বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পাপ-পুণ্যের ধারা

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের কর্মক্ষেত্র। এই কর্ম যাতে সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে আঞ্জাম দেয়া যায়, সেজন্য মানুষকে প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ, শক্তি-সামর্থ্য ও দিকনির্দেশনা দান করা হয়েছে। এসব কাজে লাগিয়ে একজন মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি-ধন্য হতে পারে। দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানকে জ্যোতির্ময় করতে পারে। গড়ে তুলতে পারে নেক ও সওয়াবের প্রভূত সঞ্চয়।

এ প্রচেষ্টার সর্বশেষ সীমা হলো মৃত্যু। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সকল সম্পর্ক। নিঃশেষ হয়ে যায় যাবতীয় কর্মক্ষমতা। না ভালো কাজের শক্তি থাকে, না মন্দ কাজের। না সওয়াব উপার্জনের সক্ষমতা থাকে, না গোনাহ কামানোর।

মৃত্যুর পর শুরু হওয়া জীবনের প্রথম মনযিল হলো কবর। কবরের জীবনের পর সকলকে আল্লাহ তাআলার কাছে সমবেত হতে হবে। তিনি পার্থিব জীবনের হিসাব-নিকাশ নিবেন এবং ভালো-মন্দ যাবতীয় কর্মের প্রতিদান দিবেন। তখন কারো ঠিকানা হবে জান্নাত, কারো জাহান্নাম।

সেদিন নেককার ও গোনাহগার উভয়েরই নিজ নিজ কৃতকর্ম স্মরণ হবে। নেককার আফসোস করবে কেন আরো বেশি নেক অর্জন করেনি। আর গোনাহগারের অনুতাপ তো হবে অন্তহীনÑ কেন গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেনি। কেউ কেউ তাদের আবার দুনিয়াতে পাঠানোর আবেদন করবে। কিন্তু এ কি সম্ভব?

বুদ্ধিমানের কর্তব্য গোনাহ থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকা। আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ ও শান্তির পথে অগ্রগামী হওয়া এবং মৃত্যুর আগেই মৃত্যু ও তার পরের জীবনের যথোচিত প্রস্তুতি নেয়া। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে তাঁর প্রিয় মুমিনদের এ কথাই স্মরণ করিয়েছেন : আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো, এর আগে যে, তোমাদের কারো মৃত্যু এসে যাবে আর তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কিছুকালের জন্য সুযোগ দিলে না কেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। যখন কারো নির্ধারিত কাল এসে যাবে তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দিবেন না। আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবহিত। (সূরা মুনাফিকূন : ১০-১১)।

হাদিসে বুদ্ধিমানের পরিচয় এভাবে ব্যক্ত হয়েছে : বুদ্ধিমান সে-ই যে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম সে-ই যে নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে এবং আল্লাহর কাছে (বৃথা) আশা পোষণ করে। (জামে তিরমিযী : ২৪৫৯)।

চতুর্থ খলীফা আলী ইবনে আবী তালিব রা.-এর একটি বক্তব্যে দুনিয়া-আখেরাতের স্বরূপ ও আমাদের করণীয় এভাবে বর্ণিত হয়েছে : দুনিয়া ফিরে যাচ্ছে আর আখেরাত এগিয়ে আসছে। আর এ দু’টির প্রত্যেকটিরই আছে সন্তানাদি। তোমরা আখেরাতের সন্তান হও। কারণ আজ শুধু আমল, হিসাব নেই। আর আগামীকাল শুধু হিসাব, আমল নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৫৬৩৬)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এক বিশেষ নিআমত হলো, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমলের ধারা বন্ধ হয়ে গেলেও জীবদ্দশায় নির্দিষ্ট কিছু আমল করে গেলে মৃত্যুর পরও সওয়াব জারি থাকে। অর্থাৎ মানুষ নিজেই নিজের জন্য সওয়াব পৌঁছার ব্যবস্থা করে যেতে পারে এবং চাইলে অন্য কেউও তাকে সওয়াব পৌঁছাতে পারে। এ উভয় পদ্ধতিই আল্লাহ তাআলার একান্তই দয়া ও অনুগ্রহ। নতুবা বান্দার কি সাধ্য ছিল কর্মক্ষমতা হারানোর পরও প্রতিদান লাভের? প্রথম পদ্ধতিটির নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই। আলোচনার সহজতার জন্য একে ‘সওয়াব লাভের উপায়’ বলা যেতে পারে। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি ‘ঈসালে সওয়াব’ নামে অধিক পরিচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন