মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে শিশুসহ বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। রাখাইনে বৈষম্যহীন বিমান হামলা চালানো হয়েছে। একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্তের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এ বিষয়ে বুধবার নতুন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি। এতে বলা হয়েছে, মার্চ ও এপ্রিলে চীন রাজ্যে বেশ কিছু গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বোমা হামলা করেছে এমন নতুন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে তারা। এসব হামলায় মারা গেছেন এক ডজনেরও বেশি মানুষ। অ্যামনেস্টিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ১৪ ও ১৫ই মার্চ পালেত্ব টাউনশিপে বিমান হামলায় মারা গেছেন তার এক আঙ্কেল, ভাই ও ওই ভাইয়ের ১৬ বছর বয়সী এক বন্ধু। একই গ্রামের আরেকটি পরিবারের দু’ব্যক্তি বলেছেন, বোমা হামলায় সাত বছর বয়সী একটি বালক সহ মারা গেছেন ৯ জন।
নিহত বালকটির পিতা অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। পালেত্ব এলাকায় ৭ই এপ্রিল আরেক দফা বিমান হামলা করা হয়। এতে সাত জন নিহত ও আট জন আহত হন। একজন কৃষক এমন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
এসব বৈষম্যহীন হামলায় যেহেতু বেসামরিক লোকজন মারা গেছেন তাই একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে। উল্লেখ্য, আরাকান আর্মি রাখাইনের বৌদ্ধদের জন্য অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।
এই রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলিম রোহিঙ্গা। এ রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে চিন রাজ্যের, যার বেশির ভাগ মানুষ খ্রিস্টান। গত বছর জানুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়। মিয়ানমার সরকার তাদেরকে সরকারিভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার পর মার্চে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।
এসব অস্থিরতার কারণে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এসব সংঘর্ষ যেখানে হচ্ছে তার বেশির ভাগ এলাকায় এক বছরের বেশি সময় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলের পরিচালক নিকোলাস বেকুইলিন বলেছেন, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে লোকজনকে যখন মিয়ানমার সরকার বাড়িঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে, তখন রাখাইন ও চিন রাজ্যে তার সেনাবাহিনী বেসামরিক লোকজনের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নির্বিচারে হত্যা করছে বেসামরিক লোকজনকে। যাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। তাই মিয়ানমারের এই পরিস্থিতিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) বিচারের জন্য পাঠাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বেকুইলিন। তিনি বলেছেন, বিমান হামলা ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া নতুন হতে পারে। কিন্তু অব্যাহতভাবে বেসামরিক জনজীবনের কোনো তোয়াক্কা করছে না সেনাবাহিনী। আইসিসি এর আগে তাদেরকে যে নির্দেশনা দিয়েছে তারা তা লঙ্ঘন করছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া উচিত নিরাপত্তা পরিষদের। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি মিয়ানমার সরকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন