান অনেক। অর্ন্তন্ত দীর্ঘ বছর ধরে তারা এই এলাকার সাধারনে রোগীদের সেবা দিয়েছেন।
কিন্তু সেই সুনীল ডাক্তারের শেষ বিদায়ের সময় তার পরিবারের ও আত্মীয়স্বজন কাউকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকদের অনেক ডেকেও কাউকে পাইনি। এমনকি একটি মাটি খোঁড়ার কোদাল চেয়েও পাই নাই। সারারাত ভিজে সুনিল চন্দ্রকে এম্বুলেন্স থেকে সমাধিস্থ করা পর্যন্ত সব কাজ আমরা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন