নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর জিজ্ঞাসাবাদের সামনে ড্রাগ-চ্যাটের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন ও শ্রদ্ধা কাপুর- এমনই জানা যাচ্ছে বিভিন্ন রিপোর্ট সূত্রে। সূত্রের খবর, যে মাদক চ্যাট গ্রুপের কথোপকথনের ভিত্তিতে সুশান্ত সিং রাজপুতের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী মাদক-যোগসূত্র প্রকাশ্যে এসেছিল, সেই গ্রুপে মাদক সংক্রান্ত চ্যাটের কথা স্বীকার করেছেন ‘পদ্মাবত’ অভিনেত্রী। একইভাবে সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে পার্টিতে যাওয়ার কথা এবং ড্রাগ-চ্যাটের অভিযোগ মেনে নিয়েছেন শ্রদ্ধা কাপুর। তবে দুই অভিনেত্রীরই দাবি, তারা কখনই মাদক সেবন করেননি। বলিউডের ‘পদ্মাবতী’ দীপিকা পাড়ুকোন গতকাল এনসিবি-র দুঁদে অফিসারদের জেরায় জর্জরিত হন টানা সাড়ে ৫ ঘণ্টা। এরপর ডিআরডিও গেস্ট হাউজ থেকে ছাড়া পান। মাদক কান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এদিন দীপিকাকে তলব করে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। এনসিবি সূত্রে জানা যায়, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে দীপিকার ফোন। এ ফোন থেকেই ২০১৭ সালে ট্যালেন্ট ম্যানেজার কারিশ্মা প্রকাশের সঙ্গে মাদক নিয়ে চ্যাট করেছিলেন দীপিকা। সিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিনেত্রীর ফোন খতিয়ে দেখা হবে।
সূত্রের খবর, দীপিকার জেরা এখনও সম্পন্ন হয়নি, তার জন্য এনসিবি একটি প্রশ্নের তালিকা তৈরি করেছিল। গতকালকের জিজ্ঞাসাবাদে সব প্রশ্ন করা যায়নি। তবে আপাতত এখনই দীপিকাকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। পরবর্তীতে তদন্তের খাতিরে প্রয়োজন হলে তাকে ফের তলব করা হবে।
এনসিবি’র জেরার মুখে ড্রাগ চ্যাটের কথা স্বীকার করে নেন দীপিকা পাড়ুকোন। তবে মাদক সেবনের কথা তিনি স্বীকার করেননি বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, দীপিকার ট্যালেন্ট ম্যানেজার কারিশ্মা প্রকাশের সঙ্গে নায়িকার যে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট প্রকাশ্যে এসেছিল সেখানে ‘ডি’ নামের ব্যক্তি যে দীপিকাই তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ‘পদ্মাবতী’। তবে এর সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, মাদক সেবন তিনি করেননি।
আগেই জানা গিয়েছিল, ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন দীপিকা নিজে। সেখানে ড্রাগস নিয়েই কথাবার্তা হত। সেই গ্রুপে ছিলেন কারিশ্মা ও সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার জয়া সাহাও। সেই গ্রুপে মাদক সংক্রান্ত কথা বললেও মাদক গ্রহণ করেননি বলেই দাবি নায়িকার।
অন্যদিকে, এনসিবি’র অন্য একটি দফতরে এদিন জেরা করা হয় শ্রদ্ধা কাপুর এবং সারা আলি খানকে। সেখানেও ড্রাগ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন শ্রদ্ধা ও সারা। তারা জানিয়েছেন, সুশান্তের লোনাভলার ফার্ম হাউজে তারা উপস্থিত ছিলেন, সেখানে ড্রাগস পার্টিও হয়েছিল, কিন্তু তারা মাদক সেবন করেননি। সুশান্ত আর সারার পুরনো ফার্ম হাউজের ভিডিও দেখিয়ে জেরা করেছে এনসিবি।
এর আগে চরম নাটকীয়তার মধ্যে এনসিবি দফতরে পৌঁছেন দীপিকা। ঠিক সকাল ১০টায় পূর্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এনসিবি দফতরে হাজিরা দিতে উপস্থিত হন ‘পদ্মাবতী’। মিডিয়ার চোখে ধুলো দিতে নিজের বাড়ি থেকে বেরোননি তিনি। ছিলেন একটি পাঁচতলা হোটেলে। দীপিকার এ মাস্টারস্ট্রোক সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারেনি সংবাদ মাধ্যম। গতকাল সকালে সেই হোটেল থেকে বেরিয়ে কোনও আড়ম্বর ছাড়াই ছোট একটি গাড়িতে এনসিবি দফতরে পৌছেন তিনি।
অন্যদিকে, তার বাড়ির সামনে ভিড় করেছিল মিডিয়া। দীপিকা জানতেন, বাড়ি থেকে বেরলেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তাকে। তাই সংবাদ মাধ্যমকে বোকা বানাতে বাড়ির সামনে নিজের গাড়িটি দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।
আগের দিন গোয়া থেকে মুম্বাই ফেরার দিনেও এমনই ধোঁয়াশা তৈরি করেন বলিউডের এক নম্বর নায়িকা। বারবার বিমানের সূচি বদল করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত বিমানে স্বামী রণবীর সিংয়ের হাত ধরে মুম্বাই নামেন তিনি গভীর রাতে।
সারা আলি খানের বেলা ১১টায় পৌঁছনোর কথা থাকলেও দুপুর ১টায় মুম্বাইয়ে এনসিবি-র ব্যালাড এস্টেটের অফিসে পৌঁছেন। গোলাপি সালোয়ার ও সাদা পালাজোতে তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে সামিল হতে হাজির হন সারা। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আসার আগে আইনি পরামর্শও নিয়েছেন অভিনেত্রী। এছাড়াও সারাকে নিয়ে আলাদা করে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন সাইফ আলি খানও।
কেদারনাথ সিনেমায় সুশান্ত সিং রাজপুতের বিপরীতে ছিলেন সারা আলি খান। শুটিংয়ের সময় সারা ও সুশান্তের মধ্যে সম্পর্ক শুরু হয় বলে জানা গেছে। সে নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি সারা। সুশান্ত ঘনিষ্ঠদের দাবি, দু’জনে থাইল্যান্ড বেড়াতেও গিয়েছিলেন। সুশান্তের ফার্ম হাউসেও নাকি সারার নিয়মিত আনাগোনা ছিল। তবে আচমকাই তাদের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। প্রসঙ্গত, একটি চ্যাট শো-তে সারাকে প্রথম সিনেমার নায়কের সঙ্গে ‘প্রেম’ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন কারিনা কাপুর খান।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর বলিউডের ড্রাগ যোগ তদন্ত শুরু করেছে এনসিবি। সেই তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই দীপিকাকে ডেকে পাঠানো হয়। শুক্রবার কেন্দ্রীয় এ এজেন্সির তরফে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রাকুলপ্রীত সিং, দীপিকার ম্যানেজার কারিশ্মা প্রকাশ এবং ধর্ম প্রোডাকশনসের কার্যনির্বাহী প্রোডিউসার খিতিজ রবিকে।
এনসিবির সূত্রে জানানো হয়েছে, সেপ্টেম্বরের ৬ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে মাদক যোগ কান্ডে আটক রিয়া চক্রবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের সময় সারা আলি খান, রাকুলপ্রীত সিং, সিমোন খামবাট্টার নাম জানিয়েছেন। এনসিবির তরফে ড্রাগ নিয়ে তদন্ত চলাকালীন দুটো এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ইডির বাজেয়াপ্ত করা রিয়ার ফোনে মাদক চ্যাটের জন্য রিয়াসহ মোট ছয় জনের নামে এফআইআর করা হয়। দ্বিতীয়টি আবার সুয়োমোটা ধারায় বলিউডের মাদক যোগের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়।
এর আগে এনসিবি ডিরেক্টর কেপিএস মালহোত্রা জানিয়েছেন, শ্রদ্ধা কাপুরকে দুই এফআইআরের ভিত্তিতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সূত্র : দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নিউজ১৮।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন