রবিউল কমল
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গমন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বা এইচএসসি পাস করার পর বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখে অনেক শিক্ষার্থী। আর দিনদিন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশি দূতাবাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের লম্বা লাইনই বলে দেয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আগ্রহের কমতি নেই। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইংরেজি ভাষা জানাটা খুব জরুরি। আর এই জন্য করতে হবে আইএলটিএস।
ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম বা আইইএলটিএস সারা পৃথিবীতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা পরীক্ষার একটি আন্তর্জাতিক মাপকাঠি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ হিসেবে আইইএলটিএস স্কোরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। রবষঃং.নৎরঃরংযপড়ঁহপরষ.ড়ৎম ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার জন্য নাম নিবন্ধন করতে হয়। আইইএলটিএস দু ধরনের হয়ে থাকে- একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং মডিউল। উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে চাইলে একাডেমিক মডিউল আর ইমিগ্রেশন বা কাজের জন্য জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে অংশ নিতে হয়। পরীক্ষার ধরণ, নিয়মকানুন, সময়, ফি প্রভৃতি তথ্য পাওয়া যাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে। এখানে ১০টি পরামর্শ দেওয়া হলো আইইএলটিএসে অংশ নিতে ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের জন্য।
১. নিজের ইংরেজি শব্দভা-ার বাড়াতে অনেকে শব্দের তালিকা তৈরি করে অর্থ মুখস্থ রাখতে চেষ্টা করেন। শব্দের ব্যবহার না জেনে শুধু অর্থ মুখস্থ করে খুব একটা লাভ হয় না। তাই অভিধান থেকে শব্দের অর্থ মুখস্থ না করে ইংরেজি গল্প, প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন পড়তে পারেন। পড়তে গিয়ে যেসব নতুন শব্দের সঙ্গে আপনার পরিচয় হবে, সেসবের অর্থ জেনে রাখুন। স্রেফ মুখস্থ করে শব্দ মনে রাখা কঠিন। বরং আপনার ইংরেজি লেখায়-কথায় নতুন শেখা শব্দটা ব্যবহার করুন। তাতে মনে রাখা সহজ হবে।
২. আইইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কে ধারণা রাখাও জরুরি। বিশ্বের ১৩৫টি দেশে আইইএলটিএস পরীক্ষা চালু আছে। সুতরাং বিশ্বের কোথায় ‘কী ঘটছে’ সে সম্পর্কে খবরাখবর রাখলে সেটি আপনার উপকারে আসবে।
৩. ইংরেজিতে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে নিজের কথা রেকর্ড করুন। পরে শুনে বুঝতে চেষ্টা করুন, কোন অংশগুলো আপনার কাছে অসংলগ্ন মনে হয়। কথার মাঝে একই শব্দ কি আপনি অহেতুক বারবার ব্যবহার করছেন? উচ্চারণগুলো কি ঠিক হচ্ছে? নিজেই নিজের প্রস্তুতি যাচাই করুন।
৪. ‘লিসেনিং’ অংশে উন্নতির জন্য যত বেশি সম্ভব ইংরেজি শোনার সুযোগ করে নিন। টেলিভিশন, সিনেমা, রেডিও কিংবা অনলাইন ভিডিও যেকোনো কিছুই আপনার উপকারে আসতে পারে। এমনকি ইংরেজি গানও। সব সময় মনোযোগ দিয়ে শোনার সুযোগ না হলেও উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি সম্পর্কে আপনার একটা ধারণা তৈরি হবে।
৫. ভিন্ন ভিন্ন বাচনভঙ্গির ইংরেজি শোনার অভ্যাস করুন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের ইংরেজির বাচনভঙ্গি একেকরকম। নানা রকম উচ্চারণের সঙ্গে পরিচয় থাকলে সেটি আপনার কাজে আসবে।
৬. ইংরেজিভাষীদের মতো আপনাকেও দ্রুত ইংরেজিতে কথা বলতে হবে, এমনটা নয়। ধীরে, কিন্তু স্পষ্টভাবে কথা বলার অভ্যাস করুন। তাড়াহুড়া করতে গেলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
৭. পরীক্ষার সময় প্রতিটি নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করুন। যেখানে দুই শব্দে উত্তর দিতে বলা হয়েছে, সেখানে দুটি শব্দই ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করলে নম্বর কাটা যাবে।
৮. আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য ‘নেগেটিভ মার্কিং’ হয় না। তাই আপনি যা জানেন, তা থেকেই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করুন।
৯. ‘রিডিং’ অংশে শুরুতেই প্রবন্ধের প্রতিটি শব্দ পড়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। স্রেফ চোখ বুলিয়ে নিয়ে প্রবন্ধের মূল ভাবটা বুঝতে চেষ্টা করুন। প্রতিটি অনুচ্ছেদের প্রথম লাইন মন দিয়ে পড়–ন, অনুচ্ছেদের মূল কথাটা বুঝে নিন।
১০. মনে রাখতে হবে, আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোনো ‘শর্টকাট’ পদ্ধতি নেই। শুধু নিয়মিত অনুশীলনই আপনাকে ভালো ‘স্কোর’ পেতে সাহায্য করতে পারে।
পরীক্ষা
যারা ব্যাচেলর, মাস্টার্স অথবা পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থী তারা পরীক্ষা দিতে পারবে একাডেমিক মডিউলে। কারিগরি বিষয়ে ভর্তি হতে চাইলে তাকে জেনারেল মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। এছাড়া যারা ইমিগ্রেশনের জন্য যেতে চান, তাদেরও জেনারেল মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। আইএলটিএস পরীক্ষা দেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের জেনে নেয়া উচিত কোন মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। আইএলটিএস পরীক্ষার চারটি অংশ হচ্ছে, রিডিং, লিসেনিং, রাইটিং এবং স্পিকিং।
রিডিং
এখানে বিভিন্ন জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেয়া থাকে। এক ঘণ্টায় তিনটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এখান থেকে পড়ে উত্তর করতে হবে। এখানেও বাক্যপূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি প্রশ্ন থাকবে। এজন্য অবশ্যই আপনাকে আগে থেকে একটা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
রাইটিং
এখানে এক ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। প্রথম প্রশ্নটিতে অন্তত ১৫০ শব্দের উত্তর লিখতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে বেশি নম্বর থাকে, অন্তত ২৫০টি শব্দ লিখতে হবে। এই শব্দসংখ্যার কম লেখা উচিত হবে না। প্রথম প্রশ্নের সাধারণত কোনো চার্ট বা ডায়াগ্রাম থাকে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে সাধারণত কোনো বিষযয়ের যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়। এখানে আপনি বিগত দিনের প্রশ্ন অথবা মডেল প্রশ্ন বেশি বেশি চর্চা করতে হবে।
লিসেনিং
শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয় এই অংশে। সিডি থেকে শুনে এ অংশে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এখানে চারটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। পরীক্ষার সময় যেকোনো বিষয়ে বক্তৃতা, কথোপকথন বা অন্য কোনো বিষয়ে অডিও সিডি শোনানো হয়। এখান থেকে শুনেই পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর নির্ধারিত উত্তরপত্রে লিখতে হবে। ৩০ মিনিটের মতো পরীক্ষা হয় এবং শেষে অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় দেয়া হয় সব উত্তর প্রশ্নপত্র থেকে উত্তরপত্রে লেখার জন্য। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়। এখানে সঠিক উত্তর বেছে নেয়া সংক্ষিপ্ত উত্তর, বাক্যপূরণ ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। এজন্য প্রচুর পরিমাণে ইংরেজি ওয়ার্ড মিনিং শিখতে হবে এবং বিদেশিদের সাথে কথা বলতে অথবা ইংরেজি ভাষণ শুনতে হবে।
স্পিকিং
এখানে তিনটি অংশে পরীক্ষার্থীদের মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে প্রথমত পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়। যেমন : পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এবং দুই মিনিট কথা বলতে হয়। এর আগে প্রস্তুতির জন্য সময় দেয়া হয় এক মিনিট। তৃতীয় অংশে রয়েছে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষকের সঙ্গে চার-পাঁচ মিনিটের কথোপকথন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন