শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হুমকিতে জীবন-জনস্বাস্থ্য

চট্টগ্রামে ওষুধ সুরক্ষা সামগ্রীতে ভেজাল : সিন্ডিকেটের কারসাজি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ কিউ এম সিরাজুল সিরাজুল ইসলাম রোগীকে ভিটামিন ‘সি’ ছাড়াও কিছু ওষুধ লিখে দেন। ব্যবস্থাপত্রে নামকরা একটি কোম্পানির ওষুধ লেখা হলেও ফার্মেসি থেকে অখ্যাত কিছু কোম্পানির নিম্নমানের ওষুধ ধরিয়ে দেয়া হয়। সরবরাহ সঙ্কট এমন অজুহাতে ভেজাল এবং মানহীন ওষুধ বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা দুর্যোগে ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি চলছে। 

আগে এসব ওষুধ গ্রামের ফার্মেসিতে বিক্রি হতো। এখন মহানগরীর বড় বড় ফার্মেসিতেও ভেজাল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। দামও নেওয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। করোনায় চারিদিকে মৃত্যুর ভয়াল বিভীষিকায়ও ভেজালকারী আর মজুতদারদের মানবিক চেতনা জাগ্রত হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আর তা না হলে ভেজাল ওষুধেই মানুষের প্রাণ যাবে, হুমকিতে পড়বে জনস্বাস্থ্য।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতিতে ভেজাল, নকল, মানহীন আর মেয়াদোর্ত্তীণ ওষুধের ছড়াছড়ি চলছে। দামি এবং জীবন রক্ষাকারি ওষুধের নকল করা হচ্ছে। বাজারে সরবরাহ সঙ্কট দেখিয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ওষুধ। ফার্মেসি থেকে ফার্মেসি ঘুরেও মিলছে না অতিজরুরি ওষুধ। তবে কয়েকগুণ বেশি দাম দিলেই এসব ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। ওষুধের নজিরবিহীন এই মূল্য কারসাজি, কৃত্রিম সঙ্কট আর ভেজালের কারবারে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা দিশেহারা। সাধারণ সর্দি জ¦রের ওষুধও মিলছে না সহজে। এতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় সাধারণ মানুষ। এই সময়ে জরুরি স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রীতেও ভেজালে সয়লাব।
র‌্যাব, পুলিশ, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানেও থামছে না ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য। প্রতিদিনই অভিযানে ধরা পড়ছে ভেজাল, আনরেজিস্টার্ড, আমদানি নিষিদ্ধ ও মানহীন ওষুধ। ওষুধের জন্য চলছে হাহাকার। ভেজালের ভিড়ে দিশেহারা মানুষ যা পাচ্ছে তা-ই কিনে নিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে। মহামারীর শুরুতেই ওষুধ ও সুরক্ষাসামগ্রীর কৃত্রিম সঙ্কট শুরু হয়। বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় এসব জরুরি সামগ্রী। শুরু হয় প্রশাসনের অভিযান। অভিযানের প্রথমদিনেই দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার হাজারি গলির ২৯টি ফার্মেসিতে চরম অনিয়ম পাওয়া যায়। ২৯টি মামলায় আদায় করা হয় ১১ লাখ টাকা জরিমানা। জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। অভিযানে কিছু ওষুধ সর্বোচ্চ বিশ থেকে দশগুণ বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। বড় বড় ফার্মেসিতে পাওয়া যায় নকল ওষুধ, সুরক্ষাসামগ্রী। জীবন রক্ষাকারি ওষুধের মতো অক্সিজেন নিয়েও চলছে বিপজ্জনক কারবার। সঙ্কটাপন্ন রোগীর জন্য বিক্রি হচ্ছে ক্ষতিকর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। সিলিন্ডারে লাভ করা হচ্ছে ২৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
অভিযানে কিছু জরিমানা আর ওষুধ জব্দ করেও ভেজালের কারবার, অগ্নিমুল্য কমানো যাচ্ছে না। অভিযানের পর একই ফার্মেসি আবার আগের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। র‌্যাব পুলিশের অভিযানে কয়েকজন ফার্মেসি মালিককে ধরে কারাগারে পাঠানো হয়। তারপরও ওষুধের দামে নৈরাজ্য থামেনি। ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, এমনিইতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তার উপর ওষুধের দাম এবং মান নিয়ে নৈরাজ্য দুর্ভাগ্যজনক। ওষুধ প্রশাসনের দূর্বলতায় ভেজাল ওষুধের বিস্তার ঘটছে। ওষুধের নামে মানুষ বিষ কিনে খাচ্ছে। তিনি লোক দেখানো অভিযান বাদ দিয়ে ভেজালকারী ও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনা বিভাগের জয়েন্ট ফোকাল পারসন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ভেজাল ও মানহীন ওষুধের বিস্তার বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এসব ওষুধ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। করোনা প্রতিরোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের ওষুধ সেবনের কথা বলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে প্রভাবিত হয়ে অনেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন, মজুত করছেন যা কোনভাবেই উচিত না। এতে ভেজাল ওষুধের সরবরাহও বেড়ে গেছে। করোনা আক্রান্ত হলে কিংবা উপসর্গ দেখা গেলেই শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন