১১ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও নৌপথে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা চলছে। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকেরা। অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘটে সাগর-নদী এবং বিভিন্ন ঘাটে ছোট বড় জাহাজে আটকা পড়ে আছে ২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি পণ্য। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিল্প কারখানার মালিক ও ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকেরা। ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে কাঁচামাল সঙ্কটে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত এবং বাজারে ভোগ্যপণ্যের সঙ্কট সেইসাথে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অতিরিক্ত অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমান বিদেশি জাহাজগুলোকে দিনে ১০ থেকে ১২ হাজার ডলার ক্ষতি গুণতে হচ্ছে। বহির্নোঙ্গরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪০টির মতো বড় জাহাজ আট লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন আমদানি পণ্য নিয়ে ভাসছিল। সেখানে জাহাজজটের আশঙ্কাও প্রবল হয়ে উঠেছে। গত দুই দিনের ধর্মঘটে শত শত কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
১১ দফা দাবিতে সোমবার মধ্যরাতে ধর্মঘটে যায় বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। তখন থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে গম, সার, তেল, পাথর, ক্লিংকার ইত্যাদি খোলাপণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। খালাসের অপেক্ষায় ৮৭৪টি জাহাজে আটকে আছে ১১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট ক্লিংকার, কয়লা, অপরিশোধিত চিনি, সার, ভুট্টা, গম, ভোগ্যপণ্য ছাড়াও আছে সিরামিক, ইস্পাত ও তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল। সারা দেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন, লোড-আনলোডও বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের নিজস্ব লাইটার জাহাজেও ধর্মঘট চলছে। ফলে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আড়াই হাজারের বেশি লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাঙ্কার, বাল্ক হেড অপেক্ষমান চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরের আশপাশের নদীতে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরীর বলেন, একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন অলস বসে থাকা মানে ১০-১২ হাজার ডলার বাড়তি খরচ। বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় শুধু নয়, মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা উচিত।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, বহির্নোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও বন্দরের বিভিন্ন জেটি এবং ইয়ার্ডে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার এবং পণ্য পরিবহনও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে বহির্নোঙ্গরে জট পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে শিল্পের কাঁচামাল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত এবং বাজারে পণ্যের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। বন্দরে জাহাজের অবস্থানকাল বৃদ্ধির ফলে ডেমারেজ চার্জসহ পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যয় বাড়বে। এর নেতিবাচিক প্রভাব পড়বে ভোগ্যপণ্যের ওপর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন