সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে বলে আমাদের এক ধরনের বিষণ্ণতা গ্রাস করছে। এই ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত নয় বলে এই গৃহবন্দিত্ব আমাদের কাছে একঘেয়ে হয়ে উঠছে। তার ফলে, দেখা দিচ্ছে মানসিক অবসাদ। নানা ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। কী ভাবে আমরা এই মানসিক চাপ, অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসব? কী বলছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা আসুন জেনে নেয়া যাক।
মনোরোগ চিকিৎসক এর মতে, ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী বা তার চেয়েও প্রবীণদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। কারণ, ছোটবেলা থেকে তাঁরা মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেই অভ্যস্ত। এতটা বয়সে পৌঁছে গৃহবন্দির জন্য তাঁদের সেই অভ্যাস হঠাৎ বদলে যাওয়ায় তাঁরা বিষণ্ণ হয়ে পড়ছেন, ভুগতে শুরু করেছেন মানসিক চাপ ও অবসাদে। তাঁরা বাজারে বেরতে পারছেন না।পাড়ার লোকজনের সঙ্গে আড্ডাও মারতে পারছেন না।
আবার কম্পিউটার, মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপে এই প্রবীণদের বেশির ভাগই তেমন সড়গড় নন বলে এই সব নিয়েও তাঁরা বাড়িতে সময় কাটাতে পারছেন না। মনোরোগ চিকিৎসক এর মতে বাড়ি থেকেই এখন প্রবীণদের সেই সামাজিক যোগাযোগটা বজায় রেখে চলতে হবে। আর তা করতে হবে টেলিফোনে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে। আর টেলিভিশনে খবরটার উপর নিয়মিত নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে। যাতে বাইরের জগতের সঙ্গে তাঁরা আপডেটেড থাকতে পারেন।
তবে টেলিভিশনে মৃত্যু বা দুঃখ, শোকের খবর থেকে নিজেদের যদি তাঁরা দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন, তা হলে সেটাই সবচেয়ে ভাল। সে ক্ষেত্রে টেলিভিশনে করোনা আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যার খবরে সারা দিন ধরে নজর রাখার দরকার নেই। তার পরিবর্তে তাঁরা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, মন ভাল করা টিভি সিরিয়াল বা পুরনো দিনের সিনেমা দেখতে পারেন। শুনতে পারেন পুরনো দিনের আনন্দের গান। বাড়িতে নিয়মিত ভাবে ব্যায়াম করতেও পারেন।
৫ বছর থেকে ২৫/৩০ বছর বয়সিদের এই সমস্যায় খুব বেশি ভুগতে দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে যাঁরা শহরে থাকেন তাঁদের ক্ষেত্রে। কারণ, শহরে খেলাধুলো বা বাইরে বেরনোর জায়গা বা সুযোগ কমে যাওয়ায় এই বয়সিদের বেশির ভাগই ছোটবেলা থেকে নানা ধরনের অনলাইন গেম বা ইন্ডোর গেম, ভিডিও, মোবাইল বা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে অভ্যস্ত। তাই তাঁদের অভ্যাসের সঙ্গে লকডাউনের দিনগুলির খুব একটা বদল ঘটছে না। ফলে, তাঁদের অস্বস্তি, অবসাদ অনেকটা কম। বরং, লকডাউন তাঁদের সামনে বাড়ির লোকজনকে বোঝা ও বাড়ির লোকজনের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছে। সময় কাটাতে বাড়ির বেশ কিছু কাজ এখন তাঁরা করতে পারছেন, যা আগে তাঁরা হয়তো করতে শেখেননি বা করেননি কোনও দিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন