মহেশপুর শহরে ‘মহেশপুর প্রাইভেট হাসপাতাল’ নামের এক ক্লিনিকে প্রসূতি সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক মায়ের মৃত্যু হয়েছে। রিনা খাতুন (৩২) নামের উক্ত প্রসূতি মহেশপুর উপজেলার হাবাসপুর গ্রামের সামাউল হকের স্ত্রী।তিনি মঙ্গলবার সকাল ১০টার সময় ক্রিনিকে ভর্তি হন,এর পর বেলা ১২ টার দিকে অস্ত্রপচারের পর তার মৃত্যু হয়।
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, অস্ত্রপচারের সময় রোগির অবস্থা খারাপ হলে তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর পাঠিয়ে দেন, পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য রোগির স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশন টেবিলেই রিনা খাতুনের মৃত্যু হয়েছে, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে মৃত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার অজুহাতে ক্লিনিক থেকে বাইরে বের করার ব্যবস্থা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, এ নিয়ে মহেশপুর উপজেলার অনুমোদনহীন তিনটি ক্লিনিকে গত ১৩ দিনে তিন মায়ের মৃত্যু হলো। ইতিপূর্বে ৬ আগষ্ট উপজেলার নেপারমোড় এলাকার একতা ক্লিনিকে মারা যান সেজিয়া গ্রামের নাইম হাসানের স্ত্রী লাবনী আক্তার (১৮)। এই এলাকার মা ও শিশু প্রাইভেট হাসপাতালে ১০ আগষ্ট মারা যান জিনজিরাপাড়া গ্রামের ছিকদার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৩০। তিনটি অস্ত্রপচারই করেছেন সোহেল রানা নামের একজন চিকিৎসক। ঘটনা ঘটলেই তার মুটোফোন বন্ধ পাওয়া যায়, যথারিতি মঙ্গলবারের ঘটনার পরও মুটোফোন বন্ধ ছিল। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম চিকিৎসক সোহেল রানা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তিনিও ওই চিকিৎসককে খুজছেন বলে জানান।
মঙ্গলবার বিকালে মুঠোফোনে নিহত রিনা খাতুনের (স্বামী ঢাকায় চাকুরীরত) সামাউল হক জানান, ক্লিনিকটি নিজের এলাকায় হওয়ায় তার পরিবারের লোকজন ওই ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে ভালো ডাক্তার নেই এটা তাদের জানা ছিল না। তিনি বলেন ক্লিনিক কর্র্র্তৃপক্ষের অবহেলা আর অব্যবস্থাপনার জন্য তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ক্লিনিকেই তার স্ত্রী মারা গেছে, কিন্তু মালিকপক্ষ বাইরে বের করার জন্য উন্নত চিকিৎসার অজুহাতে যশোর পাঠিয়ে দেন। তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত মীমাংসার চেষ্টা চলছিল।
মঙ্গলবার মহেশপুর পৌর এলাকার পাতিবিলা এলাকায় অবস্থিত মহেশপুর প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক মালিকের স্ত্রী স্বপ্না সরকার দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে কোনো নার্স নেই, নেই চিকিৎসক। তবে ওয়ার্ড গুলোতে রুগী ও রুগীর লোকজন অবস্থান করছেন। জানতে চাইলে স্বপ্না জানান, তার স্বামী সুভাষ সরকার মৃত রোগির বাড়ি গেছেন। বিষয়টি মীমাংশার চেষ্টা করছেন। আর সার্বক্ষনিক চিকিৎসকের বিষয়ে জানান, নিয়মিত চিকিৎসক আছেন, কিন্তু বর্তমানে একটু সমস্যায় তিনি আসছেন না। তবে তার নাম সঠিক করে বলতে পারেননি। তিনি আরো জানান, চিকিৎসক সোহেল রানা তাদের ক্লিনিকে কলে আসেন। এটা একটা দুর্ঘটনা উল্লেখ করে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। তার স্বামীর মুটোফোন নাম্বার নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেন। ক্লিনিকের লাইসেন্স সম্পর্কে জানান, ইতিপূর্বে লাইসেন্স ছিল, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে। সরকার ২৩ আগষ্ট এর মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের সময় বেঁধে দিয়েছেন। তারা এই সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাক্তার সেলিনা বেগম জানান, বিষয়টি তারা জানার পর স্থানিয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্লিনিক বন্ধ রাখার জন্য বলেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন