শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অ্যান্টিবডি টেস্টের নীতিমালা চূড়ান্ত

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এই নীতিমালা অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন সরকারের অনুমোদন পেলেই অ্যান্টিবডি কিট ব্যবহার শুরু করা যাবে। অধিদফতরের তথ্যমতে, অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট কোভিড-১৯ শনাক্তের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য এই কিট ব্যবহার করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে এখন অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই টেস্ট করার সুযোগ পাননি। যদি সার্ভেইলেন্স হিসেবে র‌্যাপিড কিটের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা যায়, তাহলে কারা আক্রান্ত হয়েছিল তা চিহ্নিত করা যাবে। তাছাড়া রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাপও করা যাবে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে ওষুধ, ইনভেস্টিগেশনাল ড্রাগ, ভ্যাকসিন এবং মেডিকেল ডিভাইস মূল্যায়নের জন্য গত ৪ জুন ১৪ সদস্যের একটি কমিটি করে। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসএমএমইউ, আইসিডিডিআরবি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করে অধিদফতর।
জানা গেছে, র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট ব্যবহার নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর সেটি অনুমোদনের জন্য গত ২৪ জুন অধিদফতর থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে ওষুধ, ইনভেস্টিগেশনাল ড্রাগ, ভ্যাকসিন এবং মেডিকেল ডিভাইস মূল্যায়নের জন্য গঠিত কমিটি গত ২১ জুন ও ২৩ জুন দুটি বৈঠক করে ইউএসএফডিএ-এর আমব্রেলা গাইডলাইন অন সেরোলজিক্যাল টেস্ট, ডবিøউএইচও গাইডলাইন, আন্তর্জাতিক ও স্ট্যান্ডার্ডস গাইডলাইনের আলোকে কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট (র‌্যাপিড ও ল্যাবরেটরি এলিসা মেথড) বিষয়ে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। এই নীতিমালা অনুযায়ী অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও আমদানির জন্য অনাপত্তি সনদ দেয়া হবে।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, সার্স কোভ-২ অ্যান্টিবডি (আইজিজি এবং আইজিএম) টেস্ট কিটসমূহ কোভিড-১৯ ডায়গনোসিসের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে সেরো সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপিতে এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব কিট পয়েন্ট অব কেয়ারে ব্যবহার করা যাবে না। অপব্যবহার রোধে শুধু ল্যাবরেটরিতে এই কিট ব্যবহারের অনুমতি দেয়া যাবে। কিটের মোড়কে লেখা থাকতে হবে- দিস ইজ নট এ ডায়াগনস্টিক কিট, দিস কিট উইল বি ইউজড অনলি ফর ডিটেক্টিং অ্যান্টিবডি, নট ইন অ্যাকিউট স্টেজ।
নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক ও স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি কিটের কম্বাইন্ড আইজিএম এবং আইজিজি’র ন্যূনতম সেনসিটিভিটি ৯০ শতাংশ ও স্পেসিফিসিটি ৯৫ শতাংশ হতে হবে। এলিসা মেথড এর ক্ষেত্রে র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের মতোই সেনসিটিভিটি ও স্পেসিফিসিটি নির্ধারিত হবে।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, সার্স কোভ-২ অ্যান্টিবডি (আইজিজি এবং আইজিএম) টেস্ট কিটসমূহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়/স্বাস্থ্য অধিদফতর নীতিগতভাবে সেরো সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপিতে ব্যবহারের সিদ্ধান্তের পর অধিদফতর অনাপত্তি সনদ প্রদান করা হবে। এই কিট অ্যাকিউট স্টেজ এ ডায়গনোসিসে ব্যবহার করা যাবে না।
অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও কমিটির সদস্য সচিব মো. সালাউদ্দিন বলেছেন, আমরা এই কিট ব্যবহারের নীতিমালা করেছি সার্ভেইলেন্সের জন্য। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠার পর তার রক্তে ইমিউনিটি তৈরি হল কিনা তা অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যাবে। অ্যান্টিবডি থাকলে তিনি প্লাজমা দিতে পারবেন। এই টেস্টের মাধ্যমে কারা প্লাজমা দিতে পারবেন তা নির্ধারণ করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস একটি র‌্যাপিড টেস্টিং কিট তৈরি করলেও মানোত্তীর্ণ হয়নি বিধায় তাদের অনুমতি দেয়া যায়নি। দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই কিট আমদানির অনুমতি চেয়েছে। কী কী শর্ত পূরণ করতে পারলে কিট ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া যাবে, তা ঠিক করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি বৈঠক করে একটা নীতিমালা চ‚ড়ান্ত করেছে।
অধিদফতরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেছেন, র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনুমোদিত ফাইল আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, এসব বিষয়ে আমাদের একটি জাতীয় কমিটি আছে। তারা এ বিষয়ে মতামত দিবেন। তাদের মতামত পেলে আমরা চিন্তাভাবনা করব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. এম এ খান বলেন, এই নীতিমালা দুটি ধরনের করেছে। একটি হচ্ছে র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি আরেকটি টাইটেল দেখার জন্য। কোনোটাই ডায়গনোসিস না। কোভিড-১৯ শনাক্তের জন্য একমাত্র হচ্ছে পিসিআর টেস্ট। র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট করে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা যাবে না।
ডা. এম এ খান বলেন, আমাদের দেশ যেহেতু সংক্রমণের মাত্রা বেড়েছে, অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে কোভিড ১৯ এর মৃদু উপসর্গ নিয়ে যারা বাড়িতে ছিলেন এবং যারা পিসিআর টেস্ট করে নাই তাদের সংক্রমণ হয়েছিল কিনা সেটি জানার জন্য র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট ভালো। আবার এটি প্লাজমা থেরাপির ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের অ্যান্টিবডি কী পরিমাণ বা আদৌ আছে কিনা এটি বুঝার জন্য কম খরচে র‌্যাপিড এন্টিবডি টেস্ট করা যেতে পারে। দেরিতে হলেও র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু হচ্ছে এটা ভালো উদ্যোগ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক বলেছেন, অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরুর করার জন্য আগে থেকেই বলে এসেছি। এটি অনেকে আগেই শুরু করা দরকার ছিল। আমরা কোভিড ১৯ ম্যানেজমেন্টে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেছি বা নিতে পারিনি। এখন নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে, আশা করি সরকার এটি তাড়াতাড়ি অনুমোদন দেবে। ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, এটি শুধু অ্যান্টিবডি টেস্টের জন্য না, এটার স্পেসিফিসিটি ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ সেনসিটিভিটি ১০০ শতাংশ হয় তাহলে করোনার স্ক্রিনিং হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যান্টিবডি টেস্ট অ্যামেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন, স্পেন, জার্মানি, বেলজিয়াম, জাপান ও ভারতে ব্যবহার করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন