তরিকত হলো আল্লাহ ও রাসূলের পথে পরিভ্রমন করা। তরিকতের মুর্শিদ বলতে ঐ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি এক অচেনা-অজানা পথের রাস্তা দেখিয়ে দেন। সাধারণ শরীয়তের জ্ঞান বিদ্যা সকলেই কম বেশী জানে, বোঝে বা মানে। আর তরিকতের জ্ঞান হলো আল্লাহর সৃষ্টি জগতের এক বিশেষ জ্ঞান। যা সকলে সমভাবে জানে না, বোঝে না বা সকলের উপলদ্ধিতে আসে না। যেহেতু আল্লাহ নিজেই গুপ্ত। তাই তাঁর সৃষ্টি জগতের বহু কিছুই মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বাহিরে। তরিকতের জ্ঞান অর্জনের প্রথম ধাপ হলো বায়াতে রাসূল গ্রহন করা। অর্থাৎ গোনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখার শপথ নেয়া। আমাদের সমাজে দেখা যায়, কিছু সংখ্যক মানুষ বায়াতের কথা শুনামাত্র ঈমান হারানো কিংবা শিরক ভেবে আতংকিত হয়ে পড়েন। বায়াত বা পীর মুরীদি নিয়ে আতংকিত হওয়ার মত কিছুই নেই। অতীতের ছোট-বড় গোনাহ সম্পর্কে অনুতপ্ত হয়ে, অতীতের ভূলের জন্য নিজের নফসকে তিরস্কার করা এবং একজন আল্লাহওয়ালা কামেল ব্যক্তির নিকট গিয়ে ভূল-ক্রুটির জন্য তওবা করাই হলো বায়াত। এরশাদ হয়েছে, ‘আরো শপথ করি সেই নফসের, যে নিজেকে ধিক্কার দেয়।’ (সূরা কিয়ামাহ:২)।
আল্লাহতায়ালা মানুষকে তাঁর ইবাদত বন্দেগী করার জন্য পাঠিয়েছেন। এ ইবাদত বন্দেগীর উদ্দেশ্যে হলো, আল্লাহতায়ালার রেজামন্দী হাসিল করা। আল্লাহতায়ালার রেজামন্দী হাসিল করতে হলে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ সকল প্রকার ছোট-বড় গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। হযরত রাসূল (সা:) জামানায় মানুষ অতীতের সকল পাপ কর্ম পরিত্যাগ করে, এক আল্লাহর রেজামন্দি লাভের উদ্দেশ্যে রাসূল (সা:) এর নিকট এসে বায়াত গ্রহণ করত। সে সময়ে তারা অতীতের কর্মকান্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, রাসূল (সা:) কে স্বাক্ষী রেখে আল্লাহর নিকট তওবা করত। এরপর রাসূল (সা:) তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজও বায়াতের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আজ যারা আপনার কাছে বায়াত গ্রহণ করেছে, তারা তো প্রকারান্তরে আল্লাহর নিকট বায়াত গ্রহণ করেছে; (কেননা) আল্লাহর হাত ছিলো তাদের হাতের ওপর, তাদের কেউ যদি এ বায়াত ভঙ্গ করে তাহলে এর পরিনাম তার নিজের ওপরই এসে পড়বে, আর আল্লাহ পাক তার ওপর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা যেন পূর্ণ করে, তিনি শীঘ্রই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।’ (সূরা আল-ফাতহ: ১০)।
পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও বায়াতে রাসূল (সা:) গ্রহন করতে হয়। কারণ আল্লাহতায়ালা নারী-পুরুষ উভয়কে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহর নবী পুরুষেরও নবী ও মহিলাদেরও নবী। এরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! যখন কোনো ঈমানদার নারী আপনার কাছে আসবে এবং এই বলে আপনার কাছে আনুগত্যের কসম করবে, তারা আল্লাহর সাথে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না, নিজ হাত ও নিজ পায়ের মাঝখান সংক্রান্ত মারাত্মক অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আসবে না এবং কোনো সৎকাজে আপনার নাফরমানী করবে না, তাহলে আপনি তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সূরা আল- মুমতাহিনা:১২)।
বান্দা যখন নামাজের মুসল্লায় দাঁড়িয়ে সিজদা আরজ করে। তখন মানুষের কপাল মুসল্লাকে স্পর্শ করতে দেখা যায়। নামাজে সিজদারত অবস্থায় কপাল মুসল্লাকে স্পর্শ করলেও, সিজদা আল্লাহতায়ালাই পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মুসল্লাকে উদ্দেশ্যে করে সিজদা আরজ করা হয় না। আল্লাহকে উদ্দেশ্যে করেই সিজদা আরজ করা হয়। এজন্যে রাসূল (সা:) এর আনুগত্য করলে, আল্লাহর আনুগত্য করা হয়ে যায়। আল্লাহর বিধানই রাসূলের বিধান। রাসূল (সা:) এর আলাদা কোন পথ বা বিধান নেই। এরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করে।’ (সূরা আন-নিসা:৮০)। সুতরাং যারা আল্লাহ ও রাসূলের সন্তোষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বায়াত গ্রহণ করবে। তারা মূলত; আল্লাহর নিকটই বায়াত গ্রহন করে। আল্লাহর বিধান ও রাসূলের সুন্নাহই হলো পীর-মুর্শিদের বিধান। পীর-মুর্শিদের আলাদা কোনো বিধান দেয়া হয় নাই।
মানুষ ঈমান আনয়ণের পুণরায় গোমরাহ হবে না। শয়তান ধোঁকা দিবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্যে কুরআনে ঈমানদারগণকে সতর্ক করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং কোনো অবস্থায় শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না: কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্যতম দুশমন।’ (সূরা বাকারাহ: ২০৮)। যে যতো বেশী আল্লাহর পথে এগুতে থাকে। শয়তান ততো বেশি ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুুষ্টির উদ্দেশ্যে যে বা যারা তরিকতের ওপর আমল ইবাদত করার জন্যে কামেল ব্যক্তির নিকট বায়াতে রাসূল (সা:) গ্রহন করেছেন। তিনি সার্বক্ষণিক একজন কামেল মুর্শিদের তত্ত্বাবধানে থাকেন বিধায় শয়তান তাকে ধোঁকা দিতে পারে না। তরিকতের পথ অনুশীলনের ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালা মুর্শিদের প্রয়োজনীয়তা বুঝার তৌফিক দান করুক। আমীন।
(লেখক: ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন