রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

এ.কে.এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

মুহাররাম শব্দের মাঝে এমন সব বৈশিষ্ট্য ও হেকমত প্রচ্ছন্ন আছে, যার বিশ্লেষণ একাধারে কেয়ামত পর্যন্ত করলেও শেষ করা যাবে না। মুহাররাম শুধু কেবল ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাসই নয়, বরং এটি একটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের মহাসাগর অতল জলধী। এর গভীরে ডুব দিয়ে মণি, মুক্তা, হিরা, জহরত আহরণ করাই ছিল আলেম, উলামা, আল্লামা ও মুফ্তী-মোহাদ্দীসের কাজ। এ দিকনির্দেশনাই পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) স্বীয় তেইশ বছরের নাবুওয়াতী জিন্দেগিতে কাজে ও কথায় প্রদান করেছেন। কিন্তু নিতান্ত দুঃখের বিষয় এই যে, চলমান সময়ে মুসলিম পÐিতেরা মুহাররামের ফজিলত ও বরকত নিয়েই সন্তুষ্ট ও পরিতুষ্ট আছেন। সুতরাং, তাদেরকে বহাল তবিয়তে তাদের স্থানে রেখেই চলুন, এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহপাকই আমাদের সহায়।
আরবি মুহাররাম শব্দের প্রথম বর্ণটি হচ্ছে মীম। এই মীম বর্ণটির ওপর পেশ হরকত সংযুক্ত হওয়াতে উহার উচ্চারণ ‘মু’ হয়েছে। কিন্তু ইসলামী বর্ষপঞ্জির বাকি এগারটি মাসের নামসমূহের প্রথম বর্র্ণে পেশ হরকত সংযুক্ত নেই। আমরা জানি, পেশ-হরকতটি বিপ্লব, প্রভঞ্জন, নতুন ধারার প্রবর্তনের প্রতীক। মুহাররাম শব্দের প্রথম অক্ষর মীম-এ পেশ হরকতের সংযুক্তি এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে যে, মুহাররাম হলোÑ একটা বিপ্লব, একটা তীব্র প্রভঞ্জন, একটা নতুন ধারার উৎস মূল। যা বিগত সব ধারাকে রহিত করে দিয়ে একমাত্র কোরআনভিত্তিক জীবনযাত্রাকে কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রাখার বৈপ্লবিক কর্মপন্থাকে সঞ্জীবিত করে তুলবে। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না। পরিবর্তন হবে না। এ জন্যই আমরা মাহে মুহাররামকে ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস হিসেবে লাভ করে ধন্য হয়েছি, কৃতার্থ হয়েছি। আর এজন্যই মহান রাব্বুল-আলামীন আমাদেরকে আদর করে ‘খায়রা উম্মাতিন’ উত্তম উম্মত বলে সম্বোধন করেছেন, যেন আমরা ইসলামী বিপ্লবের ঝাÐাকে গোটা বিশ্বের সামনে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হই, সাধনা চালাই।

উল্লেখিত, বিশেষত্বটি আমরা আল কোরআন গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করলে অতিসহজেই অনুধাবন করতে পারি। কেননা, কোরআনুল কারিমে পঁচিশজন নবী ও রাসুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ নবী ও রাসুলদের মধ্যে যাদের নামের প্রথম বর্ণেÑ পেশ হরকত সংযুক্ত আছে, তাদের সকলের দ্বারাই মহান রাব্বুল আলামিন মহাবিপ্লব পরিসাধিত করেছেন। যেমনÑ হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:); হজরত মুসা কালিমুল্লা (আ:); হজরত নূহ নাযিউল্লা (আ:); হহরত উযায়ের নাবীউল্লাহ (আ:); হজরত লুুত-যাকিউল্লাহ (আ:); হজরত ইউসুফ হাসিনুল্লাহ (আ:) তাঁদের বরকতময় নামসমূহের প্রথম বর্ণে পেশ হরকতের সংযুক্তি দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, তোমরা কল্যাণকর বিপ্লব সাধনে তৎপর হও। যেমনÑ উল্লিখিত নবী ও রাসুলরা মনে-প্রাণে পৃথিবীবাসীদের সত্যাশ্রয়ী বিপ্লবের পথে আহŸান জানিয়েছিলেন, অনুপ্রাণিত ও উদ্বেলিত করে তুলেছিলেন। পবিত্র জীবনের অধিকারী করে তাদেরকে খাঁটি মানুষে পরিণত করেছিলেন।

আরো লক্ষ্য করা যায় যে, পেশ হরকতটি সর্বোবস্থায় বর্ণের উপরস্থ জবর হরকত বা তাশদিদ চিহ্নের ওপর সংস্থাপিত হয়। কখনো নিচে সংস্থাপিত হয় না। আর হয় না বলেই, আল্লাহ জাল্লা শানুহু উম্মাতে মোহাম্মাদীয়াকে খেতাব করে বলেছেন: ‘তোমরাই হবে বিজয়ী, যদি তোমরা (প্রকৃত) মুমিনীনদের অন্তর্ভুক্ত হও’। এখানে ‘মুমিনীন’ শব্দের প্রথম বর্ণটিতেও পেশ হরকত সংযুক্ত আছে। মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে প্রকৃত মুমিনীন হওয়ার তৌফিক এনায়েত করুনÑ আমীন!

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন