জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে অনলাইনে ক্লাস। এই ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা খুবই কম। এমন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেইজ থেকে একটি জরিপের আয়োজন করা হয়। যেখানে জানতে চাওয়া হয়- অনলাইনে ক্লাস করতে শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা আছে কিনা? পাশাপাশি সমস্যা না থাকলে তাও জানানোর জন্য বলা হয়। এই জরিপে গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১২শ ৮জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে ৬৮% শিক্ষার্থী জানিয়েছে অনলাইন ক্লাস করতে তাদের সমস্যা রয়েছে। সমস্যা হিসেবে তারা উল্লেখ করেন- নেটওয়ার্ক সমস্যা, মোবাইল ডাটা কিনার মত সামর্থ্য নেই, অনলাইনে ক্লাস করার মত মোবাইল নেই।
ওই জরিপের মন্তব্যে আর এস রাফি নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, তার নেটওয়ার্ক সমস্যা ও অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে।
ফজলে রাব্বি নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘লকডাউন হওয়ার পরপরই আমার মোবাইল নষ্ট হয়ে যায়। এখন আম্মুর মোবাইল দিয়ে চলতেছে, সেটাও ভালোমানের মোবাইল না। ছাদে গেলে ক্লাস করার মতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। কিন্তু রোজ রোজ ৩/৪ টা ক্লাস করার ডাটা কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
ইমন হোসেন সাগর লিখেছেন তার কমদামি স্মার্টফোন, নেটওয়ার্ক এবং নেট কানেকশন স্পীড অনেক ধীরগতির ও ব্যায়বহুল ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে প্রতিদিন ক্লাস করতে গেলে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তাকে।
এইভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থী একই ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তবে ৩২% শিক্ষার্থী জানিয়েছে তাদের অনলাইন ক্লাস করতে সমস্যা নেই।
এদিকে অনেক শিক্ষকের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় ক্লাস নেয়া থেকে বিরত আছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন এমন অন্ত্যত ১০ জন শিক্ষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০-৭০ জন হলেও অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকে মাত্র ১৫-২০ জনের মত শিক্ষার্থী। আবার ক্লাস শুরুর দিকে ১৫-২০ জন থাকলেও শেষের দিকে এসে ৭-৮জন থাকে। বাকিরা বিভিন্ন কারণে ডিসকানেক্ট হয়ে যায়।’
অনলাইন ক্লাসের এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের দাবি ‘যেসকল শিক্ষার্থী ওয়াইফাই জোনের বাইরে আছেন তাদেরকে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা, সিম কোম্পানির সাথে কথা বলে তাদের জন্য স্বল্পমূল্যের ইন্টারনেট প্যাকেজের ব্যবস্থা করা।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘নেটের অবস্থা সব জায়গাতে সমান না থাকায় সকলের পক্ষে লাইভে ক্লাস করাও সম্ভব নয়। তাই তাদের জন্য ক্লাসটি রেকর্ড করে যেকোন মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থীরা সুযোগমত ক্লাসগুলো দেখে নিতে পারবে।’
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী বলেন, ‘স্মার্ট ফোন ও নেট ক্রয়ে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপর আর্থিক চাপ পড়বে। এছাড়া নেটওয়ার্ক এবং বিদ্যুতের সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা তেমন কিছু বুঝতে পারেনা। সেই সাথে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যাও খুব কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি অনলাইন সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরী। নাহলে দীর্ঘ মেয়াদী অনলাইন ক্লাস অনিশ্চয়তায় পড়বে।’
এদিকে অনলাইন ক্লাসের সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদারকে আহ্বায়ক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসানকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে কোন বিভাগের ক্লাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা তা দেখা। সমস্যা হলে তা সমাধানের চেষ্টা করা। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে প্রত্যেক বিভাগ থেকে দুজন করে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো নিয়ে কি ভাবছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব সমস্যা সমাধানেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাত্রতো ক্লাস শুরু হলো দুদিন হইছে। আরও ৪, ৫দিন যাক। তারপর বুঝা যাবে কি অবস্থা।’
শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট কিনার জন্য কোন আর্থিক সাহায্যের কথা প্রশাসন ভাবছে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ‘আমরা একটা টেকনিক্যাল কমিটি করে দিছে। সেই কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন