স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হয়তো বিশ্ব ক্রিকেটে খুব একটা আলোড়ন তুলত না ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। কিন্তু পরিস্থিতির কারণেই এই সিরিজ হয়ে উঠেছে বিশেষ কিছু। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় চার মাস বিরতির পর এই সিরিজ দিয়েই মাঠে ফিরেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত দলীয় নৈপূন্যে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গোটা ক্রিকেট বিশ্বের চোখ ছিল যেন এই ম্যাচে। ম্যাচজুড়েই বর্তমান ও সাবেক তারকারা ম্যাচের নানা দিক নিয়ে সরব ছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শেষ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোমাঞ্চকর জয়ের পর অনেক তারকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন উচ্ছ্সিবত প্রতিক্রিয়া।
শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি ও এমসিসির প্রেসিডেন্ট কুমার সাঙ্গাকারা বললেন, ক্রিকেটের ফেরা স্মরণীয় করে রাখল এই ম্যাচ, ‘কী দারুণ এক টেস্ট ম্যাচ দিয়েই না ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন হলো! ইস্পাতকঠিন মানসিকতা দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জেসন হোল্ডার ও বেন স্টোকস, দুজনই নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অনেক গৌরবময় ইতিহাস রচনা হয়েছে তার ব্যাটিং ও নেতৃত্বে, সেই ভিভ রিচার্ডস গর্ব খুঁজে পাচ্ছেন দলের জয়ে, ‘বিরতির পর প্রথম ক্রিকেট ম্যাচটি হয়ে উঠল আমাদের! চোয়ালবদ্ধ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ছেলেরা। এই ম্যাচে জয় ওদের প্রাপ্য। তোমরা আমাদের গর্বিত করেছো।’
প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন জেসন হোল্ডার। ম্যাচজুড়ে নেতৃত্বে তিনি ছিলেন দারুণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি আলাদা করে বললেন হোল্ডারের নেতৃত্বের কথা, ‘দারুণ করেছো ওয়েস্ট ইন্ডিজ! ধৈর্য্য, দুর্দান্ত স্কিল ও পরিণত পারফরম্যান্স। চমৎকার নেতৃত্বে দিয়েছে জেসন হোল্ডার।’ ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা দলের পাশাপাশি প্রশংসা করলেন কোচিং স্টাফদেরও, ‘দুর্দান্ত এক টেস্ট ম্যাচ জয়! জেসন হোল্ডার ও তার দলকে অভিনন্দন। কোচিং ও ম্যানেজমেন্ট স্টাফরা দলকে তৈরি করেছে দারুণভাবে।’ ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে উত্তরসূরীদের এই জয় দেখেছেন ইয়ান বিশপ। সাবেক এই ফাস্ট বোলারের প্রশংসা পেলেন দলের অনেকেই, ‘দলের স্কিল ও মানসিকতার প্রশংসায় কোনো কথাই যথেষ্ট নয়। ফিল সিমন্স দারুণ কোচিং করিয়েছেন, দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়েছে জেসন হোল্ডার। অসাধারণ অবদানের জন্য গ্যাব্রিয়েল ও ব্ল্যাকউডকে কুর্নিশ। যদিও আরও দুটি টেস্ট বাকি আছে, কিন্তু শুরুটা দারুণ হলো।’
শেষ ইনিংসে রান তাড়ায় ৯৫ রানের ইনিংস খেলেছেন জার্মেইন ব্ল্যাকউড। সর্বকালের সফলতম ব্যাটসম্যান শচিন টেন্ডুলকারের টুইটে উঠে এলো সেই ইনিংসের গুরুত্ব, ‘দুই দলের ক্রিকেটাররাই দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। স্নায়ুক্ষয়ী রান তাড়ায় জার্মেইন ব্ল্যাকউড গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পার করিয়েছে। দারুণ জয়, সিরিজটি এখন জমে উঠল।’ চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া বা ম্যাচ বাঁচানোয় যিনি ছিলেন ভারতের ভরসা, সেই ভিভিএস লক্ষনের কথায়ও উঠে এলো ব্ল্যাকউডের বীরত্ব, ‘দুর্দান্ত জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনেক অভিনন্দন। স্কিল ও পরিণত পারফরম্যান্সের দারুণ প্রদর্শনী। জেসন হোল্ডারের নেতৃত্ব ছিল খুবই ভালো। চতুর্থ ইনিংসে অসাধারণ ইনিংস খেলেছে ব্ল্যাকউড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দেখিয়েছে, কীভাবে কাজ সারতে হয়।’
সাধারণ পরিস্থিতিতে হয়তো নিজের খেলার ব্যস্ততায় ম্যাচ দেখার সুযোগ খুব একটা হয় না বিরাট কোহলির। এখন তার অবসর। ম্যাচ দেখার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ছোট্ট করে, ‘ওয়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজ... কী দারুণ জয়! টেস্ট ক্রিকেটের অসাধারণ প্রদর্শনী।’ সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার ও এই সময়ের খ্যাতিমান কোচদের একজন টম মুডি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলের, ‘৫ দিন ধরে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তারা তাতে গর্ব করতে পারে। কোচ ফিল সিমন্স ও অধিনায়ক জেসন হোল্ডার গত এক বছরে দলে দারুণ সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে আরও রোমাঞ্চকর অনেক কিছুই হতে যাচ্ছে!’
ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন তুলে ধরলেন গোটা সিরিজের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা, ‘টেস্ট ক্রিকেটের জন্য দারুণ একটি সপ্তাহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে এই পরিস্থিতির মধ্যে এখানে এসে খেলছে, এটা অসাধারণ। আর তাদের এতটা ভালো খেলা ও জয়, এটা অবিশ্বাস্য! তবে আমার মনে হয় না, ইংলিশ সমর্থকরাও খুব হতাশ হবেন। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ভালোবাসা।’ ধারাভাষ্যকার ও সাবেক নিউজিল্যান্ড পেসার ড্যানি মরিসনের তর সইছে না পরের টেস্টের জন্য, ‘জাদুকরি পারফরম্যান্সের জন্য শুভেচ্ছ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। দারুণ টেস্ট ম্যাচ জয়। জেসন হোল্ডার ও তার দল বলবে, ‘মুখিয়ে আছি ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টের জন্য!’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন