শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-১

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই এ সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবি হলো, ইসলামে শবে বরাতের কোনো ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওজু বা জয়িফ। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোনো ফজিলতপূর্ণ রাত মনে করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোট-খাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরি করে মানুষের মধ্যে বিলি করে।

বাস্তব কথা হলো, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীন এবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তিকতামুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে। শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হলো, এ রাতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

সম্মিলিত কোনো রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যত হাদিস এসেছে, তার সবগুলোকে মওজু বা জয়িফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মতো বা তার চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

এখানে শবে বরাতের (পনের শাবানের রাত) ফজিলত ও করণীয় বিষয়ক কিছু হাদিস যথাযথ উদ্ধৃতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণসহ উল্লেখ করা হলো। ১ম হাদিস : মুয়ায ইবনে জাবাল বলেন, নবী করীম (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (শুআবুল ঈমান ৩/৩৮২ : ৩৮৩৩)।

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বারা ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকি কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

যখন কোনো বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত ঘোষণা হয়, তখন তার অর্থ এই হয় যে, এই সময় এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় এবং ঐ সব গুণাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত থেকে বঞ্চিত হয়।

যেহেতু উপরোক্ত হাদিস এবং অন্যান্য হাদিসে অর্ধ-শাবানের রাতে ব্যাপক মাগফেরাতের ঘোষণা এসেছে, তাই এ রাতটি অনেক পূর্ব থেকেই শবে বরাত তথা মুক্তির রজনী নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। কেননা, এ রাতে গুনাহসমূহ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং পাপের অশুভ পরিণাম থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

যদি শবে বরাতের ফজিলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোনো হাদিস না থাকত, তবে এই হাদিসটিই এ রাতের ফজিলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। অথচ হাদিসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এ বিষয়ক আরো একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

বহু হাদিসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। হাদিসটির সনদ সহিহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে কিতাবুস সহিহ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদিসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীন সহিহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদিসেরই একটি প্রকার।

ইমাম মনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদিস বিশারদ এই হাদিসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯. লাতায়েফুল মায়ারিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১।

বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) সিলসিলাতুল আহাদসিস্ সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্থনে আরো আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন : এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহিহ প্রমাণিত হয়। তারপর আলবানী (রহ.) ওই সব লোকের বক্তব্য খণ্ডন করাটা, যারা কোনো ধরনের খোঁজ-খবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহিহ হাদিস নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Ismail Sagar ৫ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪৪ এএম says : 0
সব চাই তে বড় রাত হচ্ছে রমজানের শেষদিকে ২০থেকে ঈদের চাদঁ না দেখা পযন্ত।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ৫ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪৪ এএম says : 0
সব চাই তে বড় রাত হচ্ছে রমজানের শেষদিকে ২০থেকে ঈদের চাদঁ না দেখা পযন্ত।
Total Reply(0)
Omar Faruk ৫ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪৭ এএম says : 0
জাযাকাল্লাহ
Total Reply(0)
Ibrahim Khan ৫ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪৪ এএম says : 0
রাত্রে -নফল নামাজ, জিকির,কুরআন তেলাওয়াত, সালাতুত তাসবিহ নামাজ,আত্মীয় স্বজনের কবর যিয়ারত তাহাজ্জুদ ইত্যাদি দিনের বেলায় রোজা রাখা
Total Reply(0)
Ibrahim Khan ৫ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪৪ এএম says : 0
রাত্রে -নফল নামাজ, জিকির,কুরআন তেলাওয়াত, সালাতুত তাসবিহ নামাজ,আত্মীয় স্বজনের কবর যিয়ারত তাহাজ্জুদ ইত্যাদি দিনের বেলায় রোজা রাখা
Total Reply(0)
মারুফুল হক চৌধুরী ৫ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪৫ এএম says : 0
বরকতময় রজনী শবে বরাত পবিত্র শবে বরাত। আল্লাহপ্রেমিক মুসলমানদের জন্য অনেক আশা ও ভরসার রাত। এই একটি রাতের জন্য আশায় বুক বেঁধে থাকেন পৃথিবীর অজস্র মুসলমান। আমাদের এ জীবনের প্রতিটি পলক যার ইশারায় পড়ে তিনি তো সেই পরম শক্তিমান আল্লাহ। তাঁর কাছে নিজের সব সুখ দুঃখ ও আনন্দ বেদনার ফরিয়াদ জানিয়ে কেদে আকুল হয়ে নিজেদের দীনহীন ভাগ্যের উন্নয়নে তার সামান্য একটু দয়া ও করুণার দৃষ্টি আকর্ষণের এক মহিমান্বিত সুযোগ পবিত্র শবে বরাত।
Total Reply(0)
Al-Amin Sabuj ৫ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪৬ এএম says : 0
ব‍্যাপারটা মাসআলার বিষয়। এটা সালিশি নয়। যে এটার মাঝামাঝি রায় দিবেন। সহিহ স্পষ্ট প্রমান ও দলিল না থাকলে আবেগে আমলের রাস্তা তৈরী করা আন‍্যায়।
Total Reply(0)
Monzur Morshed ৫ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪৭ এএম says : 0
Keep up the good work.
Total Reply(0)
Mushfiq Saad ৫ মার্চ, ২০২৩, ১০:৪৩ এএম says : 0
সবচেয়ে বড় রাত রমজানের শেষ দশক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন