শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জাতীয় শোক দিবস

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসনির্ণীত শ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের সদস্যসহ শাহাদাত বরণ করেন। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী, উচ্ছৃঙ্খল সদস্য তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশের স্থপতি ও প্রেসিডেন্টকে এমন নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাফল্য ব্যর্থতার গঠনমূলক মূল্যায়ন হতেই পারে। তবে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার পরিবর্তে তাকে হত্যা করার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার মতো ভয়াবহ পন্থা অবলম্বন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জাতি তা গ্রহণ করেনি, মেনে নেয়নি। বিলম্ব হলেও তার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকজনের সর্বোচ্চ দ- কার্যকর হয়েছে। অন্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে। তাদের দ- কার্যকর হলে ইতিহাসের এই কলঙ্ক কতকটা হলেও মোচন হবে।
বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু তার আদর্শ আছে, তার স্বপ্ন-প্রত্যাশা আছে, আছে তার প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। তার আদর্শ তার জীবন-কর্মের মধ্যেই বিধৃত হয়ে আছে। তার স্বপ্নের কথা, প্রত্যাশার কথাও কারো অজানা নেই। কী ধরনের দেশ ও সমাজ তিনি কামনা করতেন, তার আত্মজীবনী পড়লে সম্যক উপলব্ধি করা যায়। তিনি স্বাধীন দেশ এবং শান্তি ও সহাবস্থানমূলক সমাজের প্রত্যাশা করতেন। এ প্রত্যাশা পূরণের জন্যই তিনি জীবনব্যাপী রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনিই আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার কাজ শুরু করেছিলেন, যা শেষ করে যেতে পারেননি। ঘাতকচক্র সে সুযোগ তাকে দেয়নি। সোনার বাংলা গড়তে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ছিল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। তিনি এই ঐক্য-সংহতি নিশ্চিত করার জন্যই দালাল আইন প্রত্যাহার করে ছিলেন। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি নির্মাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বলাই বাহুল্য, তার নেতৃত্বে ও মাধ্যমে আমরা স্বাধীন স্বদেশের অধিকারী হয়েছি বটে, তবে এখনো তার স্বপ্নের সোনার বাংলা, শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য-সংহতিও নিশ্চিত করতে পারিনি। বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতির মধ্যে নানা রকম বিভক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গঠনের জন্য হুমকিস্বরূপ। দুঃখজনক হলেও স্বীকার করতে হচ্ছে, তার দল এবং যে দলটির নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই আওয়ামী লীগ তার আদর্শ ও স্বপ্ন প্রত্যাশার বাস্তবায়ন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দর্শন ও কর্মকে নয়, তার নাম ব্যবহার করে এই দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা সহজেই লক্ষ্যযোগ্য। বঙ্গবন্ধুকে নিছক ছবির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে তার আদর্শ ও স্বপ্নের কথা বলা হচ্ছে। যারা তার নামে রাজনীতি করছেন তারা তার আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম সহজেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ত্যাগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন, তার অনুসারীরা ত্যাগের বদলে ভোগের রাজনীতিতে মত্ত হয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন বঞ্চিত, নিপীড়িত, অধিকারহারা ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। তার অনুসারীরা এখন ভিন্ন রাজনীতি করছেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য লাগাতার সংগ্রাম করে গেছেন। তার দল গণতন্ত্রকে একটি বৃত্তের মধ্যে বন্দি করে ফেলেছে। স্বাধীনতার পর যারা বঙ্গবন্ধুর চরম বিরোধিতা করে তাকে সুস্থির হতে দেননি, তারা অনেকেই এখন তার দলে যোগ দিয়ে তার জয়গান করছেন। তার আদর্শের সৈনিক ও ত্যাগী নেতাদের অনেকেই কোণঠাসা হয়ে আছেন বা বাইরে ছিটকে পড়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন-প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হলে একনিষ্ঠতার সঙ্গে সেই আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। দৃঢ়তার সঙ্গে সেই স্বপ্ন-প্রত্যাশা হৃদয়ে লালন করতে হবে এবং কর্মের মাধ্যমে তার বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। দেশের সামগ্রিক চিত্রে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিফলন নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, সমৃদ্ধ বাংলা, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বাংলা, পরমুখাপেক্ষিতামুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার দায়ভার তার দল ও অনুসারীদের ওপরই মূলত বর্তায়। বিগত প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতায় আছে তার দল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার অনুসারীরাই দেশ চালাচ্ছেন। তারপরও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন-প্রত্যাশ্যার বাস্তবায়ন নিয়ে এত নেতিবাচক কথা বলতে হবে কেন? আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন-প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ, সহনশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এই সঙ্গে জরুরি সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। আরো প্রয়োজন ব্যাপক অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নয়নমূলক কর্মকা-। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, তার মূলোৎপাটনও অত্যাবশ্যক। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক। জনপ্রত্যাশা পূরণে তিনি সফলকাম হবেন সকলে এই কামনাই করে। আমরা আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের, যারা সেদিন শহীদ হয়েছিলেন, আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন