রবিউল কমল
বিজ্ঞান বিভাগের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ বুয়েট। বুয়েটে ভর্তি হওয়া মানে স্বপ্ন পূরণে একধাপ এগিয়ে যাওয়া বলে মনে করে শিক্ষার্থীরা। তাই বুয়েটে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই প্রস্তুতিটা থাকতে হবে অনেক বেশি। ভালো প্রস্তুতি ছাড়া এ যুদ্ধ জয় করা মোটেও সম্ভব নয়। অনেকেই মনে করেন, বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা মানেই কঠিন সব প্রশ্ন। ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও সে রকম নয়। ভর্তি পরীক্ষায় বেশিরভাগ প্রশ্নই আসে মূল বই থেকে। হয়তো একটু এদিক- ওদিক করে। যারা ভালো করে মূল বই পড়ে, তাদের সুযোগ বেড়ে যায়। কিন্তু যারা মূল বইয়ের খুঁটিনাটি না জেনে বাঁধাধরা মুখস্থবিদ্যার ওপর ভরসা রাখে, তাদের জন্য বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা অনেকটা এভারেস্ট টপকানোর মতোই কঠিন! কারণ এখানে একজন শিক্ষার্থীর মৌলিক জ্ঞান যাচাই করা হয়।
ভর্তি পরীক্ষা
বুয়েটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২ অক্টোবর। এবছর বুয়েটে প্রায় ১০৩০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
একটু আলাদা
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা থেকে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ধরন একেবারেই আলাদা। আগে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা হতো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত আর ইংরেজিÑ এই চারটি বিষয়ে। গেল দুই বছর থেকে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি থাকছে না। তার মানে গুরুত্ব দিতে হবে বাকি তিনটি বিষয়েই। তিনটি বিষয়েই ২০০ নম্বর করে মোট ৬০০ নম্বরের এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা হবে।
পদার্থবিজ্ঞান : মনে রাখতে হবে সূত্র
তপন, ইসহাক, গিয়াসউদ্দিন স্যারের বই পড়তে পারো। যা-ই পড়ো না কেন, পুরো বই ভালোভাবে রপ্ত করো। গাণিতিক সমস্যাগুলো খুব ভোগায়। যত বেশি চর্চা করবে, তত দ্রুত উত্তর দিতে পারবে। প্রথম পত্রে গতিবিদ্যাসহ প্রতিটি অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় পত্রে চুম্বক, তড়িৎ শক্তি, তাপ, শব্দ, আলোÑ এসব অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতি বছর রচনামূলক প্রশ্ন থাকে। আর পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিটি অধ্যায়ের খুঁটিনাটি বিষয় বুঝে পড়তে হবে। ক্যালকুলেটরে দ্রুত সমাধান করার চর্চা করতে হবে। সূত্রগুলো মনে রাখতে হবে। কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে দ্বিধা করবে না।
গণিত : মূল বই থেকে হুবহু প্রশ্ন
পদার্থবিজ্ঞানের মতো এখানেও দু-তিনটি বইয়ের অঙ্ক করতে পারলে ভালো। ক্যালকুলাস, দ্বিপদী ধারার যোগফল, সম্ভাব্যতা প্রভৃতি অধ্যায় থেকে প্রশ্ন থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, মূল বইয়ের প্রশ্ন হুবহু তুলে দেয়া হয়। গণিত প্রথম পত্রে জটিল সংখ্যা ও ত্রিকোণমিতির ওপর জোর দিতে হবে। ত্রিকোণমিতির সূত্রগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার যোগসূত্র আছে। বীজগণিতের প্রশ্নগুলো একটু ঘুরিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে তাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দ্রুত গণিত সমাধানের জন্য ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিতে হয়। সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের ব্যবহার ভালোভাবে শিখে নাও। না হলে পরীক্ষার হলে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। বলবিদ্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকেরই। একটু বুঝে অঙ্কগুলো করতে পারলেই এতে ভয় থাকার কথা নয়।
রসায়ন : বিক্রিয়া ও সংকেত বেশি বেশি
প্রথম পত্রে হাজারী নাগ ও কবির স্যারের বই দুটি ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। গাণিতিক সমস্যার জন্য কবির স্যারের বই অনুসরণ করতে পারো। বিভিন্ন রাসায়নিক নাম, বিক্রিয়া, পারস্পরিক রূপান্তর, নামকরণ বা সংকেত থেকে প্রশ্ন থাকে বেশি। সংকেত, রূপান্তর, বিক্রিয়া ইত্যাদি ছক করে পড়লে মনে রাখতে সুবিধা হবে। বইয়ের যে লাইনগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে সঙ্গে সঙ্গেই আন্ডারলাইন করে রাখবে। অনেকে দ্বিতীয় পত্রে একটু সমস্যায় পড়ে। অনেক বিক্রিয়া ও সংকেত আছে, যা সহজে মনে রাখা যায় না। এজন্য রসায়নের বিক্রিয়া ও সংকেতগুলো বার বার পড়তে হবে। দ্বিতীয় পত্রে প্রচুর বিক্রিয়া, পরীক্ষাগার প্রস্তুতি, শিল্পোৎপাদন, সংকেত, রূপান্তর পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে হাইড্রোকার্বন, অ্যামিন, অ্যারোমেটিক যৌগগুলোর রসায়ন, জৈব যৌগের সূচনা, অ্যালডিহাইড, কিটোন অধ্যায় ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। জৈব রসায়নের প্রতিটি অধ্যায় ধারাবাহিকভাবে পড়ে যেতে হবে।
প্রতিটি বিষয়ে পড়বে দুজন লেখকের বই
এখনকার প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাতে হবে। এ সময়টায় মনে একটু ভয় কাজ করতে পারে। মনে হতে পারে, যা পড়েছি সব ভুলে যাচ্ছি। আবার অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেÑ এ সময় কার বই পড়ব, কোন বই পড়ব। কোন লেখকের বই পড়বে সেটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রতিটি বিষয়ে অন্তত দুজন লেখকের বই ভালোভাবে বুঝে পড়লে কাজে দেবে। পদার্থবিজ্ঞান প্রস্তুতির জন্য অন্তত দুজন লেখকের বইয়ের সব ম্যাথ সলভ করা উচিত। শাজাহান-তপন স্যারের বইটা দেখা যেতে পারে। আবু ইসহাক-তোফাজ্জল হোসেন স্যারের বইটাও দেখতে পারো। যেকোনো বিষয়ের বই পড়ার সময় কোনো নতুন তথ্য কিংবা ব্যতিক্রম কিছু পেলে খাতায় লিখে রাখতে হবে। পরীক্ষার আগে পুরো বই পড়া সম্ভব হয় না। পরীক্ষার আগের দিন তাতে চোখ বুলিয়ে নিলে অনেক কাজ হবে।
কাজে দেবে মডেল টেস্ট
এ সময়টায় বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে পারো। এতে করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে যাবে। তবে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় কোনো প্রশ্নই খুব একটা রিপিট হয় না। ৩০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় সময় থাকে মাত্র দেড় ঘণ্টা। যারা দ্রুত লিখতে পারে, তাদের জন্য ভালো। ঘড়ি ধরে লিখিত পরীক্ষার অনুশীলন করলে কাজে দেবে। ভর্তি পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর করা যাবেÑ ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। অনেক সময় কম উত্তর করেও সুযোগ পাওয়ার নজির আছে। একটা প্রশ্ন না পারা গেলে তার জন্য সময় নষ্ট না করে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তরে চলে যেতে হবে। উত্তর দেয়ার সময় অবশ্যই প্রশ্নের নম্বর মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ পরীক্ষা ভালো দিলেও নম্বরে মিল না থাকলে সব পরিশ্রমই প- হয়ে যাবে।
পরীক্ষা যখন এমসিকিউ
সাবধান থাকতে হবে এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ব্যাপারেও। কারণ এমসিকিউ উত্তরের ক্ষেত্রে প্রতি চারটি ভুলের জন্য একটি সঠিক উত্তরের নম্বর কাটা যাবে। তাই অনুমাননির্ভর উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। অঙ্কে একটু বেশি সময় লাগতেই পারে। তাই বলে অর্ধেক করে ছেড়ে দেয়া যাবে না। পুরোটা শেষ করেই অন্য প্রশ্নে যাওয়া উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন