মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী (রহ:)

মুহাম্মদ আবদুর রহীম ইসলামবাদী | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমির, বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরবিয়া ও হাইয়্যাতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়াম্যান বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন ও বৃহত্তম ইসলামী আরবী শিক্ষা প্রতিষ্টান দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী চট্টগ্রাম-এর মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস, শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সাহেব গত ১৮/০৯/২০২০ইং শুক্রবার সন্ধায় রাজধানী ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি- রাজিউন।
শনিবার বাদে যোহর হাটহাজারী মাদ্রাসা ময়দানে তার বিশাল নামাযে জানাযা অনুষ্টিত হয়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্টিত জানাযা নামাযে ইমামতি করেন হুজুরের সাহেবজাদা হযরত মওলানা মুহাম্মদ ইউচুফ সাহেব।
তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর। তিনি দু’ হাজার-এর কাছাকাছি খলীফা, লক্ষাধিক শাগরিদ ও কোটি কোটি ভক্ত ও মুরিদ রেখে গেছেন। ১৯৫৬ ইং সাল থেকে ২০২০ ইং পর্যন্ত তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, পীর-মুরিদী, ওয়াজ-বয়ান ও ইসলামী গ্রন্থ রচনার খেদমত আনজাম দিয়েছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ৩ মেয়ে ও বহু আত্নীয়স্বজন রেখে গেছেন।
আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী (রহঃ) চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া থানার/উপজেলা পাখিরার টিলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম মরহুম বরকত আলী ও মাতার নাম মেহেরুন্নেছা। তিনি দারুলউলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ১৩৬১ হিজরী সনে ভর্তি হন। ১০ বছর লেখাপড়া করে জমাতে উলা আরবী (মেশকাত-জালালাইন) পাশ করেন। অতপর ১৩৭১ হিজরী সনে ভারতের বিশ্ব বিখ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করেন। সেখানে ফুনুনাত, দাওরায়ে হাদীস ও দাওরায়ে তাফসীর ( ডবল টাইটেল) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন এবং কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। ১৯৫৬ ইং সনে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তিন করেন এবং হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ক্রমান্বয়ে প্রথম স্তর থেকে দাওরায়ে হাদীসের বুখারী শরীফ পর্যন্ত অধিকাংশ কিতাবের তিনি দরস প্রদান করেন।
দারুলউলুম দেওবন্দ থেকে ১৩৭৩ হিজরি সনে দাওরায়ে হাদীস পাশ করার পর তিনি দেওবন্দ এর আপন প্রধান উস্তাদ শায়খুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) এর হাতে মুরীদ হন। এবং সুলুকের মকাম অতিক্রম করে চিস্তিয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দীয়া ও সোহরাওয়ার্দিয়া তরীকায় খেলাফত লাভ করেন।
শিক্ষকতায় পাশাপাশি তিনি মানুষের ইসলাহ ও আত্নশুদ্বির কাজ করেন। হাজারো লাখো মানুষ তাঁর হাতে বয়আত গ্রহন করেন, তওবা করেন। কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপনে ওয়াদাবদ্ধ হন। দুই হাজারের কাছাকাছি আলেম তাঁর কাজ থেকে খেলাফত লাভ করেন। যারা দেশ বিদেশে তরীকতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান বিশ্বে মাআরেফতের চার তরীকা বিশেষত চিস্তিয়া তরীকার প্রচার প্রসারে আল্লামা শাহ্ আহম্মদ শফী সাহেবের (রহঃ) অবদান আবি স্বরনীয়। তাঁর নেতৃত্বে বহু খানেকাহ প্রতিষ্টিত হয়। হাজার হাজার পীর-মাশায়েখ আত্নশুদ্বির খেদমত আসজাম দিয়ে যাচ্ছেন আল্লামা শাহ্ আহম্মদ শফী সাহেবের দিক নির্দেশনা মোতাবেক ।
আল্লামা আহমদ শফী (রহঃ) দীর্ঘকাল বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক ইসলামী সম্মেলন সংস্থার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সংস্থার উদ্যেগে সারা দেশে বহু ইসলামী সম্মেলন অনুণ্ঠিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ শানে রেছালত (সাঃ) সম্মেলন কমিটি বাংলাদেশ এরও সভাপতি ছিলেন। এ সংস্থার উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী, সীরাত ও সুন্নাত বিষয়ে বহু সভা সমাবেশ ও ইসলামী সম্মেলন অনুস্থিত হয়।
আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের ( রহঃ) নেতেত্বে কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদ কে এম.এ ( আরবী ও ইসলামী শিক্ষা ) -এর মান দেয় গণপ্রজাতস্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আন্দোলনের কারণে ইসলাম রিরোধী চক্র ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল বিরোধী অপপ্রচার থেকে বিরত হতে বাধ্য হয়। সরকার আইন প্রণয়ন করেন তাদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে।
আল্লাহ শাহ্ আহমদ শফী সাহের ( রহঃ) ‘আল-ফয়জুল জারী’ নামক ছহী বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রস্থ লেখেছেন। যার দু’খন্ড প্রকাশিত হয়েছে। ‘আল খায়রুল কাছির ফি-উসুলুত তাফসীর’ নামে তফসীরুল কোরআন বিষয়ে ও তাঁর একটি গ্রস্থ প্রতাশিত হয়েছে। তাছাওউফ, তাবলীগ জামাত, সুন্নাত ও বিদাত, ইসলামী রাজনীতি প্রভূতি বিষয়েও তাঁর গ্রস্থ রয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ৩০ টি ছোট বড় গ্রস্থ-প্রস্তক প্রকাশিত রয়েছে।
সৌদি আরব, বূটেন, আরব আমিরাত সহ পৃথিবীর বহুদেশ তিনি সফর করেন। এবং ইসলামের প্রচার প্রসারে অবদান রাখেন। ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর সাথে বার বার তার সাক্ষাত হয়। তাদের কাছে তিনি ইসলামী দাবী দাওয়া তুলে ধরেন । ইসলামী দাবী দাওয়া বাস্তবানের লক্ষে তার আহবানে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্তরে স্মরণ কালে বৃহত্তম সমাবেশ অনুষ্টিত হয় ।
হাটহাজারী মাদ্রাসার উন্নয়নে তিনি ব্যাপক অবদান রাখেন। বিশাল জামে মসজিদ, শিক্ষা ভবন, প্রভূতি নিমাণ কাজ তার আমলে সম্পূর্ন হয় যা ইতিহাসে স্বরনীয় হয়ে রয়েছে। তার নেত্বতে হাটহাজারী মাদ্রাসার শত বার্ষিকী মহা ইসলামী সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। তিনি ছিলেন একমাত্র শাইখুল হাদিস যার কাছে হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রতি বছর ২৫০০ এর বেশি ছাত্র বুখারী শরিফ শিক্ষা লাভ করতেন।
বহু মাদ্রাসার বুখারী শরীফের সবক উদ্বোধন ও খতমে বুখারী শরীফের অনুষ্টানে তিনি দরস প্রদান করেন এবং হাদীসের ইজাযত প্রদান করেন। ৭০ বছরের কর্মজীবনে তিনি হাজারো মাহফিল ও দরসে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁর দরস ও বয়ানের কিছু সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। আরো বই কিতাব প্রকাশের পথে রয়েছে।
আমরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তালা তাকে জান্নাতে উ”” মর্য্যাদা দান করুন। আমিন।
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন