মোদি সরকারের আমলে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা সম্ভব নয়। সোমবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে ‘ভয়াবহ আবহাওয়া’ তৈরি হয়ে আছে।
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট শেষ হয়েছে ২০১২ সালে। আর টেস্ট ম্যাচ হয়েছে ২০০৮ সালে। মুম্বইয়ে ২৬/১১ হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও সিরিজ খেলতে চায়নি। ব্যতিক্রম হয়েছিল কেবল একবারই। ২০১২ সালে। ওয়ান ডে খেলা হয়েছিল। তবে দুই দেশেই বহু সময়ে ফের দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে কোনও কোনও পক্ষ। ভারত বার বারই বলেছে, ২৬/১১ হামলার দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেটে অংশ নিতে রাজি নয়। এ বার ইমরানও জানিয়ে দিলেন কূটনীতির এই ‘ভয়াবহ আবহে’ দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করার প্রশ্নই ওঠে না।
২৬/১১ হামলার পরে প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে। সে সময় ভারতে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় ছিলেন না। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন না ইমরান খান। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ভারত-পাক সম্পর্কের বরফ খানিকটা গলেছিল। নওয়াজ শরিফ মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। শরিফ এবং মোদির মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে খানিক বেশিই সৌজন্য বিনিময় হয়েছিল। শরিফের জন্মদিনে অতর্কিতে ইসলামাবাদ পৌঁছে গিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু সেই পরিস্থিতি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
নরেন্দ্র মোদির প্রথম পর্বের শেষ দিকে পুলওয়ামার ঘটনা ঘটে। জবাবে পাকিস্তানে গিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারত। ইমরান ততদিনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। সার্জিকাল স্ট্রাইকের পর ফের দুই দেশের মধ্যে কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই আগুন আর নেভেনি। মোদির দ্বিতীয় দফায় কাশ্মীর থেকে বিশেষ আইন প্রত্যাহার হয়েছে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হয়েছে পাকিস্তান। চীন এবং পাকিস্তান প্রকাশ্যে ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি সম্পূর্ণ কাশ্মীর এবং গুজরাতের কিছু অংশ তাদের বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। ইমরান খান একটি রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেছেন, যেখানে এই দাবি করা হয়েছে।
ভারত তার কড়া জবাব দিয়েছে। কাশ্মীরের সমস্ত সমস্যার জন্য একাধিকবার ভারত একমাত্র পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে। দিল্লির পাকিস্তান দূতাবাস কিছু কর্মীকে গুপ্তচর বলে দাবি করেছে ভারত। পাকিস্তানও ইসলামাবাদেও ভারতের দূতাবাসের দুই কর্মী এক দিনের জন্য বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন। আইএসআই তাদের অপহরণ করেছিল বলে ভারতের অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত ক্রীড়া এবং বিনোদনের সমস্ত সম্পর্ক বন্ধ করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইমরানের দুই দেশের খেলা বিষয়ক মন্তব্যে আসলে সেই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের চেহারাটিই স্পষ্ট হয়েছে। ইমরান অবশ্য বলেছেন, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বরাবরই ‘হাই ভোলটেজ’। ১৯৭৯ এবং ১৯৮৭ সালে ভারতে খেলতে যাওয়ার স্মৃতি রোমন্থন করেছেন ইমরান। তার বক্তব্য, সে সময়েও দুই দেশের মধ্যে খেলার অনুকূল পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু এখন সেই আবহাওয়া নেই। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন