পূর্ব প্রকাশিতের পর
রাসূল (সাঃ) উত্তরে বললেন, ‘তুমি এই কথা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসূল। আর নামাজ কায়েম করবে, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে যাকাত আদায় করবে, কুপ্রবৃতি দমনের লক্ষ্যে রমজান মাসব্যাপী রোজা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ শরীফে পৌছার সামর্থ হলে হজব্রত পালন করবে।’ (বোখারী-মুসলিম)।
একজন মুসলমানকে অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন কারতে হবে এবং সেই আন্তরিক বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধানের প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান রুকন হচ্ছে ঈমান। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার প্রতি এই মর্মে ঈমান আনা যে, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তার সমস্ত গুণবাচক নামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং ইহাও বিশ্বাস করা যে, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ পূত-পবিত্র, সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত। আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস রাখা। তাঁর নাযিলকৃত কিতাবসমুহের উপর ঈমান আনা। তাঁর রাসূল গণের প্রতি এই মর্মে বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ তায়ালা সকল নবী রাসূলগণকে তাঁর বান্দাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন। তারা সবই সত্য ও ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাদের প্রত্যেকটি হুকুম আল্লাহ তায়ালারই হুকুম, তাদের প্রত্যেকটি হিদায়াত আল্লাহ তায়ালারই হিদায়াত। তাদের জরুরী ও সর্বোচ্চ নির্দেশাবলীকে সমষ্টিগতভাবে পরিপূর্ণ করে নবী রাসূলগণের সরদার হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) এর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-ই সর্বশেষ নবী। তিনির পরে আর কোন নবী আগমণ করবেন না। তাকদীরের ভালো-মন্দ সকল কিছু আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হয় এবং এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট কিতাবে ‘লাওহে মাহফুজে’ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এসব বিষয়ের উপর বিশ্বাস রাখা ঈমানের শর্ত। এরপর নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমজান মাসে রোজা রাখা, সামর্থবান হলে কাবাগৃহে হজ করা। এই বিষয়গুলো হচ্ছে ইসলামের মূল ভিত্তি। এছাড়াও নিজের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনে লেনদেন আচার-ব্যবহারে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এক কথায় সার্বিকভাবে আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় বিধি-বিধান ও রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহ মোতাবিক ব্যবহরিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার নামই ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর প্রদর্শিত আদর্শের পরিপন্থী যাবতীয় কুফুরী, মুনাফিকী, বিদআতী ও ফাসিকী ইত্যাদি আকীদা ও কর্ম বর্জন করে একাগ্রচিত্তে একক আল্লাহর গোলামী ও দাসত্ব অবলম্বন করতে হবে। এসব বিধি-বিধানগুলো যিনি জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে পালন করবেন তিনিই প্রকৃত মুসলিম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রæ।’ (সূরা বাকারা ২০৮)। সুতরাং মুমিনের কর্তব্য হলো, পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করা এবং জীবনের সকল অঙ্গনে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও বিধানের চর্চায় ব্রতী হওয়া। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘ধর্মের ব্যাপারে কোন সবদস্তি নেই।’ কেউ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চায় না; তাহলে তাকে জবরদস্তি করে ইসলামে আনার কোন বিধান নেই।
ইসলামের নবী, বিশ্বমানবতার নবী, সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লহ (সাঃ) ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি মুর্খ, অশান্ত, জাহেলী, বর্বর সমাজকে আদর্শ সমাজে রূপান্তর করেছিলেন। তিনি মানুষকে দুনিয়াতে শান্তি-নিরাপত্তার সাথে জীবনযাপনের পাশাপাশি পরকালীন জীবনে জান্নাতলাভের পথ ও পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। সেই যুগের মানুষ কোন রকম জবরদস্তি ছাড়াই ইসলামের শাস্যত বিধানের প্রতি বিমোহিত হয়ে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রীত হয়ে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ বা তার চেয়ে বেশী মানুষ মুসলমান। ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১.৮ বিলিয়ন বা ২৪.১% মুসলমান। পৃথিবীর প্রায় ৫৬টি দেশ মুসলিম প্রধান। আমাদের বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৫টি দেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী।
আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, একমাত্র ইসলাম ধর্মই আল্লাহর কাছে মনোনীত ও গ্রহণযোগ্য ধর্ম। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহ পাকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং যারা ধর্মের নামে আল্লাহর সন্তান সন্ততি ধারণা করে, মূর্তি পুজা করে, মানুষকে প্রভু অথবা প্রভুকে মানুষ মনে করে, নবী রাসূল মানে না, কুরআন মানে না, হাদীস মানে না, রাসূলের আনীত নির্দেশনাদীকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, গাছ-পালা, পশু-পাখি পাথর প্রতিমা চন্দ্র সূর্য নক্ষত্রের পূজা করে, নিজের অভিরুচি এবং প্রবৃত্তির তাগাদাই যাদের হালাল হারামের মানদন্ড তারা কখনো প্রকৃত ধর্মের অনুসারী হতে পারে না।
শিক্ষক : জামেয়া আনওয়ারে মদিনা, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন