আরবি বছরের প্রথম মাস মুহাররাম। হিজরি সন এ মাস থেকেই শুরু হয়। মুহাররমের চাঁদ উদিত হওয়ার মাধ্যমেই একটি বছর শেষ হয়ে আরেকটি নতুন বছরের আগমন ঘটে। মাহে মুহাররাম সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে একটি। বছরের ১২ মাসের মধ্যে চারটি মাসকে আশহুরে হুরুম বা হারাম মাস তথা সম্মানিত মাস বলা হয়েছে। উক্ত চার মাস হচ্ছে- মুহাররাম, রজব, যীলক্বাদাহ ও যিলহিজ্জাহ।
এই চারটি মাসকে আল্লাহতায়ালা বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। এই মাসগুলো ‘হারাম’ বা সম্মানিত মাস হিসেবে পরিগণিত, যার মধ্যে ঝগড়া-ফেসাদ, লড়াই, খুন-খারাবি ইত্যাদি অন্যায়-অপকর্ম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এই মাসগুলোতে তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম-অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবা: আয়াত ৩৬)।
বিশেষভাবে মুহাররাম মাসের ১০তম দিবস আশুরা নামে অভিহিত, যার মর্তবা অত্যাধিক। এ দিনকে তার পূর্বের দিন কিংবা পরের দিনের সাথে মিলিয়ে রোজা রাখতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। আশুরার রোজার হুকুম: রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম ১০ মুহাররমে সিয়াম পালন করেছেন। কিন্তু ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা ১০ মুহাররামকে সম্মান করত এবং এ দিন তারা সিয়াম পালন করত। তা জেনে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের নিয়ম থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যমÐিত করার জন্য ৯ ও ১০ মুহাররাম অথবা ১০ ও ১১ মুহাররাম রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আশুরার সিয়াম পালন করলেন এবং সকলকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা এই দিনটিকে (১০ মুহাররাম) পালন করে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আগামী বছর বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ মুহাররামসহ সিয়াম রাখব। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররাম আসার আগেই তার ওফাত হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম : হাদীস নং ১১৩৪)।
অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং ইয়াহুদীদের বিরোধিতা করো। তোমরা আশুরার সাথে তার পূর্বে একদিন অথবা পরে একদিন রোজা রাখ। (সুনানে বাইহাকী : ৪র্থ খÐ, পৃ. ২৮৭)।
ফজীলতের দিক দিয়ে রমজানের রোজার পরেই আশুরার রোজার অবস্থান। এটা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। অর্থাৎ এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের সগীরা গুনাহ মাফ হয়। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের পরে সর্বোত্তম রোজা হলো মুহাররাম মাসের রোজা (অর্থাৎ আশুরার রোজা) এবং ফরজ নামাযেজ পর সর্বোত্তম হলো রাতের নফল নামাজ (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ)। (সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১১৩০)।
অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আবু ক্বাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমি আশা করি, আশুরার (১০ মুহাররমের) সিয়াম আল্লাহর নিকট বান্দার বিগত এক বছরের (সগীরা) গুনাহের কাফফারা হিসাবে গণ্য হবে। (সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১১৩০)।
এবারের মুহাররাম মাস শুরু হয়েছে পৃথিবীর এক ক্রান্তিকালে। একদিকে মহামারি করোনার কারণে বিপর্যস্ত সাধারণ জীবনযাত্রা। তার ওপর অন্যদিকে চলে আসে সর্বগ্রাসী বন্যা। যার কারণে নিঃস্বরা আরও নিঃস্ব হয়ে গেছে। অভাবীরা হাত পাতার মতোও কাউকে পাচ্ছে না। আশুরার দিন নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম খাবারের আয়োজন করার কথা একটি আমলে পাওয়া যায়। এখন নিজের পরিবারের পাশাপাশি অভাবগ্রস্ত, অসহায়দের জন্যও যদি কিছু করা যায়, নিঃসন্দেহে সেটা হবে সোনায় সোহাগা।
তাই সামার্থ্যবানদের উচিত তার আশপাশের অভাবী, এতিম, অসহায়দের দিকে দানের হাত প্রসারিত করা। দুঃখ, কষ্ট, অভাব ও পেরাশানমুক্ত পৃথিবী হোক, হিজরি নতুন বছরের প্রথম চাওয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন