আরবি ভাষায় ‘যালযালা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়া, ঝাড়া দেয়া, থর থর করে ভূকম্পিত হওয়া। এই শব্দটি আল কোরআনে বিভিন্নরূপে ছয় বার এসেছে। (ক) ‘যালযালাতা’ রূপে একবার। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক ব্যাপার’। (সূরা আল হাজ্জ : ১)। এই আয়াতে কারীমা সফর অবস্থায় নাজিল হলে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) উচ্চস্বরে-এর তিলাওয়াত শুরু করেন। সফরসঙ্গী সাহাবায়ে কেরাম তাঁর আওয়াজ শ্রবণ করে এক স্থানে সমবেত হয়ে গেলেন। তিনি সকলকে সম্বোধন করে বললেন : এই আয়াতে উল্লেখিত কেয়ামতের ভূকম্পন কোন দিন হবে তোমরা কি জান? সাবাহায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : এটা সেই দিন হবে, যেদিন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আদম (আ.) কে সম্বোধন করে বললেবন : যারা জাহান্নামে যাবে তাদেরকে উঠাও? আদম (আ.) জিজ্ঞেস করবেন, কারা জাহান্নামে যাবে? উত্তর হবে, প্রতি হাজারে নয় শত নিরানব্বই জন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বললেন : এই সময়েই ত্রাস ও ভীতির আধিক্য হেতু বালকরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে। গর্ভবর্তী নারীদের গর্ভপাত হয়ে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম একথা শুনে ভীত বিহ্বল হয়ে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে কে মুক্তি লাভ করবে? তিনি বললেন : তোমরা নিশ্চিত থাক। যারা জাহান্নামে যাবে, তাদের এক হাজার ইয়াজুজ-মাজুজের মধ্য থেকে এবং একজন তোমাদের মধ্যে থেকে হবে। কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে, সে দিন তোমরা এমন দুই সম্প্রদায়ের সাথে থাকবে যে, তারা যে দলে ভিড়বে সেই দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। একটি ইয়াজুজ-মাজুজের সম্প্রদায় এবং অপরটি ইবলিস ও তার দলবল ও আদম সন্তানদের মধ্যে যারা তোমাদের পূর্বে মারা গেছে, তাদের সম্প্রদায়। (জামেয়ে তিরমিজী : ৩১৬৯)।
বস্তুত কেয়ামত দু’টি পর্যায়ে বিভক্ত। এতদসম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আকাশ মণ্ডলী ও জমিনের সকলেই মূর্ছিত হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাত তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে’। (সূরা আয জুমার : ৬৮)।
এই আয়াতের আলোকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, কেয়ামতের দু’টি পর্যায় রয়েছে। যথা : (ক) ইস্রাফিল কর্তৃক প্রথম বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া। এই ফুঁক দেয়া মাত্রই সব কিছু কম্পিত হতে হতে ধ্বংস হয়ে যাবে। সে মহা ধ্বংসের কথা আল্লাহপাক আল কোরআনের বিভিন্নস্থানে উল্লেখ করেছেন এবং এটা কেয়ামতের প্রাথমিক কাজ হিসেবে গণ্য হবে। সে সময় পৃথিবী পৃষ্ঠে বসবাসকারীরা যে অবস্থার সম্মুখীন হবে তার চিত্র আল কোরআনে এভাবে অঙ্কন করেছেন। যেমন (১) ‘যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে এবং জমিন ও পাহাড় তুলে এক আঘাতে ভেঙ্গে দেয়া হবে, তখন সে বিরাট ঘটনাটি ঘটে যাবে’। (সূরা আল হাক্কাহ : ১৩-১৫)।
(২) ‘যখন পৃথিবীকে পুরোপুরী প্রকম্পিত করে দেয়া হবে এবং সে তার পেটের বোঝা বের করে ছুঁড়ে ফেলে দিবে আর মানুষ বলবে, এর কি হলো।’ (সূরা আয যালযালাহ : ১-৩)। (৩) ‘যে দিন প্রকম্পনের একটি ঝটকা একেবারে নাড়িয়ে দেবে এবং তারপর আসবে দ্বিতীয় ঝাটকা। সে দিন অন্তর কাঁপতে থাকবে এবং দৃষ্টি ভীতি বিহ্বল হবে। (সূরা আন্ নাযিয়াত : ৫-৯)।
(৪) ‘যে দিন পৃথিবীকে মারাত্মকভাবে ঝাঁকিয়ে দেয়া হবে এবং পাহাড় গুড়ো হয়ে ধূলির মতো উড়তে থাকবে’। (সূরা আল ওয়াকিয়াহ : ৪-৬)। (৫) ‘যদি তোমরা নবীর কথা না মানো, তাহলে সে দিনের বিপদ হতে কেমন করে রক্ষা পাবে, যা বাচ্চাদের বুড়ো করে দেবে এবং যার প্রচণ্ডতায় আকাশ ফেটে চৌচির হয়ে যাবে?’ (সূরা আল মুয যাম্মিল : ১৭-১৮)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন