মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মুহাররাম আল্লাহর মাস

মাওলানা আবদুল মালেক | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

মুহাররম মাসের হেলাল দেখা গেছে এবং নতুন চান্দ্রবর্ষ শুরু হয়েছে। সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহর, যিনি আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করেছেন এবং নতুন একটি মাস ও বছরের সূচনায় আমাদেরকে পৌঁছে দিয়েছেন।

নতুন বছর, নতুন মাস, নতুন সপ্তাহ এবং প্রতিটি নতুন দিন ও রাত আমাদের জীবনের অংশ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের স্বতন্ত্র নিআমত। এগুলোর জন্য স্বতন্ত্রভাবে শোকর আদায় করা দরকার। নতুন নতুন সংকল্প ও প্রত্যয়ে এগুলোকে বরণ করা দরকার। কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন। (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। (সূরা ফুরকান : ৬২)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, পবিত্রতা ঈমানের অংশ। ‘আলহামদু লিল্লাহ’ মীযানের পাল্লাকে ভরে দেয়। ‘সুবহানাল্লাহ ও আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান-যমীনের মধ্যস্থ শূন্যতাকে ভরে দেয়। সালাত হলো নূর। সদকা হলো দলিল। সবর হচ্ছে আলো। কোরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে প্রমাণ। প্রতিটি মানুষ সকাল যাপন করে; অতপর কেউ নিজেকে (আল্লাহর আনুগত্যে) নিয়োজিত করে জীবনকে রক্ষা করে। আর কেউ (নফস ও শয়তানের আনুগত্যে নিয়োজিত করে) নিজেকে ধ্বংস করে। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ২২৩)।

সৌভাগ্যবান তো সেই ব্যক্তি যে প্রতিটি নতুন সময় ও সূচনায় নিজেকে এমন কাজে নিয়োজিত করে, যার মাধ্যমে আখেরাতে মুক্তি পাওয়া যায়। দুর্ভাগা সেই ব্যক্তি, যে নতুন সময় ও সূচনায় এমন কাজকর্মে লিপ্ত হয়, যা তার ধ্বংস টেনে আনে।

মুহাররম চান্দ্রবছরের প্রথম মাস। সম্মানিত চার মাসের তৃতীয় মাস। হাদীস শরীফে এ মাসের অনেক ফজিলতের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও তাওবা ইসতিগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমযানের পর সবচে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাসের রোজা, যে মাসকে তোমরা মুহাররম নামে চেন। আর ফরয নামাজের পর সবচে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ।’ (সহীহ মুসলিম : হাদীস ১১৬৩)।

এই হাদীসে লক্ষণীয় বিষয় হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) মুহাররম মাসকে বলছেন ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস। জানা কথা, সকল মাসই আল্লাহর মাস। এর পরও কোনো এক মাসকে আল্লাহর মাস বলার রহস্য কী? রহস্য হলো, এই মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সেজন্যই তাকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। যেমন দুনিয়ার সব ঘরই আল্লাহর ঘর। কিন্তু সব ঘরকে বাইতুল্লাহ বলা হয় না।

মুহাররমের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফজিলত হলো, এর সঙ্গে তাওবা কবুলের ইতিহাস যুক্ত। মুসনাদে আহমাদ ও জামে তিরমিযীতে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে’ এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ‘আল্লাহর রাসূল! রমযানের পর আপনি আমাকে কোন্ মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দেন?’ উত্তরে নবী (সা.) বললেন, ‘তুমি যদি রমযানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোজা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। সেই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরও মানুষের তাওবা কবুল করবেন।’ -জামে তিরমিযী : হাদীস ৭৫১)।

এই হাদীসে যেই দিনের দিকে ইশারা করা হয়েছে খুব সম্ভব সেটি আশুরার দিন। তবে বান্দার উচিত বছরের সব দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। বিশেষ করে এই মাসের প্রতিটি দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া। আর আশুরার দিন অনেক বেশি ইসতিগফার করবে।

ইসতিগফারের জন্য সবচে’ উত্তম হলো কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত ইসতিগফার বিষয়ক দুআগুলো বুঝে বুঝে মুখস্থ করবে। সেই দুআগুলোর মাধ্যমে রাব্বে কারীমের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তবে নিজের ভাষায় নিজের মতো করে ইসতিগফার করলেও ঠিক আছে। কারণ আল্লাহ সকল ভাষারই ¯্রষ্টা। তিনি সবার কথা বুঝেন। সকলের আরজি কবুল করেন।

কোরআনে কারীমে বর্ণিত কিছু ইস্তিগফারের বাংলা অনুবাদ দেয়া হলো : (১) হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করে ফেলেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও আমাদের প্রতি রহম না করেন তাহলে অবশ্যই আমরা অকৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আরাফ : ২৩)।
(২) হে আমার প্রতিপালক! আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন ও আমার প্রতি দয়া না করেন তাহলে আমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা হুদ : ৪৭)।

(৩) হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (সূরা কাসাস : ১৬)।
(৪) হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রæটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী। (সূরা আম্বিয়া : ৮৭)।

(৫) হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল ঈমানদারকে ক্ষমা করুন। (সূরা ইবরাহীম : ৪১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
কে এম শাকীর ২৩ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৫ এএম says : 0
হিজরী সনের সূচনালগ্নে সবাইকে শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাই। জীবনের সব ক্ষেত্রে হিজরী সনের প্রতি গুরুত্বারোপ করার জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ২৩ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৬ এএম says : 0
হিজরী সনের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব ও গুরুত্ব আছে। বিশেষত ইবাদতের তারিখ, সময় ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরী সনের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম।
Total Reply(0)
বাতি ঘর ২৩ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৬ এএম says : 0
হিজরী সন আরবি মাস হলেও এই সনটিকে মুসলিম উম্মাহর সন হিসেবেই গ্রহণ করার প্রয়োজন অনেক বেশি। হিজরী সন মূলত চান্দ্র বর্ষের মাস। আরবিতে 'আশশুহূরুল কামারিয়্যা' বলা হয়। এ জন্য হিজরী সন একটি চান্দ্রবর্ষ। যেমন ঈসায়ী সনের মাসগুলোকে বলা হয় 'আশশুহূরুশ শামসিয়্যা' বা সৌরবর্ষের মাস। এই চান্দ্রবর্ষকে তাই কেবল আরবদের সন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। বরং হিজরী মুসলমানদের সন:ইসলামের সন।
Total Reply(0)
কল্যাণমূলক চেতনা ২৩ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৬ এএম says : 0
হিজরী সন শুধু আরবদের নয়। হিজরী মুসলমানদের সন,ইসলামের সন।
Total Reply(0)
M.A Hassan imam ২৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:২২ পিএম says : 0
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের স্বতন্ত্র নিআমত।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন