শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি বৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে গঙ্গা-পদ্মায়

ভারতে অতিবৃষ্টিতে নামছে উজানের ঢল মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশে বর্ষণের জোর

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে আবারও পানি বাড়ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে পানি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে গঙ্গা-পদ্মায়। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায়ও পানিহ্রাস অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে এ কথা জানা যায়। গত মঙ্গলবার থেকেই ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গতকাল বিকেল পর্যন্ত সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, ব্রহ্মপুত্র নদের দু’টি পয়েন্টেই পানি বৃদ্ধির দিকে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার নুনখাওয়া পয়েন্টে আরও ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার নিচে এবং চিলমারী পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৬৮ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।

যমুনা নদের পানি আবারও ঊর্ধ্বমুখী। যমুনায় ৬টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৫টিতেই পানি বৃদ্ধি পায়। স্থানভেদে ৩৪ থেকে ৮ সেন্টিমিটার পরিমানে পানি বেড়ে গেছে। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচে, সিরাজগঞ্জে ৪৫ ও কাজীপুরে ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। পানি বাড়ছে ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদেও। যদিও সবক’টি পয়েন্টে বিপদসীমার এখনো নিচে রয়েছে। যমুনার প্রবাহ আরিচা পয়েন্টে স্থিতিশীল এবং বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। পাউবোর প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করেন, বর্তমান গতিতে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

তাছাড়া ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ধরলা, যমুনেশ্বরী, ঘাগট, করতোয়াসহ উত্তর জনপদের নদ-নদীগুলোর পানি ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টিতে ভাটির দিকে নামছে উজানের ঢল। আবার মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে শ্রাবণ-ভাদ্রের মাঝামাঝি দেশের অভ্যন্তরে বর্ষণের জোর বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ পৃথক পূর্বাভাসে জানায়, বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং আপার মেঘনা (উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহ) এই দুই অন্যতম অববাহিকার উজানভাগে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে। তাছাড়া সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে বিশেষত উত্তরাঞ্চলে রংপুর বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এর মধ্যে ধুবড়িতে ১২১ মিলিমিটার, চেরাপুঞ্জিতে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে- নাকুয়াগাঁওয়ে ১৬৮ মিলিমিটার, লরেলগড়ে ১৩৫ মিলিমিটার, লাটুতে ১১৩ মিলিমিটার, গাইবান্ধায় ১১০ মিলিমিটার, মহেশখোলায় ৮৪ মিলিমিটার, চিলমারীতে ৮২ মিলিমিটার, কক্সবাজারে ৮০ মিলিমিটার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭৫ মিলিমিটার, টেকনাফে ৬০ মিলিমিটার।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাসে জানায়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
গতকাল দেশের নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৩৯টিতে পানি বৃদ্ধি, ৫৯টিতে হ্রাস পায়। অপরিবর্তিত থাকে ৩টিতে। ৫টি নদ-নদী ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ২৭টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৭২ টিতে হ্রাস পায়।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আগামী দশ দিনের অন্তবর্তী সর্বশেষ পূর্বাভাসে গত মঙ্গলবার জানায়, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়তে পারে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্ট, মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকুল পয়েন্ট এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে আগামী দু’তিন দিন পানির সমতল ক্রমান্বয়ে কমতে পারে। তারপর পানি বৃদ্ধি শুরু হতে পারে। এর ফলে ১৫ আগস্টের পরে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে পানির সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং তারপর বাড়তে পারে। যার ফলে আগামী দু’তিন দিন জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। মিরপুর পয়েন্টে তুরাগ নদী এবং রেকাবী বাজার পয়েন্টে ধলেশ্বরী নদীর পানির সমতল আগামী দুয়েকদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন