বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আসুন, অগ্রিম ক্ষমার সুসংবাদ নিই

মুহাম্মাদ ত্বহা হুসাইন | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বড়ই দয়ালু। তাঁর দয়া অসীম, অফুরন্ত। কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে; কাগজ ফুরিয়ে যাবে তবু তাঁর দয়ার কথা, দানের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। তিনি বান্দার ক্ষুদ্র আমলেরও মূল্যায়ন করেন তাই নয়, এর বিনিময় অনেক বড় আকারে প্রদান করে থাকেন। তাই হাদীস শরীফে এসেছে : কোনো সৎকাজকে ক্ষুদ্র ভেবে তাচ্ছিল্য করো না। (সহীহ মুসলিম ২/৩২৯ : ২৬২৬)।

যেকোনো একটি পাপে অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ যেমন জাহান্নামে নিক্ষেপ করার মতো প্রবল প্রতাপের অধিকারী, তেমনি কোনো একটি ক্ষুদ্র সৎকর্মে খুশি হয়ে জীবনের বিশাল পাপ-পঙ্কিলতার বোঝাও নিমিষেই ক্ষমা করে দেওয়ার মতো গাফুরুর রাহীমও তিনি। শুধু কি তাই? হাদিস শরীফে এমন অনেক নেক কাজের কথা এসেছে যা দেখতে অতি ক্ষুদ্র ও সহজসাধ্য মনে হলেও মহান আল্লাহর কাছে তা এতই প্রিয় যে, এর বদৌলতে জীবনের বিগত দিনের গুনাহসমূহ তো বটেই ভবিষ্যৎ জীবনের পাপ-পঙ্কিলতাও অগ্রিম ক্ষমা করে দেন।

পাপ হওয়ার আগেই অগ্রিম ক্ষমার সুসংবাদপ্রাপ্ত সৌভাগ্যবান মানুষ সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ছিলেন, যারা জীবদ্দশাতেই এ সুসংবাদ পেয়েছিলেন যে, আল্লাহ তাঁদের বিগত ও আগত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। যেমন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবায়ে কেরামকে আল্লাহ তায়ালা এ সুসংবাদ দিয়েছিলেন, ‘তোমরা যেমন খুশি আমল করতে থাক, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম’। (সহিহ বুখারী ২/৬৭ : ৩৯৮৩)।

রাসূলে কারীম (সা.) একবার হযরত উসমান (রা.) কে সম্বোধন করে বললেন, ‘আল্লাহ তোমার পূর্বাপর এমনকি কেয়ামত পর্যন্ত যত দোষ-ত্রুটি হবে সব ক্ষমা করে দিয়েছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৩২৭২২)। আর একবার তিনি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.)-এর জন্য এ মর্মে দোয়া করেছিলেন যে, ‘আল্লাহ তোমার পূর্বাপর, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব গুনাহ ক্ষমা করে দিন’। (সহিহ ইবনে হিব্বান : ৭১১১)।

আল্লাহ তায়ালার এই ক্ষমা, এই করুণা লাভের পথ এখনো খোলা রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ প্রবন্ধে এমন কিছু নেক আমলের কথা আলোচনা করব, যার ব্যাপারে হাদিস শরীফে এই প্রতিশ্রুতি এসেছে যে, বিগত জীবনের তো বটেই, ভবিষ্যৎ জীবনের পাপও আল্লাহ তায়ালা অগ্রিম ক্ষমা করে দিবেন।

উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর ক্রীতদাস হুমরান (রা.) বলেন, প্রচণ্ড শীতের মওসুম। এক রাতে হযরত উসমান (রা.) অজুর পানি চাইলেন। পানি নিয়ে এলাম। তিনি তাঁর মুখমণ্ডলে ও হাতে প্রচুর পানি ঢালতে লাগলেন। আমি বললাম, হযরত প্রচণ্ড শীতের রাত! যথেষ্ট হয়েছে, পরিপূর্ণ অজু আপনি সেরেছেন। হযরত উসমান (রা.) বললেন, তুমি পানি ঢালতে থাক। আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে বলতে শুনেছি, যে বান্দা পরিপূর্ণরূপে ভালোভাবে (সমস্ত আদব-কায়দাসহ মাসনূন তরীকায়) অজু করল, তার বিগত ও আগত দিনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বাযযার-মাযমাউয যাওয়ায়েদ ১/৫৪২ : ১২১৬)।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) তাঁর চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.) কে বলেছেন, ‘হে আমার চাচা, আমি কি আপনাকে দান করব না? আপনার প্রতি অনুগ্রহ করব না? আপনাকে মঙ্গলের কথা বলব না? সুপথের সন্ধান দিব না? আপনাকে কি এমন দশটি কাজের কথা বলে দিব না যা করলে আল্লাহ তায়ালা আপনার বিগত ও আগত, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত, ছোট ও বড়, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব গুনাহের কালিমা মুছে দিবেন? অতঃপর নবী (সা.) তাকে সালাতুত তাসবীহ নামক নামাজ শিখিয়ে দেন। (আবু দাউদ ১/১৮৩-১৮৪ : ১২৯৭)।

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) রমজান মাসে রাত্রি জাগরণের জন্য পরামর্শমূলক আদেশ করতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রাত্রি জাগরণ করবে তার পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (মুসনাদে আহমদ : ৭২৩৮)।
উল্লেখিত হাদিসগুলো ছাড়াও এধরনের সুসংবাদবাহী আরও একাধিক হাদিস রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এধরনের নেক কাজে প্রতিযোগিতা করে আমাদের কে পাপ-পঙ্কিলতা মূক্ত একটি সুন্দর আদর্শ ইসলামী জীবন গড়ার তাওফীক দান করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
মনির হাওলাদার ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:০০ এএম says : 0
মুমিনের বৈশিষ্ট্য এই হবে যে, মুমিন আখিরাতের বিষয়ে উচ্চাভিলাষী হবে। ব্যক্তিগত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা এই উচ্চাভিলাষের পথে বাধা হবে না। কারণ, মুমিনের বিশ্বাস, কল্যাণের তাওফীক আল্লাহর পক্ষ হতে আসে। ব্যক্তি শুধু চেষ্টা করতে পারে। চেষ্টার পর ফলাফল আসে আল্লাহর হুকুমে। কাজেই সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করার সামর্থ্য তো মানুষের আছে। সেই চেষ্টার ওপর অচিন্তনীয় ফলাফল দান করা তো আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ।
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৯ এএম says : 0
অন্যের অপরাধ ক্ষমা করতে পারা এবং অপ্রীতিকর বিষয়সমূহ উপেক্ষা করতে পারা। আরবিতে একটি কথা আছে ‘আল আ’ফবু ওয়াসসাফহু’। ‘আল আ’ফবু’ অর্থ অন্যায়ের প্রতিশোধ না নেয়া আর ‘আসসাফহু’ অর্থ অন্যায়কে উপেক্ষা করা। যেন দেখেও না দেখা, শুনেও না শোনা, বুঝেও না বোঝা। আরবি ভাষায় ‘আসসাফহু’-এর সাথে যখন ‘আল জামীল’ বিশেষণটি যুক্ত হয় তখন এর মর্ম দাঁড়ায় ‘সুন্দর উপেক্ষা’। তত্ত¡বিদগণ এর ব্যাখ্যা করেছেন, কারো অন্যায়-অপ্রীতিকর আচরণ এমনভাবে উপেক্ষা করা যে, কষ্ট বা বিরক্তিরও প্রকাশ না ঘটে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর জন্য অনেক শক্তির প্রয়োজন।
Total Reply(0)
Md Najharul Islam ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৯ এএম says : 1
শান্তি ও সফলতার জীবনলাভে যেসকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য গভীর প্রভাবক হয়ে থাকে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্ষমা ও সহনশীলতা।
Total Reply(0)
হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:০০ এএম says : 1
অন্যায়কে উপেক্ষা করা ও ক্ষমা করার যে ফযীলত কোরআন মাজীদ থেকে পাওয়া যায় তন্মধ্যে একটি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও মাগফিরাতের ঘোষণা। যে অন্যকে ক্ষমা করে, অন্যের দোষ-ত্রæটি উপেক্ষা করে আল্লাহ তাআলাও তাকে ক্ষমা করেন ও তার দোষ-ত্রæটি উপেক্ষা করেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন