স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে বিরুদ্ধ মত প্রকাশ রুদ্ধ বলে দাবী করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলছে, বিরুদ্ধ মত প্রকাশের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার বাক স্বাধীনতা খর্ব করতে খড়গহস্ত। হামলা ও হুমকির মুখে পড়া বøগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়ার বদলে তাদের দায়ী করে বাংলাদেশ সরকার উল্টো অপরাধীদের মদদ জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করছে অ্যামনেস্টি।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,ভয় আর দমন-পীড়নের ফাঁদে বাংলাদেশে বিরুদ্ধ মত’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনের মূল সুর হচ্ছে, জঙ্গিদের হামলা আর হুমকির ভয়ে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ বাংলাদেশে কমে এসেছে। সরকার তাদের সুরক্ষা দেওয়ার বদলে উল্টো নানা কৌশল ও আইনের বেড়াজালে বাক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করে চলেছে। সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের হামলা ও হুমকি এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নে বাংলাদেশে অসা¤প্রদায়িক রব এখন নীরব। এই দুই মিলিয়ে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন অনেক সঙ্কুচিত বলে উপসংহার টেনেছেন অ্যামনেস্টির বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক ওলফ বেøামকভিস্ট।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইস্ট লন্ডনের একটি হোটেলে এই প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে অ্যামনেস্টির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বøগার সিনথিয়া আরেফিনও ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হলেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে এক ধরনের স্বাধীনতা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। তারা বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হত্যকান্ড ঘটিয়েছে।
২০১৬ সালে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দীন সামাদ হত্যাকান্ডের পর বøগারদের লেখা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরূপ মন্তব্যের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
অ্যামনেস্টির কর্মকর্তা বেøামকভিস্ট বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গণমাধ্যমে তার সমালোচনা ঠেকাতে নানা হস্তক্ষেপের পাশাপাশি কালাকানুনও ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশ সরকার সাংবাদিকতার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছে যেন এটা একটা অপরাধ।
তাদের জেলে পুরছে, হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে, তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করছে। বিরুদ্ধ মত দমনে যা যা করা দরকার, তার সবই সরকার করছে।”এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ‘সীমা’র বাইরে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের কাউকে নিয়ে কোনো সমালোচনায় সাহসী হচ্ছেন না বলে অ্যামনেস্টির দাবি।
এর উদাহরণ হিসেবে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ৮৩টি মামলার কথা উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি, যদিও এই মামলাগুলো কী অভিযোগে প্রতিবেদনে তার উলেখ করা হয়নি।
মাহফুজ আনাম গত বছর এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন যে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় কোনো সূত্রের উলেখ না করে তার সংবাদপত্রে ডিজিএফআইর সরবরাহ করা ‘শেখ হাসিনার দুর্নীতি’র খবর প্রকাশ ভুল ছিল। তার স্বীকারোক্তির পর আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাগুলো করেন।
শফিক রেহমানকে বন্দি করার বিষয়টিও উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি, যিনি শেখ হাসিনাপুত্র জয়কে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
অ্যামনেস্টি বলছে, বাংলাদেশ সরকার এখনও পুরনো ঔপনিবেশিক আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে সাংবাদিকদের উপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। সমালোচনা বন্ধ করতে বিতর্কিত তথ্য প্রযুক্তি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগেও উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
গত কয়েক বছরে এই ধরনের হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলোতে মাত্র একটির বিচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেটি হল বøগার আহমেদ রাজীব হায়দারের বিচার, যেখানে আনসারুল্লাাহ বাংলা টিমের আটজনের সাজা হয়েছে। জঙ্গি হামলা কিংবা হুমকির মুখে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চেয়েও না পাওয়ার কথা অ্যামনেস্টিকে বলেছেন বøগাররা, যাদের কেউ কেউ নিরাপত্তার স্বার্থে দেশ ছাড়ার কথাও জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয় ,বহুবার হুমকি পাওয়া এক বøগার অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে, নিজের নিরাপত্তা চেয়ে আমি অনেকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্ত হয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে কোনো সহায়তা করেনি।
বেøামকভিস্ট বলেন, “বাংলাদেশে এই দমন-পীড়ন অবশ্যই বন্ধ হতে হবে।” প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যারা হুমকির সম্মুখীন, তাদের নিরাপত্তা বিধানের দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। এরপর নিবর্তনমূলক আইনগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছে তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন