উদ্যোক্তা হতে বিবিএ
নিজের পায়ে তো সবাই দাঁড়ায়। -তবে বিজনেস পলিসি লব্ধ একজন সফল বিজনেস ম্যানের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা একটু আলাদাই বটে।
হ্যাঁ ব্যবসায় শিক্ষার কথা বলছি। ব্যবসায় শিক্ষা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। আজকের এই প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে বাজার অর্থনীতির প্রেক্ষাপট আলোচনা করলেই আমাদের বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ভূমিকা আমরা বুঝতে পারব। যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দক্ষতার সঙ্গে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাপনা নীতি ও কলাকৌশলের জ্ঞান অর্জন ব্যবসায় শিক্ষা শাখার মূল বিষয় হলেও ব্যবসায় শিক্ষার পরিধি কিন্তু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। এর বিস্তার আরও ব্যাপক। এই শিক্ষা একদিকে যেমন সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, কাক্সিক্ষত খাতে বিনিয়োগ এবং অর্জিত আয়ের যথাযোগ্য ব্যবহারের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে, ঠিক তেমনই এ শিক্ষা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মধ্যমে দেশের বেকারত্বের হার কমাতে সাহায্য করে।
মূলত ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশে ব্যবসায় শিক্ষার সূচনা। তবে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায় শিক্ষার পথ সুগম হয়েছিল। সেই থেকে আজ অবধি এই শাখার পরিধি ক্রমাগত বেড়ে চলছে। সম্প্রতি আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যবসায় প্রশাসন শাখার বিবিএ (সম্মান) কোর্সে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিবিএ (সম্মান) কোর্সে শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে। সেই সাথে বাড়ছে অভিভাবকদের কাছে এর গ্রহণ যোগ্যতাও।
এই বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখেন একজন সফল উদ্যোক্তা হবার, তাদের চোখে বাসা বাঁধে এক সম্ভাবনাময় আলো। আর সেই আলোই তাদের ধীরে ধীরে পৌঁছে দেয় উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের লক্ষ্যে, পরিচয় করিয়ে দেয় উদ্যোক্তাদের পৃথিবীর সাথে, গড়ে তোলে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। কেন পড়ব বিবিএ অথবা বিবিএ কোর্সের উপকারিতাই বা কি...? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণে পাওয়া যায় সম্ভাবনাময় নানা তথ্য।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব রায়হান তার বক্তব্যে বলেন, “ছোট থেকেই আমি স্বাধীন থাকতে পছন্দ করতাম। তাই ছোট থেকেই মনে মনে একজন সফল উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন নিজের মাঝে লালন করে আসছি। আমি কারো অধীনে চাকরি করেতে চাই না, বরং চাই নিজেই ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ করে নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে। কেননা আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সফল উদ্যোক্তারাই বেকারত্বের হার অনেকটা কমিয়ে আনতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
ব্যবসায় প্রতিটি পদক্ষেপেই কিছু ঝুঁকি আপনাকে উঁকি দিবে। লাভের পাশাপাশি এখানে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে ভয় নেই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এই ঝুঁকির হাড় কমিয়ে ব্যবসাকে সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছে দেয়াই ব্যবসায় শিক্ষার মূল মন্ত্র।
এ বিষয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী এসএখানের মতে, “অনেকে না বুঝে ব্যবসায় শুরু করার পর পথ হারিয়ে ফেলেন, বুঝে উঠতে পারেন না কীভাবে এগোতে হবে। এটি মূলত হয়ে থাকে ব্যবস্থাপনার ত্রুটির জন্য। বিবিএ কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ স্থাপনের দক্ষতা ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হতে নিজেকে সাহায্য করে। তাই আমি অধ্যয়ন শেষে নিজেকে একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করতে চাই।”
তবে ব্যাংকিং, মার্কেটিং সেক্টরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশাতেও পিছিয়ে নেই ব্যবসায় শিক্ষা শাখা। বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে “ব্যবসায় শিক্ষা” শাখা।
পরিশেষে বলা যায়, বিবিএ (সম্মান) কোর্সে শিক্ষার্থীরা ব্যবসা সম্পর্কিত কৌশলগত দিক ও জ্ঞান, দক্ষতা, প্রয়োগ ক্ষমতা, পর্যবেক্ষণ শক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অধিক পারদর্শিতা অর্জন করে থাকে। যা তাদেরকে তরুণ উদ্যোক্তা এবং আত্মনির্ভরশীল হতে উদ্বুদ্ধ ও মূল মন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
ষ তাজবিদুল ইসলাম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন