লালমনিরহাটের ঘটনাটি বোঝার চেষ্টা করছি। সেখানে যে ঘটনা ঘটেছে তাকে কী বলা যায়? ধর্ম? কখনোই না। তাহলে কি ধর্মান্ধতা? একবাক্যে মেনে নেয়া কঠিন। কেননা, যারা গণপিটুনি দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা সবাই ধর্মান্ধ ছিলো না। এই গণপিটুনিতে অংশগ্রহণকারী সকলে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মুসল্লি, মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক ছিলো না। বেশিরভাগই ছিলো সাধারণ মানুষ। কাজেই ধর্মান্ধতা বলাও ঠিক হয় না। তাহলে কী?
অপ রাজনীতি বা পাবলিক মব রিঅ্যাকশন হতে পারে কি? বিবিসি এক রিপোর্টে দাবি করেছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত গণপিটুনিতে বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছরে শতাধিক মানুষ গণপিটুনিতে মারা যায়। সে হিসেবে মাসে গড়ে ৮-৯ জন মানুষ গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকারীদের সকলে নিশ্চয়ই ধর্মান্ধ নয়। টকশোতে বলা হয়েছে, গণপিটুনিতে হত্যা বাংলাদেশের স্বাভাবিক চিত্র হলেও পুড়িয়ে হত্যার নজির নেই। সেটাও সঠিক নয়, বাংলাদেশে সামাজিক অপরাধেও পুড়িয়ে হত্যার অনেক নজির রয়েছে। সে দৃষ্টান্ত দিয়ে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটানো ঠিক হবে না। রাজনৈতিক কারণেও বাংলাদেশে পুড়িয়ে মারার অনেক আলোচিত ঘটনা রয়েছে। ২০১৩-১৫ ‘জ্বালাও পোড়াও’ আন্দোলনের কথা সবারই স্মৃতিতে জ্বাজ্ল্যামান থাকার কথা। সরকারি হিসেবে এই আন্দোলনে নাকি ৫৫ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। শেরাটনের সামনে বাসে গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে মারার কথাও বেশি দিনের পুরাতন নয়।
এদেশের রাজনৈতিক শ্লোগানের শুরুই হয় ‘জ্বালো জ্বালো- আগুন জ্বালো’ দিয়ে। আগুন জ্বালানোর দীর্ঘ ইতিহাস আমাদের। সে আলোচনায় আজ না হয় নাইবা গেলাম। শুধু আগুন জ্বালানো হবে কেন- মাত্র ৬ বছর আগেও খোদ রাজধানীতে স্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শ্লোগান দেয়া হয়েছে, ‘একটা একটা শিবির ধর- ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘শিবির ধর- জবাই কর’- জাতীয় ভয়ঙ্কর শ্লোগান। এটা যে একমাত্র তারাই বলেছে বা প্রথম বলেছে তেমন নয়। প্রায় সব সংগঠনই তাদের সুবিধাজনক সময়ে এ শ্লোগান ব্যবহার করে থাকে। যদিও কোনো সভ্য সমাজ ও রাজনীতিতে এ জাতীয় ভয়ঙ্কর জিঘাংসা কল্পনা করা যায় না।
২৮ অক্টোবরের নারকীয় তান্ডবের কথাও কেউ ভুলে যায়নি। যেদিন গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের নামে প্রকাশ্য রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, নিহত লাশের উপর উঠে নর্তন, কুর্দন করা হয়েছে, তার নজির সভ্য সমাজে খুব বেশি পাওয়া যাবে কি? আলোচিত ছাত্রনেতা নুরুকে যেভাবে বারবার প্রকাশ্য দিবালোকে পেটানো হয়েছে তাও ভুলে যাবার কথা নয়। বিশ্বজিৎ ও খাদিজাকে অবশ্য পেটানো হয়নি, কোপানো হয়েছে। কিন্তু বিভৎসতা ভয়াবহ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শীর্ষ পর্যায় থেকে লগি-বৈঠা মার্চের নির্দেশ দিতে যেমন দেখেছি, প্রতিশোধ নিতে না পারলে হাতে চুরি পরা বা হাত ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিতেও দেখেছি। ঠিক তেমনি লগি-বৈঠার বিপরীতে কাস্তে-কোদাল আনার নির্দেশ দিতে বা রগ কাটার রাজনীতিও দেখেছি। আসলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও মানসিকতার মধ্যে জিঘাংসার সংস্কৃতি রয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে একজন কূটনীতিক এ দেশের মানুষের মানস গঠন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছিলো। বাঙালি ব্যক্তিগতভাবে ভীরু স্বভাবের কিন্তু সমষ্টিগতভাবে হিংস্র। সাধারণভাবে বাঙালিকে নিরীহ মনে হলেও আঘাত পেলে এরা মৌমাছির মতো আচরণ করে। মৌমাছি শান্ত, কিন্তু মৌচাকে ঢিল পড়লে তারা এমন হিংস্র হয়ে ওঠে যে, তখন আর কে দোষী কে নিদোর্ষ বিচার করে না। বাঙালির এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমরা বহুবার দেখেছি। পিলখানাতে বাঙালি সৈনিকেরা তাদেরই অফিসারদের উপর যে ভয়াবহ নারকীয়, পৈশাচিক অত্যাচার করেছিল তা ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর অত্যাচারকেও যেন হার মানিয়েছে। কাজেই বুড়িমারীতে যা ঘটেছে তার সাথে ধর্মের চেয়ে রাজনীতির গন্ধই বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
গত শুক্রবার সারাদেশে ফ্রান্সে নবীর সা. অবমাননার বিরুদ্ধে যেভাবে তৌহিদী জনতা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তা ছিলো নজিরবিহীন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় যে বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে তার সাথে শুধু শাপলা চত্বরের জমায়েতের কথাই তুলনা করা যেতে পারে। যে বিপুল পরিমাণ লোক রাজধানীতে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে, তাতে তাদের যদি ভিন্ন কোনো অভিসন্ধি থাকতো তাহলে তাদের তা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব ছিলো না। কেননা এই বিপুল সংখ্যক লোক সহিংস হলে আটকানোর ক্ষমতা কারো ছিলো না। কিন্তু এই লাখ লাখ মানুষ এতটুকু ঘৃণাদৃষ্টিও প্রদর্শন করেনি। শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশেই একই চিত্র এবং এটাই ইসলাম, ইসলামের সৌন্দর্য্য, ইসলামের শিক্ষা।
লালমনিরহাটের ঘটনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো নিহত আবু ইউনুস শহীদুন্নবীর সহযোগী সুলতান জোবায়েরও একই ঘটনায় গণপিটুনিতে আহত হন। তার কাছে অনেক প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। বিশেষ করে, নিহত শহীদুন্নবী রংপুর থেকে লালমনিরহাট কেন গিয়েছিলেন। ঘটনাস্থলে কেন গিয়েছিলেন? কে তাকে জানিয়েছিল যে, উক্ত মসজিদে অস্ত্র আছে এবং কুরআন শরীফের তাকে আছে? কে তাকে র্যাব পরিচয় দিতে বলেছিল? কেন তিনি থানায় না জানিয়ে অচেনা অজানা জায়গায় নিজে বিপদজনক দায়িত্ব হাতে নিলেন? অস্ত্র পাওয়া গেলে তিনি কী করতেন? নিহতের ভাইয়ের গণমাধ্যমে দেয়া স্টেটমেন্টে দেখা যায়, তিনি প্রকৃতিস্থ ছিলেন না। করোনার অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। সেটা বোধ হয়, বাংলাদেশ তো বটেই, বর্তমানের বিশ্বের জনগোষ্ঠির একটি বড় অংশের মধ্যেই পাওয়া যাবে। তাহলে এমন আচরণ কেন করতে গেলেন?
বাংলাদেশে বর্তমানে একইসাথে ইসলাম সংক্রান্ত অনেকগুলো ইস্যু ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে ফ্রান্সে মহানবী সা. এর কার্টুন নিয়ে বিতর্কের আলোচনাটি জোরালোভাবে সামনে এসেছে। প্রশ্ন হলো: ইসলামে মুক্তবুদ্ধির অবস্থান কোথায়? এই বিতর্কে যাবার আগে দেখে নিই মুক্তবুদ্ধি বলতে পাশ্চাত্য কী বোঝায়? সাধারণভাবে মুক্তবুদ্ধি বলতে কোনো প্রকার ভাগ্য, দৈব, ঐশ্বরিক বা স্বর্গীয় বিশ্বাস বা ধ্রুব বিশ্বাস মুক্ত হয়ে জ্ঞান চর্চা করা। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, একমাত্র নাস্তিক ছাড়া অন্য কারো পক্ষে কি মুক্তবুদ্ধি লালন ও চর্চা করা সম্ভব? নাস্তিকরাও কতোটুকু মুক্ত সে আলোচনায় পরে আসছি। প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্য বা সেকিউলারিস্টরা তাদের সুবিধা মতো কতকগুলো স্ট্যান্ডার্ড বা অবস্থান তৈরি করেছে বা করে যেগুলোকে তারা মুক্তবুদ্ধি বলে থাকে এবং তারা তাদের সেই স্ট্যান্ডার্ড বা অবস্থান অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। তাই তারা তাদের ধর্ম নিয়ে যা করে ইসলাম নিয়েও তা করতে চায়। কিন্তু ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
পৃথিবীতে ইসলাম ব্যতীত আর যতো ধর্ম আছে সব ধর্মেরই একাধিক কিতাব বা একই কিতাবের একাধিক ভার্সন রয়েছে। কিন্তু ইসলামের কিতাব একটিই- আল কুরআন। বর্তমান রূপে যে কুরআন রয়েছে, পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত কুরআন একই রূপে থাকবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে কারো পক্ষে এর একটি শব্দও সংযোজন বা বিয়োজন করা সম্ভব নয়। এর অনুবাদের বা ব্যাখ্যায় তারতম্য হলেও আরবী কুরআন অপরিবর্তনীয়। একইভাবে মহানবী সা. এর সহীহ হাদীসও অপরিবর্তনীয়। তাঁর জীবনীও অপরিবর্তনীয়। কোনো লেখক তাকে মহিমান্বিত করার জন্যও তাঁর জীবনীতে কোনো পরিবর্তন বা রঙ লাগানো, কল্পনা শক্তির প্রয়োগ করতে পারবে না। তাইতো পাশ্চাত্যে এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোতে তাদের দেবদেবী বা অবতারদের নিয়ে নানা কার্টুন, কোলাজ, ব্যঙ্গ, হাসি, কৌতূক ও তামাশা করতে দেখা যায়। কিন্তু ইসলামে এমনটি সম্ভব নয়। এমনকি একেক টিভি চ্যানেলে একই দেবতার জীবনকাহিনীতেও ভিন্নতা দেখা যায়। লেখক বা পরিচালকের স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে দেখা যায়। কিন্তু ইসলামের নবী সা. কে নিয়ে এটা একেবারেই অসম্ভব। সে কারণে ১৪শ’ বছর ধরে মহানবী সা. এর জীবনভিত্তিক চলচ্চিত্রের সংখ্যা মাত্র একটি- দ্য মেসেজ। এরপর ইরান একটি চেষ্টা করলেও প্রথম পর্বেই বিতর্ক দেখা দেয়ায় আর এগুতে পারেনি। অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক বিষয় আল্লাহ, নবী সা., কুরআন, হাদীস ও সুন্নাহ অপরিবর্তনীয়, অলংঘনীয়। মুসলমানদের মধ্যে সুন্নী, শিয়া, নানা বিভেদ থাকলেও এখানে কোনো বিভেদ নেই। এখানে কোনো ধরনের পরিবর্তনের অধিকার কোনো অমুসলিম তো দূরের কথা, কোনো মুসলমানের বা কাউকেই দেয়া হয়নি। শুধু মহানবী সা. নয়, আদম আ. থেকে শেষ নবী সা. পর্যন্ত নবুয়তের সিলসিলায় যতো নবী আ. এসেছেন তাদের সকলের প্রতি ঈমান রাখা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন ইসলামের নির্দেশ। তাঁদের প্রতি কুরআন নির্দেশিত বক্তব্যের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কোনো মুসলমানের নেই। ইসলামের এই মৌলিক স্তম্ভে পরিবর্তনের চেষ্টা শুরু থেকে বহুবার হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হয়তো হবে। অতীতে সব সময়ই মুসলমানেরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে সেসব অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে। কেননা, ব্যক্তিগত জান, মাল ও সম্পর্কের চেয়ে আল্লাহ, নবী সা. ও কুরআনের প্রতি ভালবাসা ও গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে অনেক বেশি এবং এটাই ইসলামের নির্দেশ। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘সেই মহান আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তর হতে পেরেছি।’ সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৪-১৫, সহীহ মুসলিম ১৭৮। কাজেই, নাস্তিক ফরাসি প্রেসিডেন্টের মানসিকতা দিয়ে ইসলামকে বিচার করলে কখনোই ইসলাম বোঝা সম্ভব নয়। সে কারণেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ যখন ফরাসি স্ট্যান্ডার্ডের ইসলাম তৈরির ঘোষণা দেন, তখন তা আসলে ইসলামের বিরুদ্ধেই চলে যায়।
পাশ্চাত্য বা সেকিউলারিস্টরা যতোই মুক্তবুদ্ধি চর্চার কথা বলুক, যতোই তাদের ধর্মীয় দেবতা, অবতারদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা করুক এই একই কাজ কোনো মুসলমান করলে তারা গ্রহণ করতে পারবে না। যেমন, বিজেপি আমলেও ভারত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গো হত্যা করে গরুর গোস্ত রফতানি করে। কিন্তু কোনো মুসলমানের হাতে গরুর গোস্ত দেখলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের সামনে যদি তাদের পিতা-মাতাকে অসম্মান করা হয়, তাদের ন্যুড ছবি প্রদর্শন করা হয়, তাদের ছবি বিকৃত করে আপত্তিকর কার্টুন করা হয় তারা গ্রহণ করতে পারবে? যদি কোনো মুক্তবুদ্ধির মানুষকে বলা হয়, আসুন, আপনার বাবা আপনার আসল বাবা কিনা তা নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক করি- যতোই মুক্তবুদ্ধির ধারকবাহক হোক এই বিতর্কের প্রস্তাবে তাদের রক্ত ও মেজাজ গরম হয়ে যাবে। কিন্তু তারা বুঝে না, প্রতিটি মুসলমানের কাছে, আল্লাহতায়লা, নবী সা., কুরআন, হাদীস পিতা-মাতার থেকেও বহুগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ ব্যাপারে যেকোনো ধরনের অসম্মান যিনি বা যেই করুক তা মুসলমানের হৃদয়ে সর্বাধিক আঘাত করে। তাইতো আমাদের জাতীয় কবি বলেছেন, ‘রসুলের সা. অপমানে যদি কাঁদে না তোর মন, মুসলিম নয়, মুনাফিক তুই, রসুলের দুশমন।’
একটা বিষয় মোটেই উড়িয়ে দিলে চলবে না, বিশেষ করে ঘটনার ক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছে যখন সারা বাংলাদেশের রসুল সা. প্রেমি মানুষ তার অবমাননার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ঘটনাটি মিলাদুন্নবীর আগের দিন ঘটেছে। ফলে এ সন্দেহ জাগা অস্বাভাবিক নয় যে, নিহত শহীদুন্নবী কাউন্টার ইন্টিলিজেন্সের স্টিং অপারেশনের শিকার হলো কিনা। স্টিং অপারেশন এক ধরনের আন্ডারকভার অপারেশন নামেও পরিচিত। মূলত ‘ছদ্মবেশী’ বা ‘ফাঁদ পাতা’র মতো প্রতারণামূলক একটি কৌশল, যার মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে অপরাধ করতে সহযোগিতা দিয়ে অপকর্মের ঠিক আগ মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধরে ফেলা হয়। স্টিং শব্দটি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে ১৯৭৩ সালের রবার্ট রেডফোর্ড ও পল নিউম্যানের দ্য স্টিং সিনেমা থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণে এই স্টিং অপারেশন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে থাকে। এর মাধ্যমে সম্ভাব্য জঙ্গীবাদীদের ফাঁদ পেতে শিকার করা হয়।
২০১২ সালে আমিনি আল খালিফি নামে মরক্কোর এক নাগরিককে ওয়াশিংটন ডিসিতে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৯ বছর বয়সী মুসলমান যুবককে এফবিআই নকল আত্মঘাতী বিস্ফোরকসহ জামা (সুইসাইড ভেল্ট) ও অকেজো আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছিল। পরিকল্পনা ছিল, ওই জামা পরে খালিফি নির্বিচারে গুলি চালিয়ে লোকজনকে হত্যা করবে। ২০০৯ সালে নিউইয়র্কের রিভারডেল এলাকায় দুটি সিনাগগ (ইহুদি উপাসনালয়) বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করার দায়ে চারজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমান যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের হামলার পরিকল্পনায় সহযোগিতা করা, অর্থ ও নকল বিস্ফোরক জোগান দিয়েছিল এফবিআই।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে হামলার চেষ্টাকারী বাংলাদেশি রেজওয়ানুল আহসান নাফিসের কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। যাত্রাবাড়ি থেকে লেখাপড়ার জন্য নিউইয়র্কে যাওয়া নাফিস প্রেমে ব্যর্থ হয়ে যখন আত্মহত্যার চিন্তা করছিলেন, তখনই তিনি মার্কিন স্টিং অপারেটরদের খপ্পরে পড়েন। তাকে বলা হয়, এভাবে আত্মহত্যার চেয়ে মার্কিনীদের বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিরোধী অপকর্মের প্রতিবাদে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে আত্মহত্যা করতে বা শহীদ হতে। এফবিআই গোয়েন্দারাই তাকে রিজার্ভ ব্যাংকে হামলার জন্য নকল বিষ্ফোরক দিয়েছিল। তাদেরকে বিশ্বাস করে নাফিস সেই বিষ্ফোরক ভর্তি ভ্যান নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সামনে গেলে এফবিআই তাকে আটক করে। সে কারণেই তার বিচার প্রক্রিয়ার আদালতে উচ্চারিত হয়েছিল, দ্যা কান্ট্রি মেড হিম অ্যা টেরোরিস্ট।
বাংলাদেশে এখন নানা ধরনের ইসলাম বিরোধী শক্তি সক্রিয় রয়েছে। নিহত আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী তাদের কোনো স্টিং অপারেশনের শিকার কিনা সেটাও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন