চট্টগ্রামে গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। দাঁড়িয়ে-গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়েও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা মানছেন না বেশির ভাগ বাস, মিনিবাস ও টেম্পু চালক। বেশি ভাড়া আদায় করা নিয়ে যাত্রীদের সাথে চালক-সহকারীদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। পথে পথে বিশৃঙ্খলা আর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। বেশি ভাড়া দিতে গিয়ে বিপাকে স্বল্প আয়ের লোকজন।
করোনায় গত ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। ১ জুন অর্ধেক আসন খালি রাখার শর্তে বাসসহ গণপরিবহন চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাড়া ভাড়ানো হয় ৬০ শতাংশ। কিন্তু বেশির ভাগ গণপরিবহন প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে আগের নিয়মে যাত্রী পরিবহন ও ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। তবে চট্টগ্রামে সরকারের এ সিদ্ধান্ত অনেকে মানছে না। স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরিই উপেক্ষিত।
যাত্রীদের অভিযোগ আগের নিয়মে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা থাকলে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী তোলা হয়েছে বাস, মিনিবাসে। ভাড়াও আদায় করা হয়েছে দ্বিগুণ। এখন যাত্রী তোলার হার আরো বেড়েছে। তবে আগের ভাড়ায় ফিরতে চাইছেনা বেশির ভাগ গণপরিবহন। রাস্তা ভাঙ্গা, যানজট, পরিবহন সঙ্কটসহ নানা অজুহাতে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাসে নেই কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা। চালক হেলপারদের মুখে নেই মাস্ক। অফিস শুরু আর ছুটির সময় বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে।
নগরীর পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেড পর্যন্ত টেম্পু ভাড়া ১০ টাকা। তবে আদায় করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের জন্য সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ইপিজেড পর্যন্ত সড়কে তীব্রজটের অজুহাতে এখনও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
কাটগড় থেকে ইপিজেড রুটের বাস এবং টমটমেও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে একই অজুহাতে। কাটগড় থেকে ইপিজেড হয়ে অলঙ্কার রুটের বাস-মিনিবাসেও ভাঙ্গা রাস্তার অজুহাতে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা। চালক, সহকারীরা বলছেন, পোর্ট কানেকটিং রোডের কাজ শেষ না হওয়ায় নগরীর হালিশহর থেকে অলঙ্কার মোড় পর্যন্ত আসা-যাওয়ায় তীব্রজটে আটকা পড়তে হচ্ছে। এতে তাদের আয় কমে গেছে। আর তা পুষিয়ে নিতে তারা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। কোন কোন বাস আগের নিয়মে ভাড়া নিলেও নির্ধারিত গন্তেব্য যাচ্ছে না। তারাও বিধস্ত সড়কে দুর্ভোগকে অজুহাত হিসাবে দাঁড় করাচ্ছে। এতে যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে আগের মতো দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে। নগরীর প্রায় প্রতিটি রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মহানগরী থেকে জেলার বিভিন্ন রুটের গণপরিবহনেও চলছে ভাড়া নৈরাজ্য।
যাত্রীরা রীতিমত জিম্মি পরিবহন শ্রমিকদের কাছে। করোনা দুর্যোগে এমনিতেই আয় রোজগার কমে গেছে। তার উপর অতিরিক্ত ভাড়া দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ। পৌনে এক কোটি মানুষের এই মহানগরীর বাসিন্দাদের বিরাট অংশ গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল।
এদিকে বেশি ভাড়া আদায় রোধ এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবার নগরীর সিটি গেইট, ওয়াসা মোড় ও চকবাজারে অভিযান চালিয়ে ৩৯টি গণপরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা করে ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসময় জব্দ করা হয় ১০টি যানবাহন। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুর রহমান, শান্তনু কুমার দাশ ও নূরে জামান চৌধুরী এ অভিযান পরিচালনা করেন।
আগের দিন জেলা প্রশাসনের অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় নগরীর আন্দরকিল্লা ও লালদীঘি এলাকায় দুই বাস চালক ও ১১ যাত্রীকে জরিমানা করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন