বিনোদন ডেস্ক : কলকাতার ফসিলস ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য গায়ক রূপমকে বাংলাদেশে বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে। এজন্য ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে। ইভেন্টটির নাম বর্ণবাদী রুপম ইসলাম ও ফসিলস ব্যান্ডকে বাংলাদেশে বয়কট করুন। বাংলাদেশ বিরোধী মন্তব্যকারী রূপম ইসলাম ও তার ব্যান্ড ফসিলসকে বাংলাদেশে সবাই মিলে বর্জন করার আহŸান জানিয়েছে এই পেইজ থেকে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১২-৩টা পর্যন্ত গুলশান-২ এর ফেলানী রোডে রূপমকে বর্জনের জন্য সমাবেত হবে ইভেন্টে অংশ গ্রহণকারীরা। উল্লেখ্য, ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগামী ১৩ আগস্ট কলকাতায় নজরুল মঞ্চে আজাদী কনসার্টে সংগীত পরিবেশনের কথা ছিলো মাইলস, ফসিলস ও পাপনের। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতবিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগে মাইলসকে বাদ দেয়ার জোর দাবি তোলে ফসিলস। এ নিয়ে ফসিলস ব্যান্ডের রূপম মাইলসকে সেখানে বয়কটের দাবি জানায়। পরে মাইলস কনসার্টে পারফর্ম থেকে সরে আসে। মাইলসে পক্ষে শাফিন আহমেদ একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন ৩ আগস্ট রাতে। ১১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ভিডিওতে কলকাতার ওই কনসার্ট নিয়ে ফসিলসের মিথ্যাচার ও রূপমের অশিল্পীমূলক আচরণ এবং মাইলসের বিরুদ্ধে কলকাতায় ক্যাম্পেইন বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। ভারত বিদ্বেষের যে অভিযোগ তুলে মাইলসকে কলকাতায় গাইতে দেয়া হচ্ছে না সে বিষয়ে পরিষ্কার ভাষায় দলনেতা শাফিন আহমেদ বলেন, আমরা শুনেছি কলকাতায় মাইলসের কনসার্টকে ঘিরে সেখানে একটি ব্যান্ড তাদের ভক্তদের নিয়ে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। আমাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাস পুঁজি করে ‘হেইট ক্যাম্পেইন’-এর মতো করে কিছু করার চেষ্টা তারা করে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমরা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষতি হোক এরকম কিছু কখনো চাই না এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশের ভালোমন্দ ইস্যুতে কিছু বলার অধিকার আমি বা আমরা রাখি। মনে হয় না আমার ব্যক্তিগত স্ট্যাটাসে কী লিখছি তা টেনে এনে ক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। দেশপ্রেম নিয়ে লেখা মানেই কি ভারত বিদ্বেষ? এমন প্রশ্নও রূপম ইসলামের প্রতি করেছেন শাফিন আহমেদ। ভিডিও বার্তায় এ নিয়ে শাফিন বলেন, আমি আর আমার ভাই হামিনের যে লেখাগুলোকে ভারত বিদ্বেষ বলে রেফারেন্স দেয়া হচ্ছে সেগুলোর সবই দেশপ্রেম। আর দেশপ্রেমের জায়গা থেকে যে কথাগুলো লেখায় বলেছি সেটা ভারত বিদ্বেষ নয়। ভারত বিদ্বেষ একটা ভিন্ন বিষয়। আমার দেশের ক্ষতি হয় এমন বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাইতেই পারি, সে অধিকারও আমার আছে। দ্যাট ইজ নট নেসেসারিলি ভারত বিদ্বেষ বা কোনো ব্যক্তি বিশেষকে উদ্দেশ করে কথা নয়। ফসিলসের সংকীর্ণ মনোবলের কথা তুলে ধরে তাদেরকে বড় মানসিকতার হওয়ার আহŸান জানান শাফিন। বিশেষ করে কোনো শিল্পীর তরফ থেকে এমন আচরণ অপ্রাপ্তমনস্ক মনোভাবের পরিচয় দেয় বলে মনে করেন শাফিন ও মানাম আহমেদ। এ নিয়ে মানাম আহমেদ বলেন, আমাদের বাংলাদেশটা ছোট হতে পারে, কিন্তু আমাদের মন বিরাট। ভারতীয় শিল্পীরা ঘনঘন বাংলাদেশে আসছে। নিয়মিতই আসছে, কিন্তু কখনোই বাংলাদেশের শিল্পীরা বাধা দেয়নি। বরং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করতে আরো বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে এমন আয়োজনের চিন্তা ভাবনা চলছে। অথচ খোদ কলকাতায় বাংলার বিখ্যাত ব্যান্ড মাইলসকে গাইতে না দেয়ার ক্যা¤েপইন করাটা ফসিলস কিংবা রূপমের মতো শিল্পীকেই বরং মানুষের কাছে লজ্জার পাত্র হিসেবে পরিচয় করাবে। মানাম আহমেদ এই বিষয়টি তুলে ধরে রূপমের কাÐজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। মানাম আহমেদ বলেন, ফসিলসের মতো একটা ব্যান্ড তারা এই বিষয়টা বুঝতে পারলো না। আমি জানি না রূপমের শিক্ষাগত অবস্থান কী। কিংবা তার চিন্তা ভাবনার বিষয়টা কেমন। কারণ অন্যের দেশ প্রেমটাকে কেউ অন্যভাবে ম্যানুপুলেট করে অন্যভাবে ডাইভার্ট করে মানুষের কাছে প্রচার করে বলে যে এটা ভারত বিদ্বেষ এটা খুবই দুঃখজনক। এক সময় মাইলসের প্রবল ভক্ত ছিলেন ফসিলসের ভোকাল রূপমসহ অনেকে। কিন্তু এখন কি এমন হলো যে সেই সম্মানের জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেল। ফসিলসের কাছে প্রশ্ন রেখে সেই কথাটাও নিজের ভিডিওতে জানিয়ে শাফিন আহমেদ বলেন, তাদের (ফসিলস) যাত্রার শুরুতে মাইলসের কতো বড় ভক্ত তারা ছিলেন, যদিও এখন কতোটা ভক্ত সেটা জানি না। তবে আমার মনে আছে কলকাতার কোনো এক হোটেলে তাদের প্রথম অ্যালবামটা আমাদের হাতে দেয়ার জন্য কয় ঘন্টা তারা অপেক্ষা করেছিলেন। তো সম্মানের জায়গাটা এতো তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে কেন? উল্লেখ্য, গত বছরের মার্ছে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ পরবর্তী সময়ে বিতর্ক, আর বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়াতে ক্ষুব্ধ হয়ে রূপম অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেই স্ট্যাটাসে রূপম লিখেছিলেন, অনেক ম্যাচ জিতেছি, তার থেকে অনেক অনেক বেশি ম্যাচ হেরেছি। তথাকথিত ভারত-পাকিস্তান বিদ্বেষের গল্প শুনেছি, কিন্তু অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরে এক নতুন পাকিস্তানের অভ্যুদ্বয় সহ্য করছি, আমার অভিজ্ঞতায় যা বিরলতম। বাংলাদেশিরা মানুষ হয়ে উঠেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পশ্চিম বঙ্গের এই শিল্পী বাংলাদেশেও মোটামুটি জনপ্রিয় ছিল। তবে বাংলাদেশিদের একাধিকবার এধরনের আঘাত করার পর তাকে এদেশে পুরোপুরি বয়কট জানাতে আহŸান জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন