নেপালের মুসলিম সম্প্রদায়, যারা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ, বহু শতাব্দী ধরে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। নেপালিরা ধর্মীয় সহনশীলতার ইতিহাস নিয়ে গর্ব করে, এমনকি এমন অঞ্চলেও যেখানে ধর্মবিশ্বাস প্রায়শই রক্তাক্ত পরিণতি ঘটিয়েছে। তবে ভারতের হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থীরা এতে পরিবর্তন আনার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা এবং তাদের ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়া জনপ্রিয় ভারতীয় নিউজ চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নেপালের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য করোনাভাইরাসকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। নেপালের কিছু হলুদ সাংবাদিকের মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১৬ এপ্রিল দক্ষিণ নেপালের জনকপুরের রাস্তায় অল্প কয়েক টাকার নোট পড়ে থাকতে দেখা যায়। এক ব্যক্তি একটি নোট তুলে নেয় এবং এক দোকানীকে বলে যে, নোটগুলোতে করোনাভাইরাস লেগে থাকতে পারে। ভাইরাল হওয়া ইসলামবিদ্বেষী পোস্টগুলিতে দাবি করা হয় যে, দু’জন মুসলিম মহিলা থুথু দিয়ে নোটগুলো ছড়িয়ে দিয়েছে এবং মহিলারা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে নোটের ওপর থুতু ছিটিয়ে সেগুলি ফেলে রেখে যায়। পরে একটি সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায় যে, নোটগুলো তাদের পকেট থেকে পড়ে গিয়েছিল।
এদিকে, পুলিশ মহিলাদ্বয়ের করোনা পরীক্ষা করলে প্রাথমিকভাবে ফলাফলে একজন মহিলার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ ঘটনা আরো ঘৃণ্য পোস্টের জন্ম দিয়েছে। তবে পরে প্রমাণিত হয়েছিল যে, পরীক্ষাটি ভুল ছিল এবং পরবর্তী পরীক্ষাতে নেগেটিভ আসে। বাস্তবে মহিলারা সবেমাত্র ব্যাংক থেকে ফিরছিলেন এবং দুর্ঘটনাক্রমে নোটগুলো পড়ে পায়। পুলিশ জনসাধারণকে আরো গুজব ছড়ানোর অনুরোধ করে। তবে এই বিশেষ ঘটনাটি হঠৎ শুরু হয়নি। এর ভিত্তিপ্রস্তর সুচিন্তিতভাবেই স্থাপন করা হয়েছে। এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে গত ১০ এপ্রিল ভারতের কট্টরপন্থী মিডিয়া বিশেষত হিন্দি নিউজ চ্যানেলগুলো সংবাদ প্রচার করে যে, পাকিস্তান করোনা আক্রান্ত মুসলিম পুরুষদের নেপাল হয়ে ভারতে প্রেরণ করেছে। তারা একটি নতুন শব্দ তৈরি করে, ‘করোনা-জিহাদ’।
এসব সংবাদ বিহার রাজ্য থেকে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত একটি অজ্ঞাত সূত্রের এবং অনেকাংশে যাচাইবিহীন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। তাতে আরো দাবি করা হয় যে, নেপালের মুসলিম রাজনীতিবিদ জালিম মিয়া উক্ত ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিলেন এবং সেই পুরুষ দলটি জ্বর কমাতে ও শনাক্তকরণ ঠেকাতে প্যারাসিটামল ব্যবহার করেছিল। মিয়া হতাশার সাথে ব্যাখ্যা করেন যে, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি এবং নেপালের কেন্দ্রীয় সরকার তার বক্তব্যকে সমর্থন করে। এ অভিযোগটি নকল ভিডিসহ পূর্ববর্তী অভিযোগগুলোরই প্রতিধ্বনি।
যদিও বেশিরভাগ নেপালিই তাদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন এবং মুসলমানদের ওপর কোনো শারীরিক নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়নি, তারপরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেপালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থীরা যেমন নেপালের ধর্মীয় সহনশীলতার অভ্যন্তরে সূক্ষ¥ভাবে প্রবেশ করেছে, তেমনি সাথে এর ইসলাম বিদ্বেষও। নেপালে তার বিরাট প্রতিবেশী হিন্দু জাতীয়তাবাদকে গভীরভাবে রোপন করে দেবে। তবে, এমনকি মহামারীর মধ্যেও নেপালিরা অতীতের মতো মুসলিম বিদ্বেষকে প্রত্যাখ্যান করার পথ বেছে নিতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন