শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-২

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

ইদানিং আমাদের কতক সালাফি বা আহলে হাদিস বন্ধুকে দেখা যায়, তারা নানা ধরনের লিফলেট বিলি করেন। তাতে লেখা থাকে যে, শবে বরাত (লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান)-এর কোনো ফজিলতই হাদিস শরীফে প্রমাণিত নেই। ওই সব বন্ধুরা শায়খ আলবানী (রহ.)-এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। কেননা, তাদেরকে আলবানী (রহ.)-এর বড় ভক্ত মনে হয় এবং তার কিতাবাদি অনুবাদ করে প্রচার করতে দেখা যায়।

আমরা ওইসব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শায়খ ইবনে বাযের অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্কীক মতো এই রাতের ফজিলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকিহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদিসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফজিলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরনের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে?

এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলিলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার ঊর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন?
এতে তো কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা, আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?

আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহ.)-এর লাতায়েফুল মায়ারেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলিলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শায়খ ইবনে বায (রহ.) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত?

যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোনো বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
এই রাতের আমল : উল্লেখিত হাদিস শরীফে এ রাতের কী কী আমলের নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা আমরা ইতঃপূর্বে উল্লেখ করেছি। নিম্নে এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস পেশ করা হলো।

হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহ.) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোনো রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (স) তখন ইরশাদ করলেন : এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। [শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮]

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওযীফার বই-পুস্তকে নামাজের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে, এগুলো ঠিক নয়।

হাদিস শরীফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হলো, নফল নামাজের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কোরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইসতেগফার করা। দুয়া করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামাজ জামায়াতের সাথে পড়া সম্ভব হলো না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন